আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস
  2018-05-01 16:19:21  cri

আজ পহেলা মে। বিশ্বের কোটি কোটি শ্রমজীবি মানুষের অধিকার ও দাবি আদায়ের দিন। মহান 'মে দিবস'। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা উপযুক্ত মজুরি আর দৈনিক আট ঘন্টা কাজের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।

কল-কারখানা তখন গিলে খাচ্ছিল শ্রমিকের গোটা জীবন। অসহনীয় পরিবেশে প্রতিদিন ১৬ ঘন্টা কাজ করতে হতো। সপ্তাহজুড়ে কাজ করে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য একেবারে ভেঙে যাচ্ছিল। শ্রমজীবী শিশুরা হয়ে পড়েছিল কঙ্কালসার। তখন দাবি উঠেছিল, কল-কারখানায় শ্রমিকের গোটা জীবন কিনে নেয়া যাবে না। ৮ ঘন্টা শ্রম দিনের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের সময় ওই বছরের ১লা মে শ্রমিকরা ধর্মঘট আহবান করে। প্রায় তিন লাখ মেহনতি মানুষ ওই সমাবেশে অংশ নেয়।

আন্দোলনরত ক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের রুখতে গিয়ে একসময় পুলিশ বাহিনী শ্রমিকদের মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে পুলিশের গুলিতে ১১ জন নিরস্ত্র শ্রমিক নিহত হন, আহত ও গ্রেফতার হন আরো অনেক শ্রমিক। পরবর্তীতে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মধ্য থেকে ছয়জনকে আন্দোলনে অংশ নেয়ার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

কারাগারে বন্দিদশায় এক শ্রমিক নেতা আত্মহননও করেন। এতে বিক্ষোভ আরো প্রকট আকারে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

১৮৮৯ সালের ১৪ই জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৮৯০ সাল থেকে ১ মে বিশ্বব্যাপী পালন হয়ে আসছে 'মে দিবস' বা 'আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস'।

মে দিবস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে সারা বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণীর মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের ওপর এ দিবসের প্রভাব সূদূর প্রসারী। এর প্রভাবে শ্রমিকদের দৈনিক কাজের সময় ১৬ ঘন্টা থেকে নেমে আসে ৮ ঘন্টায়। বিশ্বের সব দেশের শ্রমিকরা এর মাধ্যমে তাদের শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা পেতে শুরু করে।

আর বর্তমান যুগে এই দিবস শুধুই শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার রক্ষার তাত্পর্য বহন করে তা নয়, বরং এ দিনে ব্যাপক শ্রমিক বা যারা অনেক পরিশ্রমের চাকুরি করে, তাদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো যায়। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এর আগে বলেছিলেন যে, যারা অনেক পরিশ্রমের কাজ করেন, তাদের জন্য আমরা গর্ব বোধ করি। সরকারের উচিত আরো বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, শ্রমকে শ্রদ্ধা জানানো, মানব সম্পদকে শ্রদ্ধা জানানো এবং জ্ঞানকে শ্রদ্ধা জানানো। এছাড়া, শ্রমিকের বেতন বাড়াতে হবে। জনগণের স্বার্থের সঙ্গে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করতে হবে। প্রেসিডেন্ট সি'র এই মন্তব্য থেকে বুঝা যায়, বর্তমানে চীনে জনগণের জীবন এবং শ্রমিকের স্বার্থ ও অধিকারের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ সরকার জানে যে, জনগণই হল চীনা স্বপ্ন বাস্তবায়নের ভিত্তি। এটা ঠিক যে, চীনাদের শ্রম আর কাজের কারণে চীন গত ৪০ বছরের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের বিরাট সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। ৪০ বছরে চীনা জনগণ নিজের হাতে দেশ ও জাতির উন্নয়নের জমকালো মহাকাব্য রচনা করেছেন। আমার কাছে কিছু পরিসংখ্যান আছে, তা থেকে আপনারা খানিকটা বুঝতে পারবেন: বর্তমানে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি, বৃহত্তম শিল্প দেশ, বৃহত্তম পণ্যদ্রব্য বাণিজ্যের দেশ, বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের দেশ। চীনের জিডিপি বৃদ্ধির গড় হার ৯.৫ শতাংশ। এই সময়ে ৭০ কোটিরও বেশি মানুষ দারিদ্রমুক্ত হয়েছে। বহু বছর ধরে বিশ্বের অর্থনীতির উন্নয়নে চীনের অবদান ৩০ শতাংশেরও বেশি।

আর এসব আসলে সবই জনগণের সৃষ্টি। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত শ্রমিককে সম্মান জানানো। শ্রম দিবস এ ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য বহন করে। তা আমাদের সবাইকে মনে করিয়ে দেয় যে, শ্রমিকের শ্রম, কাজকে কখনই ভুলে যাওয়া যাবেনা।

(শুয়েই/মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040