সাহিত্য ও সংস্কৃতি--০৩২৭
  2018-03-27 15:55:36  cri

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে চলতি বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারজয়ী এবং তাদের স্বজনদের হাতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরষ্কার তুলে দেন।

যে ১৮ জন এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন তাদের মধ্যে দশজননকেই মরণোত্তর এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

এ বছরের পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, মতিউর রহমান মল্লিক, সার্জেন্ট জহরুল হক, সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী এম এম এ রাশীদুল হাসান, সাবেক সাংসদ শংকর গোবিন্দ চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক সাংসদ এম আব্দুর রহিম, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি ভূপতি ভূষণ চৌধুরী, শহীদ লেফটেন্যান্ট মো. আনোয়ারুল আজিম ও কাজী জাকির হাসান, সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ বীর উত্তম ও সাবেক কূটনীতিক আমজাদুল হক।

চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক ডা. এ কে এমডি আহসান আলী, সমাজসেবায় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, সাহিত্যে সেলিনা হোসেন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় ড. মো. আব্দুল মজিদ, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং কৃষি সাংবাদিকতায় চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজকে এবার স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

শহীদ আসাদ, মতিউর ও জহরুল হকের রক্তে বেগবান হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম।

১৯৬৯ সালে ২০ জানুয়ারি ১১ দফার পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে ছাত্র সমাবেশ থেকে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে মিছিল বের হয়। মিছিলটি মেডিকেল কলেজ পেরিয়ে যখন চানখারপুল অতিক্রম করছিলো, তখন পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, যাকে এ বাংলাদেশের মানুষ আসাদ নামেই মনে রেখেছে।

আসাদ হত্যার প্রতিবাদে পরদিন ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়। আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে লাখো জনতা মৌন মিছিলে অংশ নেয়।

পরে পাকিস্তানের তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের নামফলক সরিয়ে জনতা বিভিন্ন স্থানে আসাদের নামে নামফলক স্থাপন করে। আসাদের মৃত্যু আইয়ুববিরোধী আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে। চার দিনের মাথায় ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সচিবালয়ের সামনে আইয়ুববিরোধী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিলে তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী ইপিআরের গুলিতে নিহত হন নব কুমার ইন্সটিটিউটের ছাত্র মতিউর রহমান।

মতিউরের মৃত্যুতে আন্দোলন আরও ব্যাপকতা লাভ করে। দুই মাসের মধ্যে আইয়ুব খানের এক দশকের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে।

সেই কিশোর মতিউরই শহীদ মতিউর রহমান মল্লিক।

জহরুল হক ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দিয়ে এক সময় পদোন্নতি পেয়ে সার্জেন্ট হন। বাহিনীতে থেকেও সে সময় যারা ভেতরে ভেতরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সার্জেন্ট জহরুল হক তাদেরই একজন।

সেই সন্দেহ থেকেই ১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে জহরুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাকেও আসামি করা হয়।

আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই ঢাকা সেনানিবাসে বন্দি অবস্থায় ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জহুরুল হককে গুলি ও বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে পাকিস্তানিরা। পরে প্রবল গণআন্দোলনে আইয়ুব খানের সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। পুরস্কারজয়ী প্রত্যেকে পেয়েছেন ১৮ ক্যারেট মানের পঞ্চাশ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, তিন লাখ টাকার চেক ও একটি সম্মাননাপত্র।

শ্রোতা বন্ধুরা, কনসার্ট ফর বাংলাদেশ খ্যাত প্রতিভাবান সঙ্গীত শিল্পী জর্জ হ্যারিসন। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারের ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের ১ কোটি শরণার্থীর জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আয়োজিত সেই কনসার্টের পর বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে বাংলাদেশীদের উপর পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর অত্যাচারের ঘটনা। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা জর্জ হ্যারিসনের সংক্ষিপ্ত জীবনী আপনাদেরকে জানাব।

জর্জ হ্যারিসন ১৯৪৩ ( উনিশশ তেতাল্লিশ) সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ইংল্যাণ্ডের ল্যাংকশায়ারের লিভারপুলে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবার নাম হ্যারল্ড হার্গ্রিস হ্যারিসন ও মা লুইসে। তার বাবা ছিলেন পরিবহন বাসের সহকারী আর মা একটি দোকানে কাজ করতেন। তিনি মা বাবার চতুর্থ এবং ছোট সন্তান।

হ্যারিসন পেনি লেনের কাছে ডাভডেল প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। তারপর ১৯৫৯ (উনিশশ উনষাট) সালে লিভারপুল ইন্সটিটিউট ফর বয়েজে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত হ্যারিসন এই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেন।

লিভারপুল ইন্সটিটিউটে অধ্যায়ন কালেই 'স্কিফ' নামে একটি ব্যান্ডের দলে যোগ দেন। তখন হ্যারিসনের বয়স অল্প থাকায় সেই দলে নিয়মিত হতে পারেননি।

পরবর্তীতে তাঁর গিটার বাজানোর দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে লেলোন তাকে 'দ্যা কোয়ারিমেন' ব্যান্ডে অন্তর্ভুক্ত করেন। জীবিকার তাগিদে ১৯৫৯ সালে হ্যারিসন ব্লাকারস নামে একটি স্থানীয় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরেও কয়েক মাস কাজ করেন।

১৯৬৬ সালে লন্ডনে ভারতীয় সেতার বাদক পণ্ডিত রবি শঙ্করের সাথে পরিচয় হয় হ্যারিসনের। এরপর তিনি ভারতে এসে গান গাওয়া শুরু করেন। রবি শঙ্করের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হ্যারিসন পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সাথে ভারতীয় সঙ্গীতের মিশ্রণ ঘটান।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় রবি শঙ্কর স্বাধীনতা যুদ্ধের শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে ভারতবর্ষ ও পাশ্চাত্যের অনেক বিখ্যাত শিল্পীকে একত্রিত করেন। তাঁর মধ্যে জর্জ হ্যারিসন ছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালে পহেলা অগাস্ট জর্জ হ্যারিসনকে সঙ্গে নিয়ে রবি শঙ্কর নিউইয়র্ক ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' নামে কনসার্ট আয়োজন করেন।

এই কনসার্টে প্রায় ৪০ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিল। কনসার্ট থেকে পাওয়া অর্থ বাংলাদেশি শরণার্থী ও যুদ্ধে বিপর্যস্ত মানুষদের কল্যাণের জন্য দেওয়া হয়েছিল।

জর্জ হ্যারিসন ২০০১ সালে ৫৮ বছর বয়সে ক্যান্সারে ভুগে মারা যান।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040