অর্থ-কড়ি: ১৪ এপ্রিল,২০১৮
  2018-04-14 16:35:10  cri


১. চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, তার দেশ মুক্ত বাণিজ্যকে সমর্থন দিয়ে যাবে এবং একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থার অন্যতম রক্ষক হিসেবে কাজ করবে। তিনি মঙ্গলবার হাইনানের বোআও-এ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন লাগার্দের সঙ্গে বৈঠকে এ-প্রতিশ্রুতি দেন।

এর আগে বোআও এশিয়া ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া মূল ভাষণেও একই প্রতিশ্রুতি দেন সি চিন পিং। ভাষণে তিনি বলেন, চীন বিভিন্ন বাণিজ্য-শুল্ক কমাবে এবং আমদানি বাড়াবে। তিনি বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য আরও ভালো বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির প্রতিশ্রুতিও দেন।

বোআও এশিয়া ফোরামে তার ইতিবাচক বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে চাঙ্গাভাব দেখা দেয়। সিএনএন মার্কিন শেয়ার বাজারের চাঙ্গাভাবের জন্য সি চিন পিংয়ের ইতিবাচক ভাষণকে কৃতিত্ব দিয়েছে।

২.মার্চে চীনের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বেড়েছে ৮৩৪ কোটি মার্কিন ডলার। ফলে মার্চের শেষে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত দাঁড়ায় ৩.১৪২৮ ট্রিলিয়ন (৩,১৪,২৮০ কো টি)মার্কিন ডলারে। চীনের গণব্যাংক গত রোববার এ-তথ্য জানায়। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার মজুত টানা বৃদ্ধির পর, গত ফেব্রুয়ারিতে খানিকটা কমেছিল।

এদিকে, মার্চে চীনের স্বর্ণের মজুত অপরিবর্তিত ছিল ৫ কোটি ৯২ লাখ আউন্সে। তবে, এই স্বর্ণের মূল্য যেখানে ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৭৮০৬ কোটি মার্কিন ডলার, সেখানে তা মার্চে বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮৪২ কোটি ডলারে।

৩. চীনে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে মোট বিদ্যুত উৎপাদন হয়েছে ১.৫৭ ট্রিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘন্টা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের এক পরিসংখ্যান থেকে এ-তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যান অনুসারে, উৎপাদিত বিদ্যুতের ৭০ শতাংশের বেশি এসেছে তাপবিদ্যুতকেন্দ্রগুলো থেকে। আর এ-সময় তাপবিদ্যুত, পানিবিদ্যুত, বায়ুবিদ্যুত, সৌরবিদ্যুত, ও পারমাণবিক বিদ্যুতের উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে যথাক্রমে ৮.৭, ২.৭, ৩৭.৯, ৫৮.৭, ও ১২.৭ শতাংশ করে।

৪. গত বছর চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ১৭০৫টি গ্রামকে দারিদ্র্যমুক্ত করা হয়েছে। দারিদ্যবিমোচন প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সালের শেষ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিব্বতে দুই লাখ ৬০ হাজার মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করা হয়।

২০১৭ সালে তিব্বতের শিল্প-উন্নয়নে ছয় কোটি ইউয়ান বরাদ্দ দেওয়া হয়। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ৪৩৩টি বসতি স্থাপন করা হয় এবং ১৭২০টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

৫. ভারতের দার্জিলিঙের চা বাগানগুলি কঠিন সময় পার করছে। দার্জিলিঙের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চায়ের অধিকাংশই বিদেশে রফতানি করা হয়। সাধারণত মওসুম শুরুর আগেই বাগানগুলির সঙ্গে আগাম চুক্তি করে বিদেশি সংস্থাগুলি। অথচ বেশির ভাগ আগাম চুক্তিই এখনও হয়নি। এক্ষেত্রে 'ধীরে চলো' নীতিতে চলছে অধিকাংশ বিদেশি সংস্থা।'

চা-বাগানগুলোর সমস্যা প্রাকৃতিক। তাপমাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে এখনও কম। বৃষ্টি যথেষ্ট হয়নি। বাগান বন্ধ থাকায় গাছগুলির উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ছাঁটলেও কোথাও কোথাও তা এখনও বেশি। সব মিলিয়ে ভাল মানের চায়ের উপযুক্ত পাতা সর্বত্র আসেনি। তাই রফতানি বাজারে চায়ের মান নিয়ে সংশয় আছে।

দাম নিয়েও সংশয় আছে। চা উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। উপরন্তু গত বছর আন্দোলনের জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিল। বাগান সাফ করতে লেগেছে বাড়তি অর্থ। কেন্দ্র ও রাজ্যের কাছে আবেদন জানালেও আর্থিক সাহায্য মেলেনি। এ-অবস্থায় বাজারে চায়ের জোগান প্রায় না-থাকায় দাম বাড়বে বলে আশা ছিল। কিন্তু বিদেশি ক্রেতারা বাড়তি দাম দিতে আগ্রহী নন।

৬. চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। স্থানীয় বাজারেও পাটপণ্য বিক্রি বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত নয় মাসে ৭৪ কোটি ১১ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৬৪ কোটি ৬৬ লাখ ডলার।

আলোচ্য সময়ে পাট ও পাটপণ্য রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। সে-হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ বেশি রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে পাটের সুতা ও দড়ি রফতানি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই উপখাত থেকে ৪৬ কোটি ৬১ লাখ ডালার রফতানি-আয় হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। কাঁচাপাট রফতানি করে আয় হয়েছে ১০ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আর পাটের বস্তা ও ব্যাগ রফতানি করে এই নয় মাসে আয় হয়েছে নয় কোটি ৮১ লাখ ডলার। এ ছাড়া, পাটের অন্যান্য পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে সাত কোটি ৬৭ লাখ ডলার। অবশ্য কাঁচাপাট, পাটের বস্তা ও ব্যাগ রফতানি থেকে আয় আগের বছরের চেয়ে কমেছে।

৭. বাজেট ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ সরকার চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ ধার করার লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি ঋণ নেওয়া হয়ে গেছে প্রথম আট মাসেই।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মোট ৫৩,৮৩২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪.২২ শতাংশ বেশি।

৮. চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৭৫২ ডলার হবে বলে প্রাক্কলন করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। সেই সঙ্গে এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাজেটের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে রেকর্ড ৭.৬৫ শতাংশ হবে বলে সরকার আশা করছে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধির এই হিসাব করেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর চূড়ান্ত হিসাবে গ ত অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.২৮ শতাংশ। আর গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ১৬১০ ডলার।

প্রায় এক দশক ৬ শতাংশের বৃত্তে 'আটকে' থাকার পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের 'ঘর' অতিক্রম করে। এরপর গত দুই অর্থবছর ধরেই প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলন অনুযায়ী চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার দাঁড়াবে প্রায় ২৭,৫০০ কোটি ডলারে। গত অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ২৪,৮৭৭ কোটি ডলার।

এদিকে, সরকারি হিসাবে চলতি অর্থবছর ৭.৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংস্থাটি। অর্থনীতি যে-গতিতে এগুচ্ছে তাতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে পারে বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। 'বাংলাদেশ ডেভপলমেন্ট আপডেট' শিরোনামে এক প্রতিবেদনে এ-দাবি করা হয়েছে সম্প্রতি।

৯. মার্চে ১৩০ কোটি চার লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা, যা এর আগের মাস ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১৫ কোটি ডলার বেশি এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। বছরের শুরু থেকেই ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী উদ্যোগের কারণে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে এক কোটি ১৩ লাখ ডলার এসেছে। এ ছাড়া, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এক কোটি ৩৮ লাখ ডলার এসেছে। ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৮ কোটি ২৫ লাখ মার্কিন ডলার, যা একক ব্যাংক হিসাবে সর্বোচ্চ।

১০. লোকসানে-থাকা বাংলাদেশের জাহাজ-নির্মাণ-শিল্পের সহায়তায় ব্যাংকঋণে সুদের হার ও ঋণ পরিশোধের মেয়াদে বড় ধরনের সুবিধা দিল সে-দেশের সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো আলাদা দুটি নির্দেশনা সংযুক্ত করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবু ফরাহ মো. নাছের স্বাক্ষরিত প্রজাপনটি দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) কাছে পাঠানো হয়েছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জাহাজ-নির্মাণ-শিল্পের জন্য বিনিয়োগকৃত মূলধনের বিপরীতে প্রদেয় উচ্চ সুদের হার কমানো ও দীর্ঘমেয়াদে পরিশোধের সুযোগ দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।

(আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040