যুক্তরাষ্ট্রকে উত্তেজনা সৃষ্টি না করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি
  2018-05-07 15:40:40  cri
মার্চ ৭: ইরানের সার্বিক পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র আবার স্বাক্ষর করবে কি-না, আগামী ১২ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে সিদ্ধান্ত জানাবেন। আসন্ন দিনটি ও ইরানের সার্বিক পরমাণু চুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে নানা দেশ গভীর নজর রাখছে। গতকাল (রোববার) ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি সতর্ক করে বলেন, ইরান বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি না করার আহ্বান জানায় তেহরান।

গতকাল (রোববার) ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খোরাসান প্রদেশের সাবজেভার শহরে একটি ইস্পাত কারখানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সার্বিক পরমাণু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ালে তা হবে ঐতিহাসিক দুঃখ। যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত্‌ আগ্রাসন মোকাবিলায় ইরান বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়েছে।'

গত ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে বৈরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু ইরানের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হয়নি। এখন যুক্তরাষ্ট্র আবার ভুল করছে। দেশটি যদি ইরানের সার্বিক পরমাণু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায়, তা হবে ঐতিহাসিক ভুল। এ রকম ভুলের কারণে ইরানিদের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য আমরা সচেতন আছি। ট্রাম্পের আসন্ন যে কোনো কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় ইরান প্রস্তুত রয়েছে।

রুহানি বলেন, কয়েক মাস আগে ইরান সরকার সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দেশটির সার্বিক পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। গত কয়েক দিন আগে তেহরান সরকার ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ওই সংস্থাটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর প্রকল্প চালু করা নিয়ে বৈঠক করেছেন। রুহানি বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় পায় না। দেশটি ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং নির্দিষ্ট ইসলামিক বিপ্লবের পথে এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, 'ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ইরান অব্যাহতভাবে ঐক্য ও সম্প্রীতি সুসংবদ্ধ করবে। বর্তমানে ইরানের কনজারভেটিভ দল, সংস্কারপন্থি ও মধ্যপন্থিরা ঐক্যবদ্ধ এবং একই প্ল্যাটফর্মে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল এ বিষয়ে সচেতন রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই মনে করতেন যে, ইরানের পরমাণু চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে স্বাক্ষরিত সবচেয়ে বাজে চুক্তি। এই চুক্তি সংশোধন করা, এমনকি তা ছিঁড়ে ফেলা দরকার। এ ছাড়া ট্রাম্প আগামী ১২ মে নতুন করে চুক্তি স্বাক্ষরের আগে তার মিত্র দেশগুলোর প্রতি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ইউরোপ কর্তৃক ইরানের পরমাণু চুক্তির ভিত্তিতে অতিরিক্ত চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা মোটানো যায়। এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, ইরান তার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরিকল্পনা নিয়ে কোনো দেশ ও ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করবে না। তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বমুখী কথা বলতে চাই, ইরান অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা উন্নয়নে যে কোনো পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবে না। দেশের প্রয়োজনে ইরান নির্দিষ্ট সংখ্যক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করবে। দেশের প্রতিরক্ষায় নেওয়া ইরানের সিদ্ধান্তের সঙ্গে অন্যান্য দেশের কোনো সম্পর্ক নেই।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ভূমিকা প্রসঙ্গে রুহানি বলেন, ইরান আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করতে চায়। বর্তমানে দেশটি সিরীয় সংকট নিয়ে রাশিয়া ও তুরস্কের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে। ইয়েমেন সমস্যা নিয়েও নানা দেশের সঙ্গে বৈঠক করছে ইরান। ইরান মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেরকে আরেকটি 'আইএস' তৈরি করতে দেবে না।

'আমরা মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করবো এবং এ অঞ্চলে আরেকটি আইএস তৈরি হতে দেবো না। আমরা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাই। বিশ্বের সবাইকে বলতে চাই, আমরা কোনো যুদ্ধ ও সংঘাত সমর্থন করি না। তবে নিজ স্বার্থ রক্ষা করা এবং যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

(রুবি/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040