যুক্তরাষ্ট্রের ১২৮ টি পণ্য থেকে শুল্ক সুবিধা প্রত্যাহার করে নিয়েছে চীন
  2018-04-02 14:55:23  cri


চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় আজ (সোমবার) থেকে চীনের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের ১২৮টি পণ্যে বানিজ্য সুবিধা স্থগিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে দেশটির অন্যতম রপ্তানি পণ্য শুকরের মাংস ও এ সংশ্লিষ্ট পণ্য। এর আগে গত ২২ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর বৃহদাকার শুল্ক আরোপ এবং চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ সীমিত করার ঘোষণা দেন। শ্রোতা বন্ধুরা, আজকের টপিক অনুষ্ঠানে আজ এ সংক্রান্ত একটি আলোচনা শুনবেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২২ মার্চ চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর বৃহদাকার শুল্ক আরোপ এবং চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ সীমিত করা একটি মেমোতে স্বাক্ষর করেন।

মেমো স্বাক্ষর করার আগে সাংবাদিকদেরকে ট্রাম্প বলেন, চীনা পণ্য সংশ্লিষ্ট শুল্ক ৬০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। তিনি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়কে ১৫ দিনের মধ্যে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক সংগ্রহের বিষয় নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে চীনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। এছাড়াও মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় ৬০ দিনের মধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ সীমিত করার পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে বলে ট্রাম্প জানান।

এর জবাবে চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, চীন নিজের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ হানি অনুমোদন করবে না। চীন অবশ্যই প্রয়োজনীয় যেকোন ব্যবস্থা নিয়ে নিজের স্বার্থ সুরক্ষা করবে।

একই দিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা দূতাবাসের প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মার্কিন সরকারের একতরফা বাণিজ্য সংরক্ষণবাদী সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীন-মার্কিন আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্কের পারস্পরিক উপকারিতা আর অভিন্ন স্বার্থ অর্জনের বাস্তবতা,পরামর্শ ও সংলাপের মাধ্যমে মতভেদ সমাধানে মতৈক্য আর বিভিন্ন পক্ষের যুক্তিযুক্ত আহ্বান উপেক্ষা করে তথাকথিত '৩০১ তদন্ত' চালু এবং সংশ্লিষ্ট বিচার ঘোষণা করা একতরফা বাণিজ্য সংরক্ষণবাদী আচরণ। চীন এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতার নীতিতে চীন-মার্কিন আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিভিন্ন ইস্যুতে ব্যাপক যুক্তিযুক্ত প্রস্তাব পেশ করেছে বেইজিং। বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না চীন,তবে তার ভয়ও করবে না। যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার আস্থা ও দক্ষতা রয়েছে চীনের। মার্কিন সরকার এমন যুদ্ধ করতে চাইলে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে নিজের বৈধ অধিকার নিশ্চিত করবে বেইজিং।

মার্কিন সরকারের এ সিদ্ধান্ত যেন পাথর দিয়ে নিজের পায়ে আঘাত করা, তা মার্কিন ক্রেতা, কোম্পানি ও অর্থ বাজারের স্বার্থ হানি করবে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শৃঙ্খলা ও বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে উল্লেখ্ করা হয়েছে বিবৃতিতে।

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং ২৭ মার্চ বেইজিংয়ে মার্কিন সিনেটর স্টিভ ডেইন্সের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠককালে বলেন, 'বাণিজ্য-যুদ্ধ' সমস্যার সমাধান করে না; সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমেই মতভেদ দূর হতে পারে। তিনি বলেন, চীন আশা করে, যুক্তরাষ্ট্র বাস্তববাদী ও বিবেকবান মনোভাব নিয়ে চীনের সঙ্গে যৌথভাবে বাণিজ্যিক-বিরোধ নিরসনে প্রচেষ্টা চালাবে।লি খ্য ছিয়াং বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর, চীন-মার্কিন সম্পর্কে একাধিকবার সমস্যা দেখা দিলেও, তা দু'পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়। তা ছাড়া, দু'দেশের নেতৃবৃন্দ সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাসম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্যেও পৌঁছান। এখন আশা করা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কংগ্রেস ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে, দু'দেশের সম্পর্কের ভিত্তি রক্ষায় সচেষ্ট হবে।

লি খ্য ছিয়াং আরও বলেন, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দু'দেশ পরস্পরের পরিপূরক। দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতাও আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে, পাশাপাশি কিছু বিষয়ে মতভেদ ও অসন্তোষও আছে। এই মতভেদ দূর করতে সময় লাগবে।

জবাবে স্টিভ ডেইন্স বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কগুলোর অন্যতম। দু'দেশের মধ্যে বিরোধ কাম্য নয়। মার্কিন কংগ্রেস কল্যাণমূলক সহযোগিতার মাধ্যমে বাণিজ্যিক-বিরোধ দূর করতে আগ্রহ। এতেই দু'দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ রয়েছে।

এদিকে, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাও ফেং ২৯ মার্চ বেইজিংয়ে নিয়মিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ৬০০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে বহুপক্ষীয় নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে, যা বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য হুমকি।

কাও ফেং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড খুব খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে এবং বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থা উপেক্ষা করেছে। একই সঙ্গে এ কর্মকাণ্ডের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ মালামাল ও ভোগ্যপণ্যের দামও বৃদ্ধি পাবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রক্রিয়াজাত শিল্প ও ভোক্তাদের ওপর কুপ্রভাব ফেলবে।

কাও ফেং আরও বলেন, চীন কখনওই 'বাণিজ্যিক সংঘাতে' জাড়াবে না এবং নিজের বৈধ স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

ইতিহাস বলে চীন সব সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের বানিজ্য রোষ মোকাবেলা করে আসছে। গত শতাব্দীর নব্বই এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে '৩০১ তদন্ত' করেছিল। এটি যথাক্রমে ১৯৯১, ১৯৯৪ এবং ১৯৯৬ সালে পরিচালিত হয়। চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অংশ নেয়ার পর ২০১০ সালের অক্টোবরে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি কায়লয় মার্কিন ইস্পাত শ্রমিক ফেডারেশনের আবেদন অনুযায়ী চীন সরকারের ধারাবাহিক নতুন সম্পদ জ্বালানী নীতি ও ব্যবস্থা নিয়ে তদন্ত করার কথা ঘোষণা করেছিল।

২০১১ সালের ৩ অক্টোবরে মার্কিন সিনেট চীন এর দৃঢ় বিরোধীতার চিন্তা না করে '২০১১ সালে মুদ্রা ও বিনিময় হার তত্ত্বাবধান সংস্কার খসড়া' গৃহীত হয়। এর মাধ্যমে দু'দেশের মুদ্রা বিনিময়ের হারের সমস্যায় আরেক ধাপ গুরুতর অবনতি হয়। যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সংরক্ষণবাদের ব্যবস্থা নেয়ার তত্পরতা গভীরভাবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম লঙ্খন করেছিল।

ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে নিযুক্ত হওয়ার পর চীনের বিরুদ্ধে ডাম্পিং-বিরোধী ও ভর্তুকি-বিরোধী রীতিবিরুদ্ধ বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক তদন্ত করতে থাকেন। পাশাপাশি বাণিজ্য আইন ব্যবহার করে চীনের বিরুদ্ধে '৩৩৭, ৩০১ ও ২০১' তদন্ত করতে থাকেন তিনি। দু'দেশের বাণিজ্য যুদ্ধের সংকট কখনো দূর করা হয়নি।

(ছাই/মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040