চীন ভারত সম্পর্ক উন্নয়ন: নতুন যুগের হাতছানি
  2018-04-28 14:15:37  cri
এপ্রিল ২৮: চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল (শুক্রবার) চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুপেই প্রদেশের রাজধানী উহানে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। বৈঠকের আগে দুই নেতা স্থানীয় একটি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। দুই দিনব্যাপী সফরের দুই নেতার মধ্যে উষ্ণ ও আন্তরিকতাপূর্ণ আলাপ হয়েছে, অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা হয়েছে। এর কিছু দিন আগে ২৪ এপ্রিল বেইজিংয়ে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভারত ও পাকিস্তান সদস্য দেশ হিসেবে প্রথমবারের মতো সম্মেলনে অংশ নেয়। ভারত যোগ দেওয়ায় শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা এখন বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যা ও ভূখণ্ড এবং সুপ্ত শক্তির বিশাল একটি আঞ্চলিক সংস্থায় পরিণত হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে চীন-ভারত সম্পর্ক উন্নয়ন এশিয়া ও বিশ্বের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন বিশ্বের সচেতন মহল।

বিগত তিন বছরে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেশ কয়েকবার সাক্ষাত করেছেন। এতে তাঁদের মধ্যে উত্তম বোঝাপড়া ও 'ভালো কাজের পরিবেশ' তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্ট সি। তিনি বলেছেন, বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি পারস্পরিক স্বার্থে সহযোগিতা বৃদ্ধি করলে তা চীন ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নের সদিচ্ছাকে প্রতিফলিত করবে। প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেছেন, এবারের বৈঠক দুই দেশের সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করবে। সি সুস্পষ্টভাবে বলেন, ভারতের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে চায় চীন।

যদিও এখনও চীন ও ভারতের মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে মতভেদ রয়েই গেছে, তারপরও আমারা দেখেছি, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং অভিন্ন স্বার্থকেন্দ্রীক সম্পর্ক উন্নয়নকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীও পারাস্পরিক স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত সমস্যা রয়ে গেছে। কিছুদিন আগে দোকালাম অঞ্চলে সীমান্তে দুই দেশের সেনা সমাবেশ ঘটেছে।

চীনের মেগা প্রকল্প 'এক অঞ্চল, এক পথ' বা 'বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ'-এ যোগ দেয়নি ভারত। যদিও চীন বলছে, পথ সবসময় খোলা আছে। চীনের এই মেগা প্রকল্পটি এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। প্রাচীন সিল্ক রোডের সূত্র ধরে জলে ও স্থলে বাণিজ্যিক রুটকে ফের সচল করছে চীন। এশিয়া ও ইউরোপের সংযুক্তি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনীতিতে নতুন চালিকাশক্তি যোগাবে। আঞ্চলিক অবকাঠামো উন্নয়নে এআইআইবি বা এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক গড়ে উঠেছে। বিশ্বের অসংখ্য দেশ ও সংস্থা এখানে যুক্ত হয়েছে। এতে ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক করিডোরের একটি অংশ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে ভারত। বিতর্কিত কাশ্মিরের ওপর দিয়ে অর্থনৈতিক করিডরের সড়কপথটি চলে গেছে, যা বেলুচিস্তানের গোয়াদারে গিয়ে শেষ হয়েছে। এই সড়কপথের ব্যাপারে ভারতের আপত্তি রয়েছে। চীন এক্ষেত্রেও নমনীয় জবাব দিয়েছে।

দুই দেশ এখন শক্তিশালী ব্রিকস জোটের সদস্য। ব্রিকস ইতোমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের কর্তৃত্ব ও প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্রিকস । দুই দেশের মধ্যে যে কোনো উত্তেজনা তৈরি হলে তা ব্রিকস জোটের অগ্রযাত্রায়ও প্রভাব ফেলবে। তাই সহযোগিতা না হলে এই জোটের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য মুখ থুবড়ে পড়বে।

ব্রিকস জোটে চীন ও ভারতের সহাবস্থান এশিয়ার অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে।

পাশাপাশি শাংহাই সহযোগিতার প্ল্যাটফর্মেও দুই দেশের সহাবস্থান আঞ্চলিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

একুশ শতকে চীন বিশ্বে অন্যতম শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চীনের উত্থান বিশ্বের সব অর্থনীতির হিসাব-নিকাশ বদলে দিয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে ভারতও বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে। তখন দেশটির সাধারণ মানুষের মাথাপিছু আয় বর্তমানের ৯৪০ ডলার থেকে বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ২২ হাজার ডলারে। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে চীন-ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই অনেক বিশ্লেষক চীন ও ভারতের সহাবস্থানের মধ্যেই সর্বাধিক কল্যাণ দেখতে পান। এ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে চায় চীন। ক্ষমতায় আসার পর সি চিন পিং ও নরেন্দ্র মোদি বেশ কয়েকবার সাক্ষাত করেছেন। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কথা বলেননি যা সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আমারা দেখেছি, সীমান্ত অঞ্চলেও এক ধরনের স্থিতাবস্থা বিরাজ করছে।

প্রকৃতপক্ষে চীন ও ভারত নিকট প্রতিবেশী দুটি দেশ। প্রভাববলয় বিস্তারের রাজনীতিতে দেশ দুটির মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা থাকলেও পরিবর্তিত বিশ্বরাজনীতির কারণে ভারতের যেমন প্রয়োজন রয়েছে চীনের সমর্থন, তেমনি চীনেরও প্রয়োজন রয়েছে ভারতের সাহায্য ও সহযোগিতার। তাই সুসম্পর্কের মধ্যেই নিহিত রয়েছে সমৃদ্ধির চাবিকাঠি।

মোহাম্মদ তৌহিদ,

চীন আন্তর্জাতিক বেতার

২৮ এপ্রিল ২০১৮।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040