ঢাকায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠক: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
  2018-05-20 20:14:15  cri
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন ও চুক্তি স্বাক্ষরের পরও দৃশ্যত এ ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম দফায় মিয়ানমারকে ৮ হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা দেয়। যাচাই বাছাই করে সেখান থেকে মাত্র এক হাজার ১০১ জনকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। তাদের নেয়ার বিষয়েও এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি দেশটি। খোদা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারের তরফে কার্যকর উদ্যোগের অভাবে হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

এমনি এক অবস্থায় ১৭ মে ঢাকায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ইউ মিন্ট থো। বাংলাদেশ প্রতিনিধ দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব সংবাদ সম্মেলনে জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠকটি ফলপ্রসু হয়েছে। উভয়পক্ষ দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করার বিষয়ে একমত হয়েছে বলে জানান তিনি। রোহিঙ্গাদের যে তালিকা বাংলাদেশ তরফে দেয়া হয়েছি সেটি দ্রুত যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানান পররাষ্ট্রসচিব। তবে ঠিক কবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক।

মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের প্রধান মিন্ট থো'ও বলেন তাদের বৈঠকটি ফলপ্রসু হয়েছে। জানান মিয়ানমারের বাসিন্দাদের ফিরিয়ে নিতে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের দেয়া প্রথম তালিকা থেকে ৭৭৮ জন মুসলিম ও ৪৪৪ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে ফিরিয়ে নিতে রাজি তারা। কবে থেকে প্রত্যাবাসন শুরু সে বিষয়ে কিছু না বললেও এ জন্য তার দেশ প্রস্তুত বলেও জানান তিনি। রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার বিষয়ে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করার কথাও বলেন মিয়ানমারের এই কর্মকর্তা।

গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি মিয়ানমারে গ্রুপের প্রথম বৈঠকটি হয়। চার মাস পর ঢাকায় দ্বিতীয় বৈঠকটি হল। দুপক্ষই বৈঠককে ফলপ্রসু বললেও আদপেই কী ফল পাওয়া গেছে তা পরিষ্কার নয়।

এদিকে, দিনকে দিন রোহিঙ্গা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করছে। এখনো কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে মাঝে মাঝে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। ঢাকায় মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের বৈঠকের দুদিন না যেতেই ১৯ মে বান্দরবানের তমব্রু সীমান্তে মাইকিং করে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে সরে যেতে বলে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী। দৃশ্যত জিরো পয়েন্ট থেকে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিতে চাইছে মিয়ানমার বাহিনী। এ নিয়ে সীমান্তে আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সমস্যা রয়েছে আরো। শুধু ১১ লাখ শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে এবং মাঝে মাঝে আসছে তা নয়, প্রতিদিন রোহিঙ্গা শিবিরে জন্ম নিচ্ছে ৬০টি শিশু। এ হিসেবে এ যাবৎ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৬ হাজারের বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে। আরো ১৮ হাজার ৩০০ জন অন্তঃসত্তা নারীকে সনাক্ত করা হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এ সব শিশু ও মায়েদের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাও এক বড় চ্যালেঞ্জ।

এমনই এক অবস্থায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক আইনের পুরোপুরি প্রয়োগের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে জাতিসংঘের কোনো সদস্য রাষ্ট্র যাতে পার না পায় সে দিকে নজর দিতেও আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন ১৮ মে নিরাপত্তা পরিষদে এক বিতর্কে এ আহ্বান জানান।

আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখা শীর্ষক এ বির্তকে অংশ নেন নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য দেশসহ ৭৫টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতরা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করে নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিনধি দল রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয়ের যে চিত্র দেখে এসেছেন তার উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এই সংকট সমাধানে যথাযথভাবে আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ করতে হবে। নিরাপত্তা পরিষদের কাছে রোহিঙ্গারা যে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেছে- পরিষদ তা বিবেচনায় রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040