অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের চীন সফর
  2018-07-14 14:40:35  cri

সম্প্রতি জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল চীন সফর করেছেন। এ সফরে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং, চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান লি চান শু'র সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া, তাঁর সঙ্গে ২০ জন বড় শিল্পপতি চীন সফর করেছেন। এটি এঙ্গেলা মার্কেলের ১১তম চীন সফর। সফরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু এবং আর্থ-বাণিজ্যিক খাতে দুই দেশের সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা এ বিষয়ে আলোকপাত করব।

বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বেইজিং সফররত জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল বৈঠক করেন। বৈঠকে মার্কেলকে চীনে স্বাগত জানান সি চিন পিং এবং দু'দেশের সম্পর্কে মার্কেলের গুরুত্বারোপের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে চীন-জার্মানি সার্বিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের লক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। সহযোগিতার আওতা ও গভীরতা অনেক বেড়েছে। জার্মানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করতে চায় চীন। সি বলেন, চীন ও জার্মানির মধ্যে উইন-উইন সহযোগিতার একটি উদাহরণ স্থাপন করা উচিত। দুই দেশের উচিত চীন-ইউরোপ সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়া, নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং মতাদর্শগত পার্থক্য কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, উভয় পক্ষের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বিনিময় অব্যাহত থাকবে, প্রশাসনের সব পর্যায়ে বিনিময় উৎসাহিত করা হবে এবং সংলাপের সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করা হবে। বাজার সম্প্রসারণের জন্য দুই দেশকে যৌথ সহযোগিতা করা উচিত এবং থার্ড-পার্টি মার্কেট উন্নত করা উচিত। সর্বোপরি ব্যক্তি পর্যায়ে বিনিময় বাড়ানোর প্রতি জোড় দেন প্রেসিডেন্ট সি। চীন বিশ্ব প্রশাসনের উন্নয়নের জন্য জার্মানির সাথে কাজ করতে চায়। সি বলেন, দুই দেশের উচিত বৈশ্বিক উত্তপ্ত ইস্যুতে সমন্বয় বাড়ানো। সি চীনের 'বেল্ট এবং রোড ইনিশিয়েটিভ' বা 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে জার্মানির সমর্থনের প্রশংসা করেন এবং জার্মান প্রতিষ্ঠানগুলোকে এতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

জবাবে মার্কেল চীন-জার্মানি সম্পর্ক নিয়ে প্রেসিডেন্ট সি'র দিকনির্দেশনা ও বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। চীন আন্তর্জাতিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং জার্মানির গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার উল্লেখ করে তিনি বলেন, দু'দেশের সম্পর্ক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। জার্মানি চীনের গভীর সংস্কারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে চীন-জার্মানি সহযোগিতা জোরদার করতে চায়।

এদিকে, বৃহস্পতিবার চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন জার্মান চ্যান্সেলর। বৈঠকে লি বলেন, তাঁর দেশ বিদেশিদের জন্য আরও উন্মুক্ত হবে। আশা করা যায় যে, জার্মান শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও এই সুযোগ কাজে লাগাবে। এদিন বেইজিংয়ের গণমহাভবনে ফোরাম অব দা চায়না-জার্মান ইকনোমিক অ্যাডভাইজরি কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময়সভার আয়োজন করা হয়। লি খ্য ছিয়াং বলেন, চীন ও জামার্নি হচ্ছে যথাক্রমে এশিয়া ও ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি। বিশ্বের আইনভিত্তিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য-ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব দুই দেশের ওপরও বর্তায়। দুই দেশকে সব ধরনের একতরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, উন্মুক্তকরণ হওয়া উচিত দ্বিমুখী। আশা করা যায়, জার্মান সরকার সে-দেশে চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও আরও অনুকূল ও ন্যায্য ব্যবসা-পরিবেশ সৃষ্টি করবে। বৈঠকশেষে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে দু'নেতা।

জার্মানির ব্যবসায়িক নেতা ও আইনপ্রণেতারা দীর্ঘদিন ধরে চীনে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার কথা বলে আসছিলেন। এ সফরে সেসব বিষয়েও কথা বলেছেন মার্কেল। তিনি যাত্রীবাহী গাড়ি আমদানির উপর শুল্ক কমানোর জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান। মঙ্গলবার এক সিদ্ধান্তে এ ধরনের গাড়ির উপর ধার্য থাকা শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেয় চীন।

চীনা প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে চীনে জার্মানির স্বয়ংক্রিয় গাড়ি সংক্রান্ত বিনিয়োগকে স্বাগত জানান। বিনিয়োগকালীন সময়ে জার্মান কোম্পানিগুলো কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে চীনা আইন অনুযায়ী তাদের নিরাপত্তা দেয়া হবে বলেও জানান লি খ্য ছিয়াং।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040