পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধ, চুক্তি প্রত্যাহার ও আগামীর বিশ্ব নিরাপত্তা
  2018-05-19 16:44:16  cri

পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে প্রচুর কল্যাণ রয়েছে। ঠিক বিপরীতভাবে এর অপব্যবহার মানবজাতির ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। বিশ্বের ক্ষমতাসীন দেশগুলো পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা ঠেকাতে যুগে যুগে বিভিন্ন ধরনের চুক্তি করেছে, আবার বিভিন্ন সময় সেসব চুক্তি অগ্রাহ্যও করেছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ছয় জাতির পরমাণু চুক্তি থেকে সরে এসেছেন। এতে করে আগামীর বিশ্বে কী পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে? সে সম্পর্কেই শুনবেন আজকের সংবাদ পর্যালোচনা।

পরমাণু শক্তিকে বহু দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করলেও পরমাণু অস্ত্র আছে কয়েকটি দেশের কাছে। এই গণবিধ্বংসী অস্ত্র প্রথম তৈরি ও ব্যবহার করে আমেরিকা। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহর এর ভয়াবহতার প্রমাণ। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম এই অস্ত্রের অধিকারী হয় ১৯৪৯ সালে।

আর্মি-টেকনোলজি ডটকমের তথ্যমতে, ১৯৮৬ সাল নাগাদ মস্কো প্রায় ৪৫ হাজার পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হয়। আর আমেরিকার পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা ১৯৬৭ সালেই ছিল ৩১ হাজারের বেশি। এরপর সোভিয়েত–উত্তর যুগে বিভিন্ন সমঝোতা ও চুক্তির মধ্য দিয়ে দুই দেশই তাদের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা কমিয়ে এনেছে। বর্তমানে রাশিয়ার হাতে স্বল্প, মাঝারি ও দূরপাল্লার মিলিয়ে রয়েছে সাড়ে আট হাজার পরমাণু অস্ত্র। বিপরীতে আমেরিকার হাতে রয়েছে ৭ হাজার ৭০০টি পরমাণু অস্ত্র। সারা বিশ্বের মোট পরমাণু অস্ত্রের মধ্যে ৯৫ শতাংশই এই দুই দেশের।

পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার ঠেকাতে নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটির (এনপিটি) মতো আন্তর্জাতিক চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। যেখানে দুই দেশই অনুস্বাক্ষর করেছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে আরও তিন দেশ। এ ছাড়াও আছে স্ট্র্যাটেজিক আর্মস লিমিটেশন টকস (সল্ট-১) শীর্ষক ওই চুক্তি বিশ্বকে আশ্বস্ত করেছিল। পরে আরও কয়েকটি চুক্তি হয় দুই দেশের মধ্যে। এর মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক আর্মস রিডাকশন ট্রিটি (স্টার্ট), ইন্টারমেডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) ও নিউ স্টার্ট চুক্তি। এসব চুক্তি পরমাণু অস্ত্র সংঘাত ঠেকিয়ে রেখেছে।

পরমাণু অস্ত্র সম্প্রসারণ রোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিটি হলো এনপিটি। এ চুক্তির আওতায় রয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও চীন। কিন্তু পরমাণু অস্ত্রধারী আরও চার দেশ ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল ও উত্তর কোরিয়া। এর মধ্যে উত্তর কোরিয়া পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে এখনো স্বীকৃত নয়। যদিও দেশটি পরমাণু অস্ত্রের দাবিদার হয়েছে বেশ জোরেশোরেই। আগামী মাসে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে পরমাণু কর্মসূচি থেকে উত্তর কোরিয়াকে সরিয়ে আনতে আশাবাদী বিভিন্ন মহল।

রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে সর্বশেষ ২০১১ সালে সই হয় নিউ স্টার্ট চুক্তিটি। ২০২১ সালে তা আবার নবায়ন করার কথা। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের শুরুর দিকে ফোনালাপের সময় পুতিন চুক্তিটি নবায়নের বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাইলে, তিনি এ সম্পর্কে তাঁর পরামর্শকদের প্রশ্ন করেন। ফিরে এসে তিনি পুতিনকে বলেন, এটি তাঁর পূর্বসূরির করা আরেকটি জঘন্য চুক্তি।

এদিকে ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ছয় জাতির চুক্তি থেকেও সরে এসেছেন ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে তিনি ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ অন্য দেশগুলোর স্বার্থের বিপরীতে কাজ করেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাকখোঁ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। ট্রাম্প এর আগে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে এসেছেন। এখন ইরানের চুক্তি থেকে সরে গেলেন। যদিও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ স্পষ্ট ভাষায় জানায় যে, ইরানের সবগুলো পরমাণু প্রকল্পের কার্যক্রম তাদের নজরদারিতে আছে এবং ইরান চুক্তির বিপরীতে কোনো কাজ করেনি। কিন্তু এসব কথায় কোনো কান দেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের সম্ভাবনা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। পরমাণু খাতে বিশ্বে ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে পরাশক্তি ও পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে একধরণের সমঝোতা বজায় থাকা উচিত। এসব দেশের উচিত আণবিক শক্তি সংস্থার পর্যবেক্ষণ ফলাফল মেনে নেওয়া। শুধুমাত্র রাজনৈতিক আক্রোশ থেকে গৃহীত সিদ্ধান্ত গোটা বিশ্বের মানবসভ্যতার জন্য বিরাট ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

(গণমাধ্যমের তথ্য অবলম্বনে মোহাম্মদ তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040