নিজের জীবনের মত পরিবেশ সুরক্ষার ওপর গুরত্ব দেয়া
  2018-04-03 10:55:09  cri


গতকাল (সোমবার) সকালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং রাজধানী বেইজিংয়ে স্বেচ্ছায় বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচীর এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশকে সবুজ করে তুলতে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করতে হবে। নিজের জীবনের মত পরিবেশ সুরক্ষার ওপর গুরত্ব দেয়া উচিত। মাতৃভূমিতে সবুজায়নের অভিযান চালাতে প্রত্যেকের চেষ্টা চালানো উচিত্।

আজকের টপিক অনুষ্ঠানে চীনের পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রমের ওপর আমরা আলোকপাত করব।

সোমবারের অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সি আরও বলেন, বৃক্ষ রোপণ হলো চীনা জাতির সুঐতিহ্য। বর্তমানে আমরা এখানে যে বৃক্ষ রোপণ করছি তা বিধিবদ্ধ কর্তব্য পালন করা ছাড়াও, সুন্দর চীন প্রতিষ্ঠা, প্রাকৃতিক সভ্যতার নির্মাণ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং জনগণের জীবিকার উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট অভিযান। মাতৃভূমিতে সবুজায়নের অভিযান চালালে এর পরিসংখ্যানের ওপর গুরুত্বারোপ করার সঙ্গে সঙ্গে এর গুণগত মানের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত্ বলে প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন।

তিনি আরো বলেন, একদিকে আমাদের পরিবেশ সুন্দর করে তোলা উচিত্, অন্যদিকে এই পরিবেশে জনগণের সুখ-শান্তিতে বাস করা নিশ্চিত করা উচিত্। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে বৃক্ষ রোপণ করা এবং মনোযোগ দিয়ে সবুজায়ন প্রকল্প চালু করা উচিত্ বলে প্রেসিডেন্ট সি উল্লেখ করেন।

যদিও সম্প্রতি বেইজিংয়ে আবহাওয়া ভাল নয়, ধোঁয়াশা কয়েক দিনের মত থাকছে। আসলে চীন পরিবেশ সুরক্ষার অনেক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি চীনের আবহাওয়া ব্যুরোর প্রকাশিত '২০১৭ সালের বায়ুমণ্ডল ও আবহওয়া প্রতিবেদন'এ বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে চীনে ৬ বার বড় আকারের ঘন কুয়াশা, ৯ বার বালিকণাময় আবহাওয়া দেখা গেছে, যা আগের বছরের চেয়ে কম। উপাত্ত থেকে দেখা যায় দেশের বায়ুর মানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে দেশের গড়পড়তা ঘন কুয়াশার দিন ছিল ২৭.৫টি। যা ২০১৬ সালের তুলনায় ১০.৫ দিন কম এবং ২০১৩ সালের তুলনায় ১৯.৪ দিন কম। বিশেষ করে ২০১৩ সালে চীনে বায়ু দূষণ প্রতিরোধ কার্যক্রম চালু হওয়ার পর দেশের বাতাসের মান উন্নত হতে শুরু করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিংয়ের বায়ুর গুণগতমানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ২০১৭ সালে বেইজিংয়ের বাতাসে অন্যতম দূষক পিএম ২.৫'র গড় ঘনত্ব ছিল প্রতি ঘন মিটারে ৫৮ মাইক্রো গ্রাম, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ কম।

বেইজিং পরিবেশ সুরক্ষা তত্ত্বাবধান কেন্দ্রের উপ মহাপরিচালক লিউ পাও সিয়ান জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে বেইজিং শহরের পিএম ২.৫সহ চারটি প্রধান দূষণ উপাদান আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। এর মধ্যে পিএম ২.৫'র গড় ঘনত্ব প্রতি ঘন মিটারে ৫৮ মাইক্রোগ্রাম। দেশের 'বায়ু দূষণ প্রতিরোধ কার্যক্রমের' নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়িত হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে বেইজিংয়ের পিএম ২.৫'র গড় ঘনত্ব ছিল প্রতি ঘন মিটারে ৫৮ মাইক্রোগ্রাম, যা আগের বছরের তুলনায় ২০.৫ শতাংশ কম। অন্য তিনটি প্রধান দূষণ উপাদান হল : কার্বন ডাই-অক্সাইড, পিএম ১০, নাইট্রোজেন অক্সাইড; বেইজিংয়ের বাতাসে যাদের পরিমাণ ছিল গত বছরের তুলনায় যথাক্রমে ২০ শতাংশ, ৮.৭ শতাংশ ও ৪.২ শতাংশ কম।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বেইজিংয়ে বায়ু প্রমিত মানদন্ডে পৌঁছানো দিনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বেড়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ সালে বায়ুর প্রমিত মানদন্ডে পৌঁছানো দিনের সংখ্যা ১৭৬টি, যা বছরের মোট দিনের ৪৮.২ শতাংশ। ২০১৭ সালে পুরো বছরে ২২৬ দিন বায়ু প্রমিত মানদন্ডে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে, যা বছরের মোট দিনের ৬২.১ শতাংশ।

বেইজিং পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরোর বায়ু পরিবেশ পরিচালনা বিভাগের প্রধান লি সিয়াং বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিংয়ের জ্বালানী কাঠামো, শিল্পের কাঠামো, যোগাযোগ কাঠামো সুসংহত করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বায়ু দূষণ প্রতিরোধ কাজ করা হয়েছে। গত বছর পরিচ্ছন্ন জ্বালানীর সংস্কার, গ্রামে কয়লা ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া, বেইজিং কর্তৃপক্ষ কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ, পরিবেশ বান্ধব প্রতিষ্ঠান বা কর্মকাণ্ডকে অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্রদান এবং পরিবেশ সুরক্ষার মানদন্ড প্রণয়ন করাসহ বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে বায়ু দূষণ প্রতিরোধ পরিচালনার মান সার্বিকভাবে উন্নতি করেছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে বেইজিং শহর কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে পিএম ২.৫ দূষণমুক্তকরণে প্রচেষ্টা চালাবে। আইন, অর্থনীতি, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে দূষণকারী পদার্থের নির্গমন কমানোর কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে। যার মাধ্যমে ২০২০ সালে বেইজিং শহরের পিএম ২.৫ এর গড় ঘনত্ব প্রতি ঘন মিটারে ৫৬ মাইক্রোগ্রামে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি চীনের পরিবেশ সংরক্ষণ মন্ত্রণালয় জানায়, বিগত ৫ বছরে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চীনের বায়ুদূষণ প্রতিরোধ কার্যক্রম সুস্পষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে, দেশের বায়ুর গুণগতমান ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে। সেইসঙ্গে 'বায়ুদূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম' লক্ষ্যমাত্রা সার্বিকভাবে বাস্তবায়িত হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

২০১৩ সালে চীনে 'বায়ুদূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম' প্রকাশিত হয়। এটি বায়ুদূষণ প্রতিরোধে একটি মাইলফলক। গত ৫ বছরে দূষণমুক্ত জ্বালানির ব্যবহার বাস্তবায়ন, কয়লা ব্যবহারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ, সিমেন্ট ও রাসায়নিক পদার্থসংশ্লিষ্ট শিল্প রূপান্তরের মাধ্যমে বায়ুর মান উন্নত করা হয়েছে। চীনের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন শহরে পিএম১০ আগের চেয়ে ২০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস হয়েছে এবং বেইজিংয়ের আশেপাশে, ইয়াংসি নদীর ব-দ্বীপ এলাকা ও চুচিয়াং নদীর ব-দ্বীপ এলাকায় পিএম২.৫ পরিমাণ যথাক্রমে ৩৯.৬, ৩৪.৩ ও ২৭.৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

কিছু এলাকায় বিশেষ সময়ে গুরুতর বায়ুদুষণ দেখা দিলেও দূষণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা রয়েছে। ভবিষ্যতে 'নীল আকাশ রক্ষা যুদ্ধে' তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে, যাতে আরো কার্যকরভাবে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

চলতি বছরের পয়লা জানুয়ারি থেকে চীনের পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক কর আইনের বিধি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। জানা গেছে, ২৫ ডিসেম্বর চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির ২৫তম অধিবেশনে এ আইন গৃহীত হয়, যা পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ কমাতে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হয়। এ আইন সুষ্ঠুভাবে চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে, তাতে কর সংগ্রহকারী, কর হিসাব পদ্ধতি, কর সংগ্রহের প্রশাসন নিয়ে বিস্তারিত নিয়ম প্রণয়ন করা হয়েছে। (ছাই/মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040