"আমি আজ ঘোষণা দিতে চাই, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে সরে যাবে। এরপরই আমি প্রেসিডেন্ট স্মারক স্বাক্ষর করবো এবং ইরানের ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা পুনরায় কার্যকর হবে। আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক শাস্তি জারি করবো। ইরানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিতে সমর্থনদানকারী যে কোনো দেশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে যুক্তরাষ্ট্র।
ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ সমর্থন ও পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিযোগ করেন এবং গত ৪০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সংঘাতের সারসংকলন করেন। ট্রাম্প বলেন, ইরানের পরমাণু চুক্তির মূল বিষয়ে ত্রুটি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা জোরদার করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমস্যা সমাধানের জন্য প্রকৃত, সার্বিক ও টেকসই উপায় বের করবে। এর মধ্যে থাকবে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরিকল্পনার হুমকি দূর করা। বিশ্বজুড়ে ইরানের সন্ত্রাসী তত্পরতা রোধ করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের হুমকি ঠেকানো।
এর আগে ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া ঠেকাতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এনামুয়েল ম্যাকখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল পরপর যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। তবে ট্রাম্প তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প ২০৩০ সালের পর ইরানের পরমাণু জ্বালানি উত্পাদনের ওপর কঠোর সীমাবদ্ধতা জারি করার দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করায় ইরানের পরমাণু চুক্তি সংশোধন-সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।
এদিকে গতকাল (মঙ্গলবার) ট্রাম্প আরও বলেন, ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এ ছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উত্তর কোরিয়া সফরের পথে রয়েছেন বলেও জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন, 'মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এ মুহূর্তে উত্তর কোরিয়া যাচ্ছেন। তিনি উত্তর কোরিয়ার শীর্ষনেতা কিম জং উনের সঙ্গে আমার বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলবেন। দু'দেশ পরিকল্পনা করছে এবং সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। আমরা চুক্তিতে পৌঁছানোর আশা করছি। এ ছাড়া চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সাহায্যে বিভিন্ন পক্ষ সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা বাস্তবায়ন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের ভাষণের দিন ইরানের পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরকারী, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ইরান চুক্তি ভাঙার কোনো কাজ না করায় চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি গুরুতর ভুল। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার ওয়েবসাইটে 'ইউরোপ থেকে দূরে সরার ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা চাঙ্গা করা' শিরোনামে ট্রাম্পের ভাষণ নিয়ে এক সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়েছ। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার ওয়েবসাইটেও এক নিবন্ধে বলা হয়, ইরানের সার্বিক পরমাণু চুক্তি থেকে সরে গেলে দেশটি আরো সহজে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে।
(রুবি/তৌহিদ)