আলোচ্য সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে চীন, শ্রীলংকা ও মিয়ানমার। সভায় ২০৩০ সালের মধ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্রের যৌথ প্রচেষ্টায় বিশ্বকে ম্যালেরিয়ামুক্ত করা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় ছুই লি বলেন, "বিশ্বকে ম্যালেরিয়ামুক্ত করার জাতিসংঘ-প্রস্তাব অনুসারে, চীন ২০১০ সালে 'ম্যালেরিয়ামুক্ত চীন পরিকল্পনা, ২০১০-২০২০' প্রণয়ন করে। পরিকল্পনায় ২০২০ সালের মধ্যে গোটা চীন থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূল করার কথা বলা হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ২০১৭ সালে চীনে নতুন করে কেউ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়নি।"
ম্যালেরিয়া নির্মূলের ক্ষেত্রে চীনের অর্জিত অভিজ্ঞতা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কাজে লাগাচ্ছে এবং তা অন্যান্য দেশে প্রচার করা হচ্ছে। এ-সম্পর্কে ছুই লি বলেন, "চীনে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। আর এই পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে ম্যালেরিয়ার উত্স নির্মূল করা। বিশ্বে এই কৌশল স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা '১-৩-৭ কৌশল' বাস্তবায়ন করেছি। এর অর্থ হচ্ছে: এক দিনের মধ্যে ম্যালেরিয়া চিহ্নিত করা, তিন দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত পর্যালোচনা ও তদন্ত সম্পন্ন করা এবং ৭ দিনের মধ্যে ম্যালেরিয়ার উত্স ধ্বংস করা।"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে গোটা বিশ্বে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ২০১৫ সালের চেয়ে ৫০০ জন বেশি ছিল। এতে প্রমাণিত হয় যে, ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানবজাতি সার্বিকভাবে অগ্রগতি অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক রেন মিং হুই সভায় বিভিন্ন দেশকে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার ও এ-খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ২০২০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়াসংশ্লিষ্ট রোগে মৃত্যুহার ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।
তিনি বলেন, "আমরা অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছি। কিন্তু ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও নির্মূলের চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে রয়েই গেছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র অর্ধেক আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি। কোনো কোনো দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখনও বাড়ছে। গোটা বিশ্বে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চাইলে এই খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা উচিত।"
সভায় ছুই লি বলেন, চীন আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে যৌথভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও নির্মূলের কাজে সহায়তা দিয়ে যাবে এবং গোটা বিশ্বকে ম্যালেরিয়ামুক্ত করতে অবদান রাখবে।
তিনি আরও বলেন, "বিশ্বকে ম্যালেরিয়ামুক্ত করা সহজ কাজ নয়। আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত একসঙ্গে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। বহু বছর ধরে চীন সরকার এ-ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করে আসছে। পাশাপাশি, চীন আলাদাভাবেও কয়েকটি আফ্রিকান ও এশীয় দেশের সঙ্গে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও নির্মূলের কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।"
উল্লেখ্য, সভায় চীন, মিয়ানমার, লাওস, ক্যাম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে বৃহত্তর মেকং নদী উপ-অঞ্চলকে ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়ামুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। (ছাই/আলিম)