0426music
|
আজকের অনুষ্ঠানে আপনাদের চীনের বৈশিষ্ট্যময় একজন চীনা গায়িকার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো, তিনি সা তিং তিং। তার পপ সংগীতে চীনের সংখ্যালঘু জাতির সংগীতের বৈশিষ্ট্য ও বৌদ্ধধর্মের বৈশিষ্ট্য মিশে বিশেষ শৈলী সৃষ্টি করেছে। তার কণ্ঠও অসাধারণ। তাই একবার তার গান শুনলে পরবর্তীতে খুব সহজেই তাকে চেনা যায়। তিনি ব্রিটেনের 'এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ গায়কে'র পুরস্কার পাওয়া প্রথম চীনা গায়ক।
সা তিং তিং ১৯৮৪ সালে চীনের হ্যনান প্রদেশের পিংতিংশান শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন। তার বাবা চীনের হান জাতির মানুষ। তার মা মঙ্গোলীয় জাতির মানুষ। চীনের মধ্যাঞ্চলে জন্মগ্রহণ করলেও তার ছোটবেলার বেশিরভাগ সময় কেটেছে নানীর সঙ্গে ইনারমঙ্গোলিয়ার তৃণভূমিতে। তৃণভূমিতে যাযাবর জাতির সংস্কৃতি ও সংগীত তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। ছোটবেলার অভিজ্ঞতার কারণে তার গানে চীনের মঙ্গোলিয়াসহ অনেক সংখ্যালঘু জাতির সংগীতের বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। আর ক্রমেই তা সা তিং তিংয়ের গানের বিশেষ এক বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়।
মাধ্যমিক স্কুল পাসের পর তিনি চীনের মুক্তি ফৌজ শিল্প অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন এবং জনপ্রিয় সংগীত ও সুরারোপ শিখেন। ২০০০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সা তিং তিং চীনের কেন্দ্রীয় টিভি স্টেশনে আয়োজিত তরুণ গায়ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এই প্রতিযোগিতাটি চীনের সবচেয়ে বিখ্যাত সংগীত প্রতিযোগিতা। চীনের অনেক বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ও গায়ক এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাদের পেশাদার সংগীত জীবন শুরু করেছেন। সেই বছরের প্রতিযোগিতায় সা তিং তিং জনপ্রিয় সংগীত গ্রুপে রানার্স-আপ ও সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়কের পুরস্কার পান।
২০০৪ সাল সা তিং তিং তার প্রথম অ্যালবাম 'সৌন্দর্য' প্রকাশ করেন। এই অ্যালবামের সব গান ইলেকট্রনিক সংগীত। সে সময় তার এ ধরনের সংগীত শৈলী জনপ্রিয়তা পায়নি, অ্যালবামও জনপ্রিয় হয়নি। এরপর দুই বছর সা তিং তিং তার কণ্ঠ ও সংগীত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে উপযুক্ত সংগীত শৈলী খুঁজতে থাকেন। ২০০৭ সালে সা তিং তিং তার অ্যালবাম 'জীবন্ত' প্রকাশ করেন। এই অ্যালবামেই মূলত সা তিং তিংয়ের বিশেষ সংগীত শৈলী প্রকাশিত হয়।
সা তিং তিং এই অ্যালবামের গানের মাধ্যমে মানবজাতিসহ বিশ্বের সব জীবন ও প্রকৃতির প্রতি সম্মান দেখাতে চেয়েছেন। জীবন্ত অবস্থা একটি পবিত্র অবস্থা। এটা বুঝতে পেরে সাধারণ জীবনের টুকিটাকি বিষয়ে মনে শান্তি আসবে। বৌদ্ধধর্ম পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যে ব্যাপক পরিচিত একটি ধর্ম। তিনি বৌদ্ধধর্মের বিষয়ে তার মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তাই অ্যালবামের গানগুলোতে চীনা ভাষা, তিব্বতি ভাষা ও সংস্কৃত ভাষার গান শোনা যায়।
'জীবন্ত' অ্যালবামটি সফলভাবে চীনের জাতিগত সংগীত, সংস্কৃতি ও ধর্মের ধারনাকে একসঙ্গে করে সংগীতের একটি নতুন শৈলী উপহার দেয়। এই অ্যালবামের জন্য সা তিং তিং ২০০৭ সালে ব্রিটেনের বিশ্ব সংগীত অ্যাওয়ার্ডের 'এশিয়া-মহা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের' শ্রেষ্ঠ গায়ক পুরস্কার পান। তিনিও এই পুরস্কার পাওয়া প্রথম চীনা মানুষ। চীনেও এই অ্যালবাম অনেক পুরস্কার পায়। তখন থেকে সা তিং তিং-এর নাম অনেক লোক জানতে পারে।
সা তিং তিং জীবন, বিশ্ব, প্রকৃতি, মহাশূন্যের প্রতি তার চিন্তাধারা গানে প্রকাশ করেছেন, গানের মাধ্যমে চীনা জাতির সংগীতও প্রচার করেছেন। সা তিং তিংয়ের গান শুনলে তার এই বিশেষ সংগীত শৈলী ভোলা যায় না। পারফরমেন্সের সময় তার জামা-কাপড় ও মেকআপের বিশেষ নকশা সবার নজর কাড়ে। এক কথায় সা তিং তিংয়ের সংগীত শৈলী অতুলনীয়।