'এক অঞ্চল, এক পথ' আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষসম্মেলন বেইজিংয়ে সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে প্রায় এক বছর হলো। গত এক বছরে, 'এক অঞ্চল, এক পথ' নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ও প্রধান দেশগুলোর কৌশলগত যোগাযোগ আরো গভীর হয়েছে, বাস্তবায়িত হয়েছে বিপুল সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। নতুন পর্যায়ে নতুন এক দফার বিশ্বমুখী উন্মুক্ততা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে চীন কি কোনো নতুন অন্তঃসার যোগ দিয়েছে? চীন ও বিশ্বের কল্যাণের জন্য 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ কী ভূমিকা পালন করবে? বিস্তারিত শুনবেন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
(প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং)
"'এক অঞ্চল, এ পথ' চীনের উত্থাপিত উদ্যোগ, কিন্তু উদ্যোগটি বিশ্বের সম্পদ। 'এক অঞ্চল, এক পথ'-এর আওতায় ইউরেশীয় মহাদেশ প্রধান অংশীদার হিসেবে বিশ্বের সব বন্ধুদের কাছে উন্মুক্ত হয়।"
২০১৭ সালের মে মাসে বেইজিংয়ে প্রথম 'এক অঞ্চল, এক পথ' আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিশ্বকে 'এক অঞ্চল, এক পথ'-র যৌথ নির্মাণ ও অভিন্ন উন্নয়ন বাস্তবায়নের আমন্ত্রণ জানান। ফোরামে ৩০টি দেশের নেতারা এবং বিভিন্ন দেশের ১হাজার ৫'শও বেশি প্রতিনিধি 'এক অঞ্চল, এক পথ'-এর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যৌথভাবে মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্যে পৌঁছান।
গত এক বছরে ৮০টিরও বেশি দেশ ও সংস্থা চীনের সঙ্গে 'এক অঞ্চল, এক পথ' সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এশিয়া অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি)-র সদস্যসংখ্যা ৮৬টিতে পরিণত হয়েছে। 'এক অঞ্চল, এক পথ' বরাবর দেশগুলোতে চীনের সরাসরি বিনিয়োগ মূল্য ৭০বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ উদ্যোগ ২ লাখেরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে চীন-থাই রেলপথ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের খলিফা বন্দর, চীন-রাশিয়া ইয়ামাল উপদ্বীপ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্পসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা প্রকল্প স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চীনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক গবেষণালয়ের স্থায়ী উপ-পরিচালক রুওয়ান চুং জে মনে করেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ ইচ্ছা থেকে কার্যকর বাস্তবায়নের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে, চীনের প্রস্তাব থেকে আন্তর্জাতিক মতৈক্যে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন,
"আমার মতে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ সুষ্ঠুভাবে চলছে। বিশেষ করে গত বছরের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষ ফোরামের পর উদ্যোগটি একটি চীনা প্রস্তাব থেকে একটি আন্তর্জাতিক মতৈক্যে পরিণত হয়েছে। ৮০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চল চীনের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।"
আন্তর্জাতিক সমাজ 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগকে দিন দিন স্বীকৃতি দিচ্ছে। বিভিন্ন দেশ নিজ দেশের উন্নয়ন কৌশল চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমন্বয় ও সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, "আমরা বিশ্বাস করি ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন, 'এক অঞ্চল, এক পথ', শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার কার্যকর পরিকল্পনায় ইউরেশীয় একীকরণের উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমি বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সার্বিক অংশীদারিত্ব সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা করছি।"
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরিসা মে বলেন, ''এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ এশিয়া, এমনকি বিশ্বের জন্য সুযোগ বয়ে আনায় আমরা একে স্বাগত জানাই। এই উদ্যোগ এশিয়ার সমৃদ্ধি ও বিশ্বের টেকসই উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কল্যাণকর হবে। ব্রিটেন হলো এআইআইবি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদেশের একটি। ব্রিটেনও 'এক অঞ্চল, এক পথ'-এর সহযোগিতামূলক অংশীদার।"
'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন,
"'এক অঞ্চল, এক পথ' চীনের উত্থাপিত উদ্যোগ, কিন্তু উদ্যোগটির ফলাফল ও সুযোগ বিশ্বের সম্পদ। এ উদ্যোগ একটি নতুন উদ্যোগ, সহযোগিতার প্রক্রিয়ায় মতভেদ থাকা একটি সাধারণ প্রপঞ্চ। আশা করি অভিন্ন আলোচনা, অভিন্ন নির্মাণ ও অভিন্ন ভাগাভাগির নীতি মেনে নিয়ে অবশ্যই সবাই সহযোগিতা করবে, মতভেদ মোকাবিলা করবে। যাতে উদ্যোগটি একটি সবচেয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়, বিভিন্ন দেশের জনগণের কল্যাণ বয়ে আনে।" (জিনিয়া/টুটুল/লিলি)