চীনের বৈশিষ্ট্যময় শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে: সি চিন পিং
  2018-05-07 16:38:20  cri

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত সৃজনশীলতা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষকরা চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত সৃজনশীলতার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। বিভিন্ন প্রধান বিষয়ের (মেজরের) মধ্যে সহযোগী সৃজনশীলতা জোরদার করতে হবে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পারস্পরিক সমর্থন উন্নত করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দক্ষ ব্যক্তি ও দল গঠনে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

২০১৮ সালের ৫ মে কার্ল মার্ক্সের ২০০তম জন্মবার্ষিকী। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের মার্ক্সবাদ পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের প্রথম মার্ক্সবাদ একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হয় নতুন যুগে সি চিন পিংয়ের চীনা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারাবিষয়ক গবেষণাগার।

প্রেসিডেন্ট সি মনোযোগ দিয়ে মার্ক্সবাদের সংশ্লিষ্ট প্রদর্শনী দেখেন এবং বর্তমানে চীনে মার্ক্সবাদ ও নতুন যুগে চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার গবেষণা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের কথা শোনেন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্ক্সবাদ একাডেমিকে স্পষ্ট রাজনৈতিক দিক নির্দেশনায় অবিচল থাকতে হবে, যা মার্ক্সবাদের চিন্তাধারায় নেতৃত্বাধীন অবস্থান সুসংবদ্ধ করতে সক্ষম এবং ক্যাম্পাস, ক্লাসে ও শিক্ষার্থীদের মাথায় এ চিন্তাধারার ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।

আন্তর্জাতিক মার্ক্সবাদ গ্রন্থ কেন্দ্র পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট বই ও গ্রন্থ সংগ্রহের ব্যাপক প্রশংসা করেন সি। মার্ক্সবাদের গবেষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করার সময় সবার লেখাপড়ার অনুভূতি জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন সি। দেশ বিদেশের শিক্ষার্থীরা আন্তরিকভাবে প্রশ্নের উত্তর দেন এবং প্রেসিডেন্ট সি'কে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন।

মার্ক্সবাদের একজন সমর্থনকারী হিসেবে নিজের লেখাপড়ার পদ্ধতি বিনিময় করেন সি। তিনি বিদেশি শিক্ষার্থীদের বলেন, চীনকে জানতে চাইলে চীনের ইতিহাস, সংস্কৃতি, চিন্তাধারা ও উন্নয়নের প্রক্রিয়া সবই বুঝতে হবে। বিশেষ করে মার্ক্সবাদের চীনের আধুনিক উন্নয়ন। মার্ক্সবাদের প্রচার ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠায় পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের প্রশংসা করেন সি চিন পিং।

চলতি বছর কার্ল মার্ক্সের ২০০তম জন্মবার্ষিকী এবং 'কমিউনিস্ট ঘোষণা' সৃষ্টির ১৭০তম বার্ষিকী। এ দুটি বার্ষিকী উদযাপনের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি সিপিসি'র ঊনবিংশ জাতীয় কংগ্রেসের চিন্তাধারা ও নতুন যুগে চীনের বৈশিষ্ট্যময় সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা ভালভাবে চালু ও গবেষণা করা। বিভিন্ন একাডেমি পরিদর্শন করার পর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে সেমিনারে অংশ নেন সি। সেমিনারে একজন ছাত্রীর কথা সি'র ব্যাপক প্রশংসা পায়। তার নাম সুং শি, তিনি মনোবিজ্ঞান বিষয়ের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। তার মাথার চুল সেনাসদস্যের মতো, পরিধান করেন সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট। তিনি চীনা নৌবাহিনীর একজন সদস্য। সাময়িকভাবে চাকরি থেকে দূরে থাকলেও বিশেষ সামরিক জীবন তার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী প্রতিনিধি হিসেবে সেমিনারে প্রেসিডেন্ট সি'র সাথে তার সামরিক জীবন শেয়ার করেন।

সম্প্রতি চীনে একটি চলচ্চিত্র অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, চলচ্চিত্রটির নাম 'অপারেশন রেড সি'। এতে চীনের শান্তিরক্ষী বাহিনীর গল্প বর্ণনা করা হয়। ছাত্রী সুং শি যেন এ চলচ্চিত্রের একজন নারী সৈনিকের মতো। ২০১২ সালে তিনি পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং তৃতীয় বর্ষে দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত নৌ বাহিনীর একটি সৈন্য প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে পৌঁছে সৈনিক পরীক্ষায় অংশ নেন।

পরীক্ষায় চমত্কার ফলাফল নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মেরিনের একজন পর্যবেক্ষক সেনা হন। দু'বছরের সামরিক জীবনে বিভিন্ন ধরনের উদ্ধার কাজে অংশ নেন এবং ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে নৌ বাহিনীর একমাত্র নারী মেরিন সেনা হিসেবে এডেন উপসাগরে যান। ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল এডেন উপসাগরের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের সামুদ্রিক এলাকায় জলদস্যুরা ১৯ জন সিরীয় নাবিককে আটক করে।। চীনের নৌ বাহিনীর ইউলিন ফ্রিগেট সিরীয় নাবিকদের উদ্ধারে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করে। নৌ বাহিনীর সদ্যরা জঙ্গি বিমানের সাহায্যে জাহাজটিতে অবতরণ করে এবং সাফল্যের সঙ্গে ১৯ জন সিরীয় নাবিককে উদ্ধার করে। পরে সিরীয় নাবিকরা চীনের জাতীয় পতাকা তুলে ধরে উচ্চস্বরে বলে ওঠে 'ধন্যবাদ, চীন'। এমন অভিজ্ঞতা তুলে ধরার সময় সুং শি'র চোখ পানিতে ভেসে যায়। সামরিক জীবন ছাড়াও সুং শি প্রেসিডেন্ট সি'র সাথে বই পড়ার অনুভূতিও শেয়ার করেন।

সুং শি বলেন, প্রেসিডেন্ট সি যুব বয়সে চীনের গ্রামাঞ্চলে জীবনযাপন করেছেন, লিয়াংচিয়াহো গ্রামের কৃষিক্ষেতে শুয়ে তিনি গ্রামের কৃষকদের সেবা করেছেন। সুং শি পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে সামরিক জীবনে আরো ভালভাবে জনগণের সেবা করার কথা জানান। প্রেসিডেন্ট সি তার কথা শুনে অনেক মুগ্ধ হন।

সেমিনারের শেষদিকে প্রেসিডেন্ট সি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। তিনি উল্লেখ করেন, চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের চীনা স্বপ্ন বাস্তবায়নে যুবকদের কাঁধে ভারী দায়িত্ব রয়েছে। যুবকরা স্বপ্ন সৃষ্টিকারী ও পূরণকারী। স্বপ্নের জন্য আবেগ দরকার এবং স্বপ্ন পূরণে দরকার সংগ্রাম ও অবদান। জাতীয় পুনরুত্থান ও রাষ্ট্রীয় নির্মাণে যুবকরা সংগ্রাম ও প্রচেষ্টা চালাবে বলে আশা করেন সি।

সি জোর দিয়ে বলেন, চীনের বৈশিষ্ট্যময় সমাজতন্ত্র উন্নয়ন করা ও এতে অবিচল থাকা এবং চীনকে আধুনিক সমাজতান্ত্রিক শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা একটি দীর্ঘকালীন কর্তব্য, এ কাজে প্রয়োজন বিভিন্ন প্রজন্মের যুবকদের সংগ্রাম। শিক্ষা উন্নত হলে রাষ্ট্রও শক্তিশালী হবে। বর্তমানে সিপিসি ও দেশের উন্নয়নে উচ্চ শিক্ষার উপর নির্ভর করতে হবে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত পেশাগত দক্ষ ব্যক্তি তৈরি করতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত এ দায়িত্ব বহন করে শ্রেষ্ঠ ও দক্ষ শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ জোরদার করা।

বিশ্বে শ্রেষ্ঠ মানের বিশ্ববিদ্যালয় ও দক্ষ ব্যক্তি প্রশিক্ষণ সম্পর্কে তিনটি প্রস্তাব পেশ করেন প্রেসিডেন্ট সি।

প্রথমত, সঠিক রাজনৈতিক দিক নির্দেশনায় অবিচল থাকা। মার্ক্সবাদ সিপিসি ও চীনের মৌলিক নির্দেশনামূলক চিন্তাধারা এবং একে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের মার্ক্সবাদ তত্ত্বের প্রশিক্ষণ ও এ চিন্তাধারা গভীরভাবে জানানো এবং তার বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তব তাত্পর্য ধরে রেখে মার্ক্সবাদ দিয়ে বিশ্বকে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের পদ্ধতি বুঝিয়ে দিতে হবে। চীন ও বিশ্বের উন্নয়নের প্রবণতা স্পষ্টভাবে বোঝার পর ছাত্রছাত্রীদের মার্ক্সবাদের সত্যের শক্তি অনুভব করাতে হবে। চীনে শ্রেষ্ঠ মানের বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষক গড়ে তোলা। রাজনৈতিক প্রজ্ঞাসম্পন্ন চমত্কার ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকদল শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার ভিত্তি। শিক্ষকদেরকে তাঁদের কাঁধে দায়িত্ব বহন করতে হবে, তাঁদেরকে ছাত্রছাত্রীদের উন্নয়নের পথের নির্দেশনা দিতে হবে। শিক্ষকদের নৈতিক অবস্থান ও দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে, ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণে তাঁদেরকে আরো কার্যকর ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে।

তৃতীয়ত, শ্রেষ্ঠ মানের দক্ষ ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ-ব্যবস্থা গড়ে তোলা। সিপিসি'র রাজনৈতিক কর্ম ব্যবস্থা জোরদার করার মধ্য দিয়ে শ্রেষ্ঠ মানের ব্যক্তিদের চিন্তাভাবনা ও সচেতনতা তৈরি করতে হবে । সৃজনশীলতা ও নব্যতাপ্রবর্তনের গবেষণায় ব্যাপক সমর্থন দিতে হবে, যাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে দক্ষ যুবক ও দক্ষ নেতৃত্ব সৃষ্টি করা যায় এবং দেশের বিভিন্ন গবেষণায় অবদান রাখা যায়।

ভাষণের শেষদিকে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, আধুনিক যুবকরা নতুন যুগের অগ্রপথিক। তাদের বিস্তার উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। তাদেরকে মহান যুগের দায়িত্ব বহন করতে হবে। প্রত্যেক যুবকের যুগ ও জনগণের প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করা উচিত। যুবকরা নিজেদের জীবন জাতীয় ভাগ্যের সাথে যুক্ত করে জনগণ ও দেশের সেবায় অবদান রাখবে বলে প্রত্যাশা করেন সি।

সি বলেন, দৃঢ় আদর্শ ও বিশ্বাস নিয়ে সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে, সংগ্রামের মাধ্যমে দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করতে হবে, দেশ ও জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে হবে। সমাজতন্ত্রের নির্মাণকারী ও উত্তরাধিকারী হিসেবে সার্বিক সচ্ছল সমাজ গঠন ও আধুনিক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে সংগ্রাম করতে উত্সাহ দেন সি, যাতে চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের স্বপ্ন পূরণ করা যায়।

সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়, আমাদের আজকের অনুষ্ঠানও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে এলো। তবে এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn, caoyanhua@cri.com.cn

রেডিও'র মাধ্যমে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে আমাদের বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali@cri.cn

এবার তাহলে বিদায়। আগামী সপ্তাহের একই দিনে, একই সময়ে আবারো আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। থাকুন সুন্দর ও আনন্দে। যাইচিয়ান।(সুবর্ণা/টুটুল)


1  2  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040