চীনে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০ কোটির বেশি (অর্থ-কড়ি, ২৮ এপ্রিল ২০১৮)
  2018-04-28 08:46:58  cri


. বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান আছে চীনে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে মোট ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ২ লাখ ৪০ হাজার। এসব ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই ব্যক্তি-মালিকানাধীন। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে এ-তথ্য জানিয়েছে চীনের বাজার নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রীয় প্রশাসন (এসএএমআর)।

সরকার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করায় বিগত পাঁচ বছরে চীনে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ব্যাপক হারে বেড়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। গত পাঁচ বছরে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। এ-সময়কালে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত পাঁচ বছরে উচ্চপ্রযুক্তির শিল্পে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। তা ছাড়া, নিবন্ধিত ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই বিভিন্ন সেবাধর্মী। এদিকে, গত পাঁচ বছরে বেসরকারি কোম্পানিগুলো ৪০ শতাংশ শহুরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

উল্লেখ্য, ৪০ বছর আগে চীনে পাঁচ লাখের কম ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ছিল।

. এদিকে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং বলেছেন, নব্যতাপ্রবর্তন ও ক্ষুদ্র শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করতে, সরকার বিভিন্ন খাতে কর কমানোর আরও ৭টি উদ্যোগ গ্রহণ করবে। তিনি সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের নিয়মিত সভায় এ-তথ্য জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নব্যতাপ্রবর্তনকে উত্সাহিত করতে, ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বাড়াতে, এবং আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ধারাবাহিক উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন সরকার। এসব উদ্যোগের মধ্যে থাকবে, গবেষণাসরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির ওপর কর কমানো, ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয়কর কমিয়ে দেওয়াসহ অন্যান্য ব্যবস্থা।

সভায় বলা হয়, কর্পোরেট আয়কর ও ব্যক্তিগত আয়করের সংশ্লিষ্ট সুবিধাজনক নীতি যথাক্রমে পয়লা জানুয়ারি ও পয়লা জুলাই থেকে কার্যকর ধরা হবে। আর কর হ্রাসের ৭টি ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর দেয় মোট কর ৬০০০ কোটি ইউয়ানেরও বেশি হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় পরিষদের সভায় আরও বলা হয়, ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এবং 'কৃষি, কৃষক ও গ্রাম'-এ সংশ্লিষ্ট আর্থিক সুবিধা দেওয়া হলে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালন-ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে।

. চীন বৈশ্বিক শিল্প-উৎপাদনের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ। সম্প্রতি এ-মন্তব্য করেছেন 'হ্যানওভার মেলা, ২০১৮'-এর সভাপতি ইয়োহেন খোক্‌লা। বিশ্বের শীর্ষ এই শিল্প-বাণিজ্য মেলা জার্মানির হ্যানওভারে অনুষ্ঠিত হয় সম্প্রতি।

ইয়োহেন খোক্‌লা মেলা চলাকালে সিনহুয়া বার্তাসংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মেলায় জার্মানির সবচেয়ে বেশি প্রদর্শক অংশগ্রহণ করেছেন। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে আছে চীন।

তিনি বলেন, কিছু বিখ্যাত চীনা কোম্পানি মেলায় কৌতুহল উদ্দীপক প্রযুক্তি বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। এটা প্রযুক্তির বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়াবে। প্রতিযোগিতা না-থাকলে নতুন কিছু আবিষ্কৃত হয় না; প্রযুক্তিগত অগ্রগতিও অর্জিত হয় না।

বাণিজ্য-শুল্ক প্রসঙ্গে খোক্‌লা বলেন, বিদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে নিজের পণ্যকে সাময়িকভাবে রক্ষা করা যায়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে শুল্ক আরোপকারী দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ, সেদেশে নতুন কিছু আবিষ্কারের চাহিদা কমে যায়।

এপ্রিল ২৩ থেকে ২৭ পর্যন্ত মেলা চলে। মেলায় ৭৫টি দেশ ও অঞ্চলের পাঁচ সহস্রাধিক প্রদর্শক অংশগ্রহণ করে।

. চীন নিজের যন্ত্রনির্মাণ শিল্পকে আরও উন্মুক্ত করবে; এই খাতে বিদেশের সঙ্গে সহযোগিতা গভীরতর করবে; গাড়ি, জাহাজ, বিমানসহ বিভিন্ন শিল্পকে উন্মুক্ত করার শর্ত শিথিল করবে; 'এক অঞ্চল, এক পথ' বরাবর দেশগুলোর সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধির যন্ত্র ও ইন্টারনেট শিল্প খাতের বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করবে; এবং বাণিজ্যিক পরিবেশ উন্নত করতে ভূমিকা রাখবে। চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মিয়াও ওয়েই সম্প্রতি বেইজিংয়ে এ-সব কথা বলেন।

মিয়াও ওয়েই বলেন, একদিকে প্রযুক্তি, দক্ষ ব্যক্তি, ও বৈদেশিক পুঁজির দ্বারা চীনের যন্ত্রনির্মাণ শিল্প প্রভাবিত হয়; অন্যদিকে, বিদেশে চীনা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। ২০১৭ সালের শেষ পর্যন্ত বিদেশে চীনা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ ৩০৭০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছায় এবং স্থানীয়ভাবে ২ লাখ ৫৮ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে বলেও তিনি জানান।

মিয়াও ওয়েই আরও বলেন, অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যত, সবসময়ই অভিন্ন স্বার্থ রক্ষা করা এবং উন্মুক্তকরণ ও সহযোগিতা চীনের যন্ত্রনির্মাণ শিল্পকে উন্নত করার মৌলিক নীতি।

. চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনে ৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ানের বেশি মূল্যের পণ্য খুচরা বিক্রয় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯.৮ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাও ফেং এই কথা জানান।

তিনি বলেন, প্রথম প্রান্তিকে ভোক্তাদের ব্যয় অর্থনৈতিক খাতে ৮০ শতাংশ অবদান রেখেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভোক্তাদের ভূমিকা ক্রমশ বাড়ছে।

মুখপাত্র আরও জানান, প্রথম প্রান্তিকে গোটা চীনে ইন্টারনেটে ১.৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান মূল্যের পণ্য খুচরা বিক্রয় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। এই প্রান্তিকে গ্রামীণ ইন্টারনেটে লেনদেনের হারও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

৬. চীনে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিভিন্ন লটারির টিকিট বিক্রি বেড়েছে। বছরের প্রথম তিন মাসে বিক্রি হয়েছে ১০,৪১৮ কোটি ইউয়ান মূল্যের লটারি, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯.৪ শতাংশ বেশি। চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় এ-তথ্য জানিয়েছে।

এর মধ্যে ওয়েলফেয়ার লটারির টিকিট বিক্রি হয়েছে ৫২২৫ কোটি ইউয়ানের এবং স্পোর্টস লটারির টিকিট বিক্রি হয়েছে ৫১৯৩ কোটি ইউয়ান মূল্যের।

এসময় হুনান প্রদেশে লটারির টিকিট বিক্রির হার বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। বছরের প্রথম তিন মাসে এই প্রদেশে বিক্রি বেড়েছে ১৪২ কোটি ইউয়ান মূল্যের টিকিট।

উল্লেখ্য, চীনে লটারির টিকিট বিক্রির আয় থেকে প্রশাসনিক ব্যয়, বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের ব্যয়, ও পুরস্কারের অর্থের যোগান দেওয়া হয়।

৭. বিশ্ব ব্যাংকের এক হিসেব অনুসারে, সারা বিশ্বেই বেড়েছে রেমিটেন্সের প্রবাহ। ২০১৬ সালের তুলনায় বিশ্বে ২০১৭ সালে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স বাড়ে সাড়ে ৮ শতাংশ। তা ছাড়া, চলতি বছরও বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রেমিটেন্স অর্জনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে নবম এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তৃতীয়। দক্ষিণ এশিয়ায় রেমিটেন্স আয়ে প্রথম ভারত এবং দ্বিতীয় পাকিস্তান। মালয়েশিয়া ও আরব আমিরাতের শ্রমবাজারে জটিলতা না-থাকলে বাংলাদেশের অর্জন আরও বেশি হতো।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশে প্রেরিত রেমিটেন্স-এর পরিমাণ ছিল ৪৬,৬০০ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৬ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪২,৯০০ কোটি ডলার। এক বছরে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পেয়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ।

রেমিটেন্স থেকে ভারতের আয় হয়েছে ৬৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। ভারতের পরেই অবস্থান চীনের। চীনের আয় ৬৪০০ কোটি ডলার। ফিলিপিন্স ৩৩০০ কোটি ডলার এবং মেক্সিকো ৩১০০ কোটি ডলার আয় করে এ-তালিকায় তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে। পঞ্চম স্থানে থাকা নাইজেরিয়ার আয় হয়েছে ২২০০ কোটি এবং ৬ষ্ঠ স্থানে থাকা মিসর আয় করেছে ২০০০ কোটি ডলার। পাকিস্তানের আয় ২০০০ কোটি এবং ভিয়েতনামের আয় ১৪০০ কোটি ডলার হওয়ায় তালিকায় এই দুই দেশের অবস্থান যথাক্রমে ৭ম ও ৮ম। বাংলাদেশ ১৩০০ কোটি ডলার আয় করে ৯ম স্থানে অবস্থান করছে।

৮. চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) কৃষি খাতে ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৫ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে এক হাজার ৫১৭ কোটি টাকা বেশি বিতরণ হয়েছে। তা ছাড়া, নয় মাসে যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ হয়েছে, তা চলতি অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮৫ শতাংশ।

৯. থাইল্যান্ডের বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী নিয়ে ঢাকায় ২৬ এপ্রিল শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী 'থাইল্যান্ড উইক'। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে মেলার উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

যৌথভাবে এ-মেলার আয়োজন করছে থাইল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড প্রমোশন বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সরকার ও ঢাকার থাই দূতাবাস। মেলা চলছে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040