আপনার কি মুখে ঘা বা ক্ষত হয়? অনেকেই এই সমস্যায় ভুগছেন। হ্যাঁ, খাওয়ার সময় সাবধান না-হলে মুখের ভিতরের মাংসপেশীতে কামড় লাগতে পারে। আর সে-কারণে ঘা হতে পারে। আবার অনেকে আছেন, মুখের ভিতরের মাংসপেশীতে দাঁতের কামড় লাগলেও তেমন একটা সমস্যা হয় না। দাঁতের কামড় লেগে যে-ঘা হয় তা একসময় আপনাআপনিই সেরে যায়। আবার মাংসপেশীতে কামড় না-লাগলেও ঘা হয়। কেন হয়? কীভাবে এ-থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে? আজকের 'জীবন যেমন' অনুষ্ঠানে আমরা এ-সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।
'মুখের ঘা' বলতে সাধারণত চিকিত্সকরা এমন ঘা-কে বোঝান যা নিয়মিত বিরতিতে মানুষকে আক্রমণ করে। এ-ধরনের ঘা মুখের যে-কোনো জায়গায় হতে পারে। আসুন জেনে নিই কেন এ-ধরনের ঘা মুখে হয়। মোটামুটি ৬টি কারণকে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা:
কারণ ১: বংশগতি ফ্যাক্টর
পিতামাতার যে-কোনো একজন বা দু'জনই যদি সহজে মুখের ঘা-এ আক্রান্ত হন, তবে তাদের সন্তানও একই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। অন্তত আশঙ্কা এক্ষেত্রে বেশি।
কারণ ২: অন্তঃস্রাবী (endocrine) ফ্যাক্টর
মেয়েরা এ-কারণে মুখের ঘা-এ আক্রান্ত হতে পারেন। সাধারণত মাসিকের আগে আগে এ-সমস্যা দেখা দেয়।
কারণ ৩. মানসিক ফ্যাক্টর
মানসিক চাপ বেশি থাকলে আপনি সহজেই মুখের ঘা সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।
কারণ ৪. খাদ্যগ্রহণে অনিয়ম
অনেক তরুণ-তরুণী সময়মতো খাবার খায় না। আবার ক্ষুধা পেলে হাতের কাছে যা পায় তা-ই খায়। এ-কারণে তাদের শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব দেখা দেয়; বিশেষ করে ভিটামিন বি-২। ভিটামিন বি-২-সমৃদ্ধ খাবার যেমন: শিমজাতীয় খাবার, ডিম ও দুধ ইত্যাদি নিয়মিত খেলে মুখের ঘা হবার কথা নয়। ফল ও শাক-সবজিতে ভিটামিন বেশি থাকে; এগুলো খাওয়ার চেষ্টাও করুন। খাওয়া-দাওয়ার তালিকায় ভারসাম্য থাকা দরকার এবং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ ৫. ধূমপান ও মদ্যপান
অনেকেই ধূমপান ত্যাগ করার পর মুখের ঘা সমস্যায় ভুগছেন। এই সমস্যা স্বাভাবিক। সময়ে ঠিক হয়ে যাবে। যারা মদ্যপান করেন, তাদের শরীরে ভিটামিন-বি-এর অভাব দেখা দেয়। ফলে তাঁরা সহজেই মুখের ঘা-এ আক্রান্ত হতে পারেন। সুতরাং, মদ্যপান পরিত্যাগ করুন। ভালো খাদ্যাভ্যাস সুখী জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ ৬. রাত জাগা বা যথেষ্ট ঘুম না-হওয়া
আধুনিক জীবনে আমরা প্রায় সবাই ব্যস্ত। দিনে অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে, অনেকে রাতে বিনোদনের জন্য বেশি সময় ব্যয় করেন। এতে রাত-জাগা বেশি হয় এবং ঘুম কম হয়। এভাবে চলতে থাকলে যে-কেউ যে-কোনো সময় অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। যারা অতিরিক্ত রাত জাগেন বা যাদের পর্যাপ্ত ঘুম হয় না, তারা সহজে মুখের ঘা-এ আক্রান্ত হতে পারেন।
মুখের ঘা কেন হয় এ-সম্পর্কে আমরা মোটামুটি জানলাম। আসলে মুখের ঘা-এর আরও কারণ থাকতে পারে। যেমন, মুখের অন্যান্য সমস্যা, শরীরে ট্রেস উপাদানের অভাব, হজমের সমস্যা, রোগ-প্রতিরোধকক্ষমতা কমে যাওয়া, অন্য রোগের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি। সুতরাং, মুখের ঘা এড়াতে আমাদের যথাসাধ্য সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এখন এই সমস্যার সমাধানের উপায় নিয়ে কিছু বলব।
উপায় ১. ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করা
মুখের ঘা হলে, ঠিক যেখানে ঘা হয়েছে সেখানে ভেষজ ওষুধ লাগাতে পারেন। এতে দ্রুত ঘা ভালো হবে এবং ব্যথা কমবে। চীনারা এক ধরনের ভেষজ ওষুধ এ-ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন, যার মূল উপাদান হচ্ছে তরমুজ।
উপায় ২. অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ
মুখের ঘা হলে সাধারণত ভিটামিন-বি খেতে দেন ডাক্তাররা। তেমন একটা ওষুধ বাংলাদেশে প্রচলিত ছিল যার নাম রিবোফ্লাবিন। হলুদ রঙের এই ট্যাবলেটটি কার্যকর। ট্যাবলেটটির নাম অবশ্য বর্তমানে বদলে গেছে; হয়েছে 'রিবোজন'। নাম বদলালেও, এখন সেটি আগের মতো কার্যকর। তা ছাড়া, একধরনের রাসায়নিক তরল দিয়ে কুলকুচি করেও উপকার পেতে পারেন। এসব ওষুধ সহজেই বাজারে পাওয়া যায়।
তবে একটা কথা মনে রাখবেন, যদি মুখের ঘা এক মাসের মধ্যে কয়েকবার হয়, অথবা ঘা মুখের অনেকটা জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, বা মুখের ঘা দু'সপ্তাহের মধ্যে নিজে নিজেই সেরে না-যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিত্সকের শরণাপন্ন হতে হবে।
(ওয়াং হাইমান/আলিম)