0430topic
|
২০১৪ সালের ১৫ জুলাই, ব্রাজিলে ব্রিক্স দেশের ষষ্ঠ শীর্ষ বৈঠক আয়োজিত হয়। সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমবারের মত বৈঠক করেন। বৈঠকে দু'নেতা একমত হন যে, চীন ও ভারত একই কন্ঠে কথা বলবে, সারা বিশ্ব তা শুনবে। চীন ও ভারতের সহযোগিতার ওপর সারা বিশ্বই নজর রাখবে।
মাত্র দু'মাস পর অর্থাত্ ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভারত সফর করেন। আনুষ্ঠানিক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি বলেন, আমরা আরো ঘনিষ্ঠ উন্নয়ন অংশীদারিত্বের সম্পর্ক স্থাপন করতে একমত হয়েছি। তাতে শুধু চীন ও ভারত উভয়েরই উন্নয়ন হয় তা নয়, সত্যিকার অর্থের 'এশিয়া যুগ' বাস্তবায়ন করা যায়।
এবারের বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি মোদিকে চীনের প্রাচীন শহর সি আন পরিদর্শনেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
২০১৫ সালের ১৪ মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীন সফরে আসেন। দু'নেতা ছয় ঘন্টা স্থায়ী বৈঠক করেন। তাঁরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক থেকে আর্থিক সহযোগিতা, মানবিক বিনিময় থেকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, দু'দেশের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেন।
চীন ও ভারতের নেতাদের বিনিময়ের নতুন ব্যবস্থার ফলে দু'দেশের সম্পর্কও নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। এবারের উ হান বৈঠকে তাঁরা অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়েও গভীরভাবে মতবিনিময় করেছেন। তা দু'দেশের সম্পর্কের সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য দিক নির্দেশনা দিয়েছে।
এর আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং চীনা রাষ্ট্রীয় পরিষদের সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ২২ তারিখ বেইজিংয়ে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকের পর দু পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ২৭ থেকে ২৮ এপ্রিল চীনের হুপেই প্রদেশের উহান শহরে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করার ঘোষণা করেন। এ সম্পর্কে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক ও পন্ডিত উচ্চ মূল্যায়ন করেন। ভারতের নতুন দিল্লীতে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অধ্যয়ন কেন্দ্রের গবেষক অধ্যাপক ড.বি.আর.দীপাক বলেন, দু'দেশের নেতাদের অনুষ্ঠেয় অনানুষ্ঠানিক বৈঠক দু'দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। এটি সারা বিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু দু'দেশের জনগণের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য তা অনুকূল।
গত বছরের শেষ দিক থেকে চীন-ভারত সম্পর্ক ইতিবাচকভাবে উন্নতি হচ্ছে। দু'দেশের যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
গত ডিসেম্বরে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ও তৎকালীন রাষ্ট্রীয় পরিষদের সদস্য ইয়াং চিয়ে চি ভারত সফর করেন। এরপর গত বছরের মার্চ মাসে চীনা বাণিজ্য মন্ত্রী চং শান ভারত সফর করেন। এর মাধ্যমে দু'দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ১০১টি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিগুলোর মোট আর্থিক পরিমাণ ২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দু'দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সমৃদ্ধ সুযোগ রয়েছে। সহযোগিতার বিস্তর সুযোগ প্রকৃত সাফল্যে পরিণত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সাম্প্রতিক কয়েক বছরে চীন ও ভারতের অর্থনীতিতে উচ্চ উন্নয়নের গতি বজায় রয়েছে। দু'দেশ ধারাবাহিক উন্নয়নের পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়ন করেছে। যেমন চীন 'চীনে তৈরী ২০২৫' ও 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ এবং ভারত' ১৫ বছরের উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা', 'ভারতে তৈরী' ও 'ডিজিটাল ভারত' পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। দু'দেশের উচিত উন্নয়নের নীতি ও কৌশলের অভিন্ন স্বার্থ সৃষ্টি করা। ভারত ও চীন হল বৃহত্তর উন্নয়নশীল দেশ এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়নের দু'টি দেশ। দু'দেশ বিশ্বের অর্থনীতি উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। ভারত ও চীন উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরো বেশি অভিন্ন স্বার্থ সৃষ্টি করতে পারবে, যাতে দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের যোগাযোগ ও সহযোগিতা গভীরতর এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা যায়। (শুয়েই/মহসীন)