গত ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সফরে আসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদল। তারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। ঢাকায় ফিরে ৩০ এপ্রিল তারা দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি গুস্তাবো মেজা কুয়াদ্রা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সাহায্য-সহযোগিতার জন্য শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। বলেন, সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে তার সরকার। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে বাংলাদেশের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী কাজ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে চীন, রাশিয়া, ভারত ও জাপানের বড় ভূমিকা প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তার জন্য নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন। একই দিন মিয়ানমারের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাবার আগে বিমান বন্দরে সংবাদ সম্মেলন করে নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিনিধিদল। এ সময় তারা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুকে নিরাপত্তা পরিষদ তাদের করণীয়ের অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছে বলে জানান তারা। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিতেই তারা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান দেখছেন। রোহিঙ্গা সংকট নিরসন জটিল ও সময়সাপেক্ষ হলেও দ্রুততম সময়ে তারা এ সমাধান চান বলে জানায় প্রতিনিধিদলটি।
বাংলাদেশ সফর শেষে ২ মে পর্যন্ত প্রতিনিধিদলটি মিয়ানমার সফর করে। তারা রাখাইন পরিদর্শন এবং মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি ও ক্ষমতাশালী সেনাপ্রধান মিং অং হলাইংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সুচি জানান তার দেশ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেন সেনাপ্রধান। তবে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তার বিচার হবে বলে জানান। আগামী নভেম্বরে নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিনিধিদল এ বিষয়ে জাতিসংঘে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে।
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এ সফরকে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই ইতিবচাক হিসেবে দেখছেন। তবে বাংলাদেশের অব্যাহত কূটনৈতিক তৎপরতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগের পরও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় হতাশ অনেকে। আবার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার আগে তাদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।
এদিকে ৫ মে রাজধানী ঢাকায় শুরু হয়েছে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোপারেশন-ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলন। প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি মেনে চলতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে ওআইসির প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের সময় ওআইসি চুপ করে থাকতে পারে না।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তার জন্য তিনি বাংলাদেশের ভূঁয়সী প্রশংসা করে বলেন, বিশ্বের খুব কম দেশই তা করতে পারতো। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি জানান, এখনো রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চলছে এবং এখনো তারা বাংলাদেশে আসছে। ধর্ষণ ও গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড।
রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, একে গোটা বিশ্বের সমস্যা অভিহিত করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে হবে। এক্ষেত্রে ওআইসিকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, কানাডা সর্বাত্মক সহায়তা নিয়ে পাশে থাকবে।
রোহিঙ্গা সমস্যার শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ বিষয়ে অত্যন্ত সোচ্চার কানাডা। তাই ওআইসি সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতি ও সমর্থন জ্ঞাপন আন্তর্জাতিক মহলে জোরালো বার্তা দেবে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।