সাতটি আত্মঘাতী বদভ্যাস
  2018-04-29 18:14:45  cri



সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাতটি বদভ্যাস আত্মঘাতী। এগুলো আমাদেরকে তিলে তিলে অকাল মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। নিদেনপক্ষে এই বদভ্যাসগুলো আমাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনকে নষ্ট করে। তাই, বিশেষজ্ঞরা এই বদভ্যাসগুলোকে 'খুনী বদভ্যাস' বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন। আজকের 'জীবন যেমন' আসরে এই সাতটি বদভ্যাস নিয়ে আমরা আলোচনা করব।

বদভ্যাস ১: প্রতিদিন রাত ১২টার পরে ঘুমানো

সময়মতো যথেষ্ট ঘুম শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘকাল ধরে ঘুমের অভাবে ভুগলে, আপনার শরীরের রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যাবে। এমনকি, আপনি বিভিন্ন ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস প্রভৃতি। সাবধান না-হলে, শরীরের কোষেও দেখা দিতে পারে পরিবর্তন; আপনি আক্রান্ত হতে পারেন ক্যান্সারে।

তা ছাড়া, রাত-জাগা পাকস্থলীর জন্যও ক্ষতিকর। কারণ, ঘুম কম হলে পাকস্থলীও কম বিশ্রাম পায়। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, যারা প্রতিদিন ৬.৫ ঘন্টার কম ঘুমান, তাদের তুলনামূলকভাবে আয়ু কম হয়।

বদভ্যাস ২: দীর্ঘকাল ধরে সকালের নাস্তা না-খাওয়া

সকালের নাস্তার গুরুত্ব সম্পর্কে কোনো সন্দেহ প্রকাশের অবকাশ নেই। সকালের নাস্তা না-খেলে দিনের শুরুতেই মস্তিষ্কের এনার্জি কম থাকে। আর মস্তিষ্কে এনার্জির অভাব হলে মানুষ সারাদিন মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারে না।

সকালে নাস্তা না-খাওয়ার বদভ্যাস পেটের এলার্জি ও ঘা-ও সৃষ্টি করতে পারে। এই বদভ্যাস আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্যে সমস্যায় ফেলতে পারে। মলাশয়ের প্রদাহেও আপনি ভুগতে পারেন। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের মতো কঠিন সমস্যায়ও আপনি পড়তে পারেন স্রেফ সকালের নাস্তা না-খাওয়ার কারণে। এমনকি, দীর্ঘকাল ধরে সকালে নাস্তা না-খাওয়ার অভ্যাসের কারণে আপনি মুটিয়ে যেতে পারেন। জার্মানির এক জরিপের ফল অনুসারে, যারা সকালের নাস্তাকে গুরুত্ব দেয় না, তাদের আয়ু অন্যদের তুলনায় গড়ে ২.৫ বছর কম হয়।

বদভ্যাস ৩: অতিরিক্ত মদ্যপান

অ্যালকোহল যকৃতের ক্ষতি করে। আপনি জানেন কি, লিভার ক্যান্সার হওয়ায় পথে চারটি ধাপ আছে? এই ধাপগুলো হচ্ছে: অ্যালকোহলজনিত ফ্যাটি লিভার, অ্যালকোহলজনিত লিভার অ্যালার্জি, অ্যালকোহলজনিত লিভার সিরোসিস, এবং অবশেষে লিভার ক্যান্সার। আপনি নিয়মিত অতিরিক্ত মদ্যপান করেন মানে, একটু একটু করে লিভার ক্যান্সারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

বদভ্যাস ৪: ধূমপান

ধূমপান আমাদের শরীরের কোনো উপকার করে না; শুধু অপকারই করে। বাংলাদেশের একজন নামকরা চিকিত্সককে একবার টিভিতে বলতে শুনেছিলাম যে, ধূমপানের ফলে পায়ের নখ থেকে শুরু করে মাথার চুল পর্যন্ত হেন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেই যা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। গবেষণায় প্রমাণিত যে, ধূমপানের সময় শরীরের স্বাভাবিক রক্তচলাচল বাঁধাগ্রস্ত হয়। তাই ধূমপায়ী মানুষ সহজেই হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তা ছাড়া, যারা ধূমপান করেন, তাদের ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। পরোক্ষ ধূমপানের কথাও আজকাল বেশ বলা হচ্ছে। সরাসরি ধূমপান না-করেও, আশেপাশের মানুষের মুখ থেকে নির্গত ধোঁয়া শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করাকে বলে পরোক্ষ ধূমপান। পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিও কম নয়। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, পরোক্ষ ধূমপানের ফলে বিশেষ করে শিশুরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক বলেছেন: 'যেসব পিতামাতা নিজ শিশুসন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবেন, তাদের উচিত ধূমপান পুরোপুরি ত্যাগ করা।"

বদভ্যাস ৫: লম্বা সময় ধরে বসে থাকা

লম্বা সময় ধরে বসে থাকলে, শরীরের স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এটা হৃদপিণ্ডের জন্য ক্ষতির কারণ। জরিপ থেকে জানা গেছে, যারা অফিসে বসে লম্বা সময় ধরে কাজ করেন, তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ১২ শতাংশ বেশি। অথচ শ্রমিকদের, মানে যারা বাইরে কাজ করেন, যাদের একটানা বসে থাকতে হয় না, তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা মাত্র ৩ শতাংশ।

বদভ্যাস ৬: শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে না-রাখা

যুক্তরাষ্ট্রের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, যারা ওজন স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না, তাদের ১৩ রকমের ক্যান্সার হতে পারে। অতএব ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

বদভ্যাস ৭: বিষণ্ণ জীবন যাপন করা

এক জরিপ অনুসারে, যাদের সারাক্ষণ একাকী লাগে, তাদের অকালে মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি। সবসময় মেজাজ ভালো রাখার চেষ্টা করুন। বিষণ্ণতা থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ, বিষণ্ণতা আপনার জীবনীশক্তিকে তিলে তিলে নষ্ট করে দেবে।

(ওয়াং হাইমান/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040