'তেহরানে লুভর' প্রদর্শনী ইরানে অনুষ্ঠিত
  2018-03-20 16:12:26  cri

৫ মার্চ, ইরানের জাতীয় যাদুঘর এবং ফ্রান্সের লুভর জাদুঘরের যৌথ উদ্যোগে 'তেহরানে লুভর' প্রদর্শনী আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। লুভরের ৫০টিরও বেশী সংগ্রহকর্ম ইরানের জাতীয় যাদুঘরে প্রদর্শন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এ প্রদর্শনী হলো পশ্চিমা দেশের কোন যাদুঘরের প্রথম বারের মত ইরানে এসে প্রদর্শনী আয়োজন করা।

এবারে প্রদর্শিত সংগ্রহ কর্মের মধ্যে রয়েছে: প্রাচীন রোমান মূর্তি, প্রাচীন ফার্সী প্রাচীর ভাস্কর্য, প্রাচীন মিশরীয় অর্ধ-দৈর্ঘ্যের প্রতিকৃতিসহ হাজার হাজার বছর আগের সংগ্রহ। তাছাড়া রেমব্র্যান্ড্ট হারমেন্সজুন, ইউজেন ডেলাক্রোক্সসহ ১৭ থেকে ১৯ শতাব্দির চিত্রশিল্পীর সেরা চিত্রকর্ম আছে প্রদর্শনীর তালিকায়।

লুভরের মধ্য-পূর্ব এলাকার সংগ্রহকর্ম বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তি, প্রধান কিউরেটর মরিলে পিক সংগ্রহকর্ম পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন যে, বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ যাদুঘর হিসেবে, এবার ইরানের জনগণের সামনে লুভরে প্রদর্শিত সংগ্রহকর্ম বিস্তৃত ও গভীর বলতে হবে। এবারের প্রদর্শনী হলো ইরানের জাতীয় যাদুঘর-লুভর 'সীমান্তবিহীন' সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ একটি সুযোগ। তিনি বলেন,

"প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য এটি প্রদর্শন করা যে লুভর একটি ২১ শতাব্দীর যাদুঘর। আমরা অন্য দেশের যাদুঘরের সঙ্গে 'সীমান্তবিহীন' সহযোগিতা বজায় রাখব। আমাদের জাপান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতার অভিজ্ঞতা আছে, এবার ইরানের সহযোগিতা আমাদের কাছে একইরকম গুরুত্বপূর্ণ। লুভরে ফার্সি সভ্যতা সম্পর্কিত অনেক সংগ্রহকর্ম রয়েছে। ইরানের জাতীয় যাদুঘরের সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বকে ফার্সি সাংস্কৃতিক ঐতিয্য প্রদর্শন করতে পারি।"

ইরানের জাতীয় যাদুঘরের পরিচালক জেব্রাই নখন্দে প্রদর্শনীর প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন,

"তেহরানে লুভর' প্রদর্শনীতে লুভর প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত বিভিন্ন সময়কালের সংগ্রহকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে। এতে লুভর যাদুঘরের উন্নয়নের ইতিহাস দেখা যায়। ইরানি জনগণ এতে ইউরোপ, এশিয়া ও আমেরিকার সংস্কৃতি ও আর্ট-এর মূল্যবান সংগ্রহ উপভোগ করতে পারে।"

এদিন ইরান সফররত ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

২০১৬ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির ফ্রান্স সফরকালে, ইরানী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, হস্তশিল্প ও পর্যটন সংস্থা এবং ফ্রান্সের লুভর জাদুঘরের মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এবারের প্রদর্শনী সে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া, চলতি বছর হলো ইরানের জাতীয় যাদুঘর প্রতিষ্ঠার ৮০তম বার্ষিকী। তা উদযাপনের জন্য আয়োজিত ধারাবাহিক কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে এই প্রদর্শনী।

বন্ধুরা, 'তেহরানে লুভর' প্রদর্শনী ইরানে অনুষ্ঠিত শিরোনামে সাংস্কৃতিক খবরটি এখানে শেষ। এবারে শুনুন আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি সুরক্ষায় সহায়তা দিচ্ছে শিরোনামে একটি সাংস্কৃতিক খবর।

ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ স্ক্যানিং, লেজার রমন, ইনফ্রারেড ইমেজিং স্ক্যান, থ্রিডি স্ক্যান, বন্ধ পরিসীমা ইমেজিংসহ বিভিন্ন শব্দ অন্য ক্ষেত্রে বেশী শোনা যেত। কিন্তু এ শব্দগুলো এখন সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি ও যাদুঘর মহলে বেশ ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রযুক্তি সংক্রান্ত পুরাতত্ত্ব এবং সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি রক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। চীনের গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য, চীনের জাতীয় যাদুঘরের সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি রক্ষা বিষয়ক কেন্দ্রের পরিচালক ভান লু সিআরআই'র সাথে এক সাক্ষাত্কারে বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্রমাগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ঐতিয্য সংরক্ষণ কর্মীরা উপাত্ত প্রয়োগ করে সাংস্কৃতিক বৈজ্ঞানিক অন্তঃসার নিয়ে আরো গভীর গবেষণা করে, ঐতিয্য কর্মের বৈজ্ঞানিক শনাক্ত এবং সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি রক্ষা ও মেরামত সমন্ধে প্রস্তাব নির্ধারণ করে।

নতুন যুগে সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি রক্ষা ও মেরামতে আরো সার্বিক প্রযুক্তি পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। ঐতিয্য সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞরা এখন আরো বিস্তৃত দৃষ্টি নিয়ে আরো কার্যকরভাবে সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি রক্ষা কাজ করতে পারেন।

আগে সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি রক্ষা কাজ প্রায়ই ঐতিয্য সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করত। প্রযুক্তি পদ্ধতির সহায়তা না থাকায় মানব পরিচালনা কখনো কখনো ভুল ঘটিয়েছে। প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে আজকের সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি রক্ষা ও মেরামত ইতোমধ্যেই একটি ইন্টারডিসিপ্লিনারি, আন্তঃ-ডোমেইন, আন্তঃ-সেক্টর বিশেষ বিজ্ঞানে পরিণত হয়েছে।

চীনের জাতীয় যাদুঘরের সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি রক্ষা বিষয়ক কেন্দ্রের পরিচালক ভান লু বলেছেন,

"যাদুঘর রক্ষা কেন্দ্রের প্রধান তিনটি কাজ আছে। প্রথমে যাদুঘরের সংগ্রহকর্মের বিস্তারিত রক্ষা ও মেরামত; দ্বিতীয়ত ঐতিয্য সুরক্ষা, যেমন ভিন্ন ভিন্ন সংগ্রহকর্ম ভিন্ন পরিবেশে সংরক্ষণ করা লাগবে, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ক্ষতিকর গ্যাস, আলো ইত্যাদি; তারপর আমাদের যাদুঘরের নিজের গবেষণা প্রকল্প। গবেষণার মাধ্যমে ঐতিয্য সমন্ধে আরো গভীর উপলদ্ধি লাভ করতে পারবো। যাতে সাংস্কৃতিক আস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ভাল ভিত্তি সৃষ্টি করা যায়। সার্বিক তথ্য ও উপাত্ত জেনে আরো ভালভাবে সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তির গল্প বলতে পারবো।"

প্রযুক্তি উন্নয়ন সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি রক্ষার কাজে সহায়তা দিলেও এ ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক প্রতিভার গুরুতর ঘাটতি অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। সেজন্য চীনের ঐতিয্য রক্ষা কাজ গুরুতরভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রতিভা এবং নেতৃত্ব পর্যায়ের মানুষের সংখ্যা খুবই কম। সারা দেশে ৪ হাজার ৮'শটিরও বেশী যাদুঘর আছে। ৬.৪কোটিরও বেশী সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি রয়েছে। তাছাড়া, ঐতিয্য রক্ষা কাজের উচ্চ চাহিদা আছে। যথেষ্ট তাত্ত্বিক জ্ঞান থাকলেও বাস্তব অনুশীলন আরো প্রয়োজনীয়। সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি রক্ষা ও মেরামত কাজ আসলে 'এক সময়ে সম্পন্ন করতে হবে এমন কাজ'। মেরামত করার প্রক্রিয়ায় যদি সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তির কোন ক্ষয়ক্ষতি ঘটে তা অপরিবর্তনীয়।

ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান অবশেষ হিসেবে সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি হলো চীনা সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক বাহক ও আধ্যাত্মিক জীবন। সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি রক্ষায় আরো ব্যাপক সামাজিক মনোযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com

চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।

বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান। (জিনিয়া/মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040