স্বাধীনতার ঠিক আগের দিন ২৫ মার্চের কালরাত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত বাঙালির ওপর। হত্যা করা হয় হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে। গণহত্যার ভয়াল সেই রাতের স্মরণে রাজধানীসহ সারাদেশে এক মিনিটের জন্য আলো নিভিয়ে প্রতীকী ব্ল্যাকআউট পালন করা হয়। আলোর মিছিল ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলনসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শপথ নেয়া হয় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার।
গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে আলোচনা সভার আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য বিএনপি-জামাতের সমালোচনা করেন।
একই দিন আওয়ামী লীগ আয়োজিত গণহত্যা দিবসের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে একাত্তরের গণহত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি তাদের মদদদাতাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
দেশের জন্য অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একই দিন ১৮ গুণীজনের হাতে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় জীবনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ৭টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তিত্বরা হলেন: স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে কাজী জাকির হাসান (মরণোত্তর), শহীদ বুদ্ধিজীবী এস এম এ রাশিদুল হাসান (মরণোত্তর), শংকর গোবিন্দ চৌধুরী (মরণোত্তর), এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ, এম আব্দুর রহিম (মরণোত্তর), ভূপতি ভূষণ চৌধুরী ওরফে মানিক চৌধুরী (মরণোত্তর), শহীদ লেফটেন্যান্ট মোঃ আনোয়ারুল আজিম (মরণোত্তর), হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী (মরণোত্তর), শহীদ আমানুল্লাহ মোঃ আসাদুজ্জামান (মরণোত্তর), শহীদ মতিউর রহমান মল্লিক (মরণোত্তর), শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক (মরণোত্তর) ও আমজাদুল হক। এছাড়া চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক ডা. এ কে এমডি আহসান আলী, সমাজসেবায় এ কে আজাদ খান, সাহিত্যে সেলিনা হোসেন, খাদ্য নিরাপত্তায় ড. মোঃ আব্দুল মজিদ, কৃষি সাংবাদিকতায় সাইখ সিরাজ ও সংস্কৃতিতে আসাদুজ্জামান নূর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন।
পুরস্কার প্রাপ্ত গুণীজনদের হাতে সম্মাননা তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জন্য অবদান রাখা ব্যক্তিদের সম্মান জানাতে হয়। তাদে জীবন ও কর্ম নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়াই তার সরকারের লক্ষ্য বলে জানান শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ সাড়ে তিন বছরে স্বল্পোন্নত হয়েছিল এবং ৪৩ বছর পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাবার গৌরব অর্জন করেছে বলে জানান সরকার প্রধান। দেশের যে অগ্রগতি সূচিত হয়েছে তা ধরে রাখতে হবে বলেও এ সময় জানান প্রধানমন্ত্রী।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্রদ্ধা জানান মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও সর্বস্তরের মানুষ।
স্বাধীনতা দিবসে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশুসমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় শিশুকিশোর সমাবেশে লাখো কণ্ঠে গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বীরত্বগাঁথার ইতিহাস তুলে ধরে শিশুকিশোরদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো কাছে মাথা নুইয়ে নয়, বাঙালি জাতি মর্যাদার সঙ্গে চলবে বিশ্বের দরবারে। বিজয়ী জাতির উত্তরসুরি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে শিশুকিশোরদের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সব কিছু মিলিয়ে এবারের স্বাধীনতা দিবস একটি উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পালন করেছে গোটা জাতি। দেশের সকল মানুষ দৃঢ় প্রত্যয়ে এ অগ্রযাত্রায় শামিল হবে- এমনটা প্রত্যাশা সকল মহলে।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।