0321
|
প্রথমে আমরা ইয়াং ছাং ছিন নামে একজন মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দেব।
মার্চ মাস, দেশের নানা জায়গা থেকে জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রায় ৩ হাজার প্রতিনিধি বেইজিংয়ে এসে ত্রয়োদশ অধিবেশনে অংশ নেন। ৫ মার্চ সকাল ৮টা, এবার জাতীয় গণকংগ্রেসে প্রথমবারের মতো চালু হয় প্রতিনিধি করিডোর। এই করিডোরে প্রতিনিধিরা সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা বলেন। তাদের অনুভূতি, প্রতিবেদন প্রকাশ করেন এবং সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রতিনিধি, ছি সুই শহরের তাই থুং উপজেলার মিন জু গ্রামের বাসিন্দা ইয়াং ছাং ছিন দেশ-বিদেশের সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন কুই চৌ প্রদেশের উন্নয়নের গল্প। তিনি বলেন (রে)
'আমি ছি সুই নদীর তীরে একটি সংখ্যালঘু জাতির গ্রাম থেকে এসেছি। আমার বয়স বেশী নয় তবে ছি সুইর দারিদ্র্য বিমোচনের কঠিন যুদ্ধে আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা আছে এবং আমিও এ প্রক্রিয়ার একজন সুবিধাভোগী। আমি দশ বছরের মতো বাঁশ বয়ন করি এবং একজন শিক্ষানবিশ থেকে পরিণত হই ছি সুই বাঁশ বয়নের শিল্প কারখানার মালিকে। ছি সুই বাঁশ বয়ন কুই চৌ প্রদেশের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
৫ মার্চ ত্রয়োদশ জাতীয় গণকংগ্রসের প্রথম অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে ইয়াং ছাং ছিন প্রতিনিধি করিডোরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের কাছে নিজের পরিচয় দেন। ২৮ বছর বয়সি ইয়াং ছাং ছিন মিয়াও জাতির ঐতিহ্যিক কাপড় পরে আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গীতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। নিজ শহরের উন্নয়ন নিয়ে ইয়াং ছাং ছিন হাতে বাঁশের তৈরি কাপ তুলে ধরে বলেন (রে)
"আমার এ কাপ দেখুন। এ কাপের মাধ্যমে আমি ও আমার গ্রামের কৃষকরা দারিদ্র্যমুক্তি বাস্তবায়ন করেছি। আমরা স্থানীয় বাঁশ দিয় ২০টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করি বাঁশের এ কাপ সেট। প্রশিক্ষণ নিলে যে কোন একজন কৃষক এমন কাজ করতে পারেন। এমন একটি হস্তশিল্পজাত পণ্য তৈরি করলে আমরা ১০০ ইউয়ান আয় করতে পারি। এখন আমার গ্রামের ৮০ শতাংশ মানুষ সুন্দর ভিলায় বসবাস করে এবং ৬০ শতাংশ মানুষের নিজের গাড়ি আছে।
ইয়াং ছাং ছিনের জন্মস্থান, ছি সুই হল কুই চৌ প্রদেশের প্রথম জাতীয় পর্যটন এলাকা। ছি সুইর অনেক কৃষক পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে দারিদ্রমুক্ত হয়েছেন। ইয়াং ছাং ছিনের নেতৃত্বে, ছি সুই বাঁশ বয়ন একটি উচ্চতর পর্যটন হস্তশিল্পজাত পণ্যে পরিণত হয়েছে। ২০১৭ সালে ছি সুই কুই চৌ প্রদেশের দারিদ্র্যমুক্ত হওয়া প্রথম জেলা। ইয়াং ছাং ছিন বলেন "আমি বিশ্বাস করি আরও বেশি পর্যটক ছি সুইতে আসলে আমাদের বাঁশ হস্তশিল্পজাত পণ্য আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং আরও বেশি মানুষ অর্থ আয় করতে পারবে।
মহা গণভবনে ইয়াং ছাং ছিন ও তাঁর বাঁশ কাপ দেশ-বিদেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে,পাশাপাপি বেইজিং থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে ইয়াং ছাং ছিনের গ্রামে সবাই টেলিভিশনের সামনে বসে তাঁর সঙ্গে এ গর্বিত মুহূর্ত উপভোগ করেন। ২৫ বছর বয়সী ইয়াং কুয়াং রং ইয়াং ছাং ছিনের একজন ছাত্রী, তিনি তাঁর ফোনে টিভিতে তাঁর শিক্ষকের সাক্ষাৎকারের ভিডিও ধারণ করেন। তিনি বলেন 'আমার খুব আবেগপ্রবণ লাগছে। আমি ভাবছি তিনি ছি সুই ও কুই চৌর পক্ষ থেকে মহা গণভবনে যান এবং বিশ্বের সামনে আমাদের ঐতিহ্য প্রদর্শন করছেন। আমার গর্ব হচ্ছে। আমি আরও ভালভাবে বাঁশ বয়ন করব, আমার শিক্ষকের মতো।
গ্রামের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক ওয়াং ইউয়ান চিয়াং সাংবাদিকদের জানান, গেল কয়েক বছরে, ইয়াং ছাং ছিন ঐতিহ্যিক বাঁশ বয়ন উন্নয়ন করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে গ্রামের ৩০০ জনের বেশি নারী বাঁশ বয়ন শিখে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন। তিনি বলেন "আমাদের গ্রামের সবাই ইয়াং ছাং ছিনের জন্য গৌরব বোধ করেন। তাঁর উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে বাঁশ বয়ন প্রশিক্ষণ এবং এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একদিকে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি হয়েছে অন্য দিকে আমাদের ঐতিহ্যও রক্ষা হচ্ছে।
☆
৬০ মিটার উচু লোহার টাওয়ারে দশ মিটার দীর্ঘ অন্তরক চেইনের ওপর চলা অতি উচ্চ শক্তির বিদ্যুত্ সঞ্চালন লাইন স্থাপন এবং দেখা শোনা করা UVA মিস্ত্রীর কাজ এবং এ কাজ এতদিন একমাত্র পুরুষরাই করতেন। তবে এখন এক দল তরুণ মেয়ে এ রেড লাইন অতিক্রম করেছেন এবং বিশ্বের বিরল নারী UVA বিদ্যুত্-মিস্ত্রী হয়েছেন।
সিলিনহট জাতীয় গ্রিড সঞ্চালন কেন্দ্রের নারী UVA বিদ্যুত্-মিস্ত্রী দল গঠিত হয় ২০১৬ সালের অগাস্ট মাসে। গত শতাব্দীর ৯০ দশকে জন্মগ্রহনকারী ১০ জন মেয়ে এ দলের সদস্য। তাঁরা ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ ৫০০ কিলোত্তয়াট অতি উচ্চ ভোল্টেজ পাওয়ার লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ করেন। সারা লাইন একবার পরীক্ষা করতে ১০দিন সময় লাগে। যদি আবহাওয়া ভাল না থাকে তাহলে আরও সময় লাগে।
২৪ বছর বয়সি ওয়াং হুই মেই এ দলের একজন সদস্য এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী ও পরিশ্রমী। তিনি এই দলের প্রথম যিনি টাওয়ারে উঠেন এবং নিরাপদে নেমে আসেন। তিনি বলেন
প্রথমবার আমারও ভয় লেগেছে। কারণ UVA টাওয়ার খুব উচু। সাধারণত ৫০-৬০ মিটার, কিছু কিছুর উচ্চতা ১০০ মিটারেরও বেশি। আমি উপর থেকে নীচে দেখতে পাই না। তবে এখন আমার ভয় লাগে না।
কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তি ওয়াং ইয়ান লং বলেন, যখন মেয়েরা কোম্পানিতে যোগ দেন তখন কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ট্রান্সফরমার সাব ষ্টেশনে পাঠাতে চেয়েছিল। সেখানে পরিবেশ ও কাজ তুলনামূলকভাবে সহজ। তবে তাঁরা কঠিন এ কাজ বেছে নিয়ে UVA বিদ্যুত্-মিস্ত্রী দলে যোগ দেন।
ওয়াং ইয়ান লং বলেন, সত্যি কথা বলি, শুরুতে আমিও বুঝতে পারিনি কেন মেয়েরা এ কাজ বাছাই করেন। এ কাজের পরিবেশ কঠোর এবং খোলা আকাশে কাজ করতে হয়। এমনকি অনেক পুরুষও এ কাজ করতে চায় না তবে তাঁরা কোন অভিযোগ না করে এ কাজ করে যাচ্ছেন।
UVA টাওয়ারকে বিগ ম্যাক নামে ডাকা হয়। এর উচ্চতা ৬০-৮০ মিটার, তা প্রায় ২০ তলার ভবনের সমান। টাওয়ার ও তারের মধ্যে ১০ মিটার দীর্ঘ অন্তরক আছে। ১০ মিটার বেশী না, তবে দু অন্তরকের মধ্যে মাত্র একটি পা রাখার জায়গা আছে বলে নেমে হাত ও পা দিয়ে তা অতিক্রম করতে হয়।
সদস্য ওয়াং মেং লিন বলেন, মাঝ আকাশে চলা সবচেয়ে বিপজ্জনক কাজ নয়। টাওয়ারে আরোহণ করা তার চেয়ে আরও বিপজ্জনক। তিনি বলেন
সবচেয়ে উচু একটি টাওয়ার ১৩৬ মিটার, তা প্রায় একটি ৩৩ তলা
ভবনের উচ্চতার সমান। যদি আমাদের শারীরিক শক্তি যথেষ্ট না হয় তাহলে উঠতে পারব না। ওয়াং লিন মেং বলেন, প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় তাঁর ভয় হয়েছিল। তবে একবার উঠলে যে গর্বের অনুভূতি হয় তিনি তা কখনও ভূলবেন না।
এছাড়া, প্যাট্রোলিংয়ের সময় মেয়েদের জনমানব শূন্য ও অপরিচিত প্রেইরি এবং মরুভূমি অতিক্রম করতে হয়। পরিবর্তনশীল আবহাওয়া ও নেকড়ে কুকুর সেখানে তাদের যথেষ্ট ভোগায়।
মেয়েদের প্রশিক্ষণের দায়িত্বশীল ব্যাক্তি সু ছেং চাও বলেন, সাহসী, ইতিবাচক ও মনোযোগী- মেয়েদের ব্যাপারে এই আমার মূল্যায়ন। তাঁরা নিজ আচরণের মাধ্যমে অন্যদেরকে উত্সাহ দেন। তিনি বলেন
আমাদের ধারণা ছিল তাঁরা এ কাজ করতে সক্ষম নন, তবে তাদের নিজেদের ধারণা এমন নয়। তাঁরা ভাবেন যে কাজ অন্য মানুষ করতে পারে আমরাও তা পারি। তাঁরা দরদ দিয়ে এ কাজ করেন বলে তাদের কষ্ট আর অস্বস্তি নেই।
(শিশির/মহসীন)