শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানসূচক ডি-লিট
  2018-05-27 19:06:27  cri
২৫ ও ২৬ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতন ও বর্ধমানের আসানসোল সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পশ্চিমবঙ্গে তাঁর এ দুটি স্থান সফরের সঙ্গে জড়িত ছিল দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনে নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশ ভবন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সঙ্গে নিয়ে এর উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। আর বর্ধমানের আসনসোলে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে দিয়েছে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি। দুটি বিষয় বাংলাদেশের জন্য সম্মান এবং গৌরবের।

শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশের অর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করতে ২৫ মে সেখানে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ বিঘা জায়গা জুড়ে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ ভবন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বভারতীর আচার্য নরেন্দ্র মোদিকে নিয় নবনির্মিত ভবনে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি ও ছিটমহল বিনিময়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হয়েছে বলে এ সময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে প্রতিবেশি ভারতে সঙ্গে সুসম্পর্ককে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় বলে জানান তিনি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে ভারতের প্রতি এ সময় আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্য একটি অনন্য নজীর। ২০৪১ সালের মধ্য একটি উন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের পরিকল্পনায় ভারতের পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে বলে আশ্বাস দেন মোদি। এর আগে শান্তিনিকেতনে আম্রকুঞ্জে বিশ্বভারতীর ৪৯তম সমাবর্তনে গেস্ট অব অনার হিসেবে যোগ দেন শেখ হাসিনা।

একই দিন শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম। রোহিঙ্গা ইস্যু এবং তিস্তার মতো ইস্যু নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রী একান্তে কথা বলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর একই দিন কলকাতায় জোড়াসাঁকোয় ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি ঠাকুরবাড়ি জাদুঘরে বাংলাদেশ গ্যালারি করার উদ্যোগ নেবেন বলে জানান। এ সময় ছোটবোন শেখ রেহানা ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ছাড়াও তার সঙ্গে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ফিরাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু ও রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী।

২৬ মে বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপিত হয় পশ্চিমবঙ্গে। ওই দিন বর্ধমানের আসানসোলে অবস্থিত কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ সমাবর্তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি দেয়। সমাজ সংস্কারের স্বীকৃতি হিসেবে শেখ হাসিনার হাতে ডি-লিটের সনদ তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাধন চক্রবর্তী।

বাংলাদেশের জাতীয় কবির নামে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট পাওয়াকে অত্যন্ত সম্মানজনক হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। এ সম্মানকে তিনি সকল বাঙালির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। কবি নজরুলের কালজয়ী প্রতিভার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নজরুলের চেতনা যুগযুগ ধরে উৎসাহ যোগাবে মানব কল্যাণে কাজ করতে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে নজরুল প্রেরণা যুগিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলনে আমাদের সবকিছু ভাগ হলেও নজরুল-রবীন্দ্রনাথ ভাগ হননি। তারা আমাদের একসূত্রে গেঁথে রেখেছেন।

সমাবর্তনে অংশ নেয়া স্নাতকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে সারাজীবন মানবিকতার জন্য কাজ করতে হবে। মানবিক কারণেই বাংলাদেশ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

একই দিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় কলকাতায় হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রায় একঘন্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দু'নেতা ইন্দো-বাংলা সম্পর্ক ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে কথা বলেন। আলোচনা হয়েছে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে। তবে তিস্তা ইস্যুতে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না কোনো পক্ষ থেকেই কিছু বলা হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর এ সফর থেকে অনেকেই তিস্তা ইস্যুতে একটা অগ্রগতি আশা করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এ সফর কোনো রাজনৈতিক সফর ছিল না। তাই সঙ্গতকারণেই তিস্তা ইস্যু নিয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবার কথা নয়। তবে, প্রধানমন্ত্রীর এ সফর পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এতে কোনো সংশয়ের অবকাশ নেই।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040