দুর্ঘটনার দশ বছর পূর্তিতে ওয়েনছুয়ানবাসীরা কীভাবে কাটিয়েছেন? সে সময়ের কথা সমসময় প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মনে পড়ে। গত ফেব্রুয়ারিতে সিছুয়ান প্রদেশ পরিদর্শনের সময় সি চিন পিং ভূমিকম্পের ঘটনাস্থল ইংসিউ উপজেলায় পুনরুদ্ধার কাজ পরিদর্শন করেছেন। সুপ্রিয় শ্রোতা, আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় এ সম্পর্কে শুনবেন বিস্তারিত।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সর্বপ্রথমে স্যুয়েন খৌ মাধ্যমিক স্কুলে ভূমিকম্পের ধ্বংসাবশেষে নিহতদের এবং ভূমিকম্পে নিহত উদ্ধারকারী বীরদের সম্মানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
স্যুয়েন খৌ মাধ্যমিক স্কুল ওয়েনছুয়ান ভূমিকম্পের কেন্দ্রে অবস্থিত। '১২ মে ভূমিকম্পে'র আঘাতে বিধ্বস্ত হয় এটি। তারপর বিদ্যালয়টির ধ্বংসাবশেষ রক্ষা করা হয়। এই শিক্ষাভবনের একটি বড় ঘড়িতে ভূমিকম্প ঘটার সময়-১৪:২৮ লেখা রয়েছে। পাশের দেয়ালে ওয়েনছুয়ান ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ভূমিকম্পে উদ্ধার ও ত্রাণকাজে নিহত বীরদের কাজ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সি চিন পিং ভূমিকম্পের এ ধ্বংসাবশেষ সুরক্ষার নির্দেশ দেন, যাতে এটি দেশপ্রেম শিক্ষাদানের ঘাঁটিতে পরিণত হয়।
দশ বছরে ইংসিউ উপজেলায় পুনর্বাসনের কাজ কেমন হয়েছে? এ প্রসঙ্গে সি চিন পিং জানতে চান।
"বর্তমানে এই স্কুলটি কত মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয়?
কর্মকর্তারা জানান, 'রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প প্রতিরোধ করতে সক্ষম। পাশাপাশি নগর-গ্রামবাসীর বাসভবন ৮ মাত্রার ভূমিকম্প প্রতিরোধ করতে পারে।
সি চিন পিং আবারও জিজ্ঞাস করেন, "এই মাত্রার ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা কি সম্ভব?" জবাবে কর্মকর্তা জানান, "৯ মাত্রার প্রতিরোধক ভবন ভূমিকম্পে ধ্বংস হয় না এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
সি চিন পিং বলেন, দুর্যোগাত্তর পুনর্গঠনের কাজে ঐতিহাসিক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে; এতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির দৃঢ় পরিচালনা এবং চীনের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অগ্রসর অবস্থা ফুটে উঠেছে। সবার প্রতি শৈল্পিক উন্নয়ন, গণজীবিকা বিন্যাসসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ আরও জোরদার করা এবং চীন দেশকে আরও সুন্দর দেশে পরিণত করার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর নির্দেশ দেন সি চিন পিং।
ইংসিউ উপজেলা ভূমিকম্পের কেন্দ্রে অবস্থিত। ১২ মে ভূমিকম্পে উপজেলাটির তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ নিহত হয় এবং প্রত্যক্ষ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫০ কোটি ইউয়ান। দশ বছর পর এ উপজেলাটি আবার প্রাণচঞ্চল হয়। প্রেসিডেন্ট সি বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে স্থানটি পরিদর্শন করেন। তাই সে সময় উপজেলাটি উত্সবমুখর হয়ে ওঠে।
চিয়াং ওয়েই মিং নামক স্থানীয় এক অধিবাসী এখানে একটি চা দোকানের মালিক। তার উদ্যোগ ও নেতৃত্বে স্থানীয় বেশ কিছু মানুষ চা তৈরির মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। তার আন্তরিক আমন্ত্রণে সি চিন পিং দোকানটি পরিদর্শন করেন।
সি চিন পিং জিজ্ঞেস করেন,
"সব চা পাতা স্থানীয় অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে?
মালিক বলেন, "সব চা পাতা স্থানীয়। ভূমিকম্পের আগেই চা কারখানা ছিল। এখন আমরা চা ও ঘোড়া সংস্কৃতি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা চালাচ্ছি। এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি মোটামুটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।"
সি চিন পিং ঐতিহ্যবাহী ব্ল্যাক টি বানানোর প্রক্রিয়া দেখেন এবং স্থানীয় মাখন চা তৈরির প্রক্রিয়া উপভোগ করেন।
জানা গেছে, প্রাচীন চা ও ঘোড়া সংস্কৃতি পুরনো পথের কেন্দ্র বা সংযোগস্থলে ইংসিউ উপজেলায় অবস্থিত। এ উপজেলায় চা শিল্পের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। পুরো উপজেলায় ২ লাখেরও বেশি চা গাছ রয়েছে। ভূমিকম্পের পর চা শিল্প উন্নয়ন ছিল গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম।
স্থানটি ত্যাগের সময় সি চিন পিং বলেন,
"আমার সব সময় এখানকার কথা মনে পড়ে। দশ বছর পূর্তি হচ্ছে, এখানকার পরিবর্তন দেখে আমি খুব আনন্দিত।"
(রুবি/তৌহিদ)