চীনের জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের দলীয় আলোচনাসভায় তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পৌর সরকারের উপপ্রধান চিয়ারে লুওশানতান তিব্বতের উন্নয়ন সম্পর্কে ব্যাখ্যা করার সময় তিব্বত থেকে দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,
২০১৫ সালের আগস্টে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সভাপতিত্বে তিব্বত-বিষয়ক ষষ্ঠ কর্মসভায় তিব্বত অঞ্চলকে দেশের নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ স্থান, গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত নিরাপত্তার কেন্দ্র, গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সম্পদের ঘাঁটি, চীনা জাতির গুরুত্বপূর্ণ ও বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতি রক্ষার স্থান, বিশ্বের পর্যটকদের গন্তব্যস্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ামুখী গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য ও তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সমাজবিজ্ঞান একাডেমির দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক কার্যালয়ের উপমহাপরিচালক পিয়ানপালামু মনে করেন, দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা দক্ষিণ এশিয়ায় 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়ক, তিব্বতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি আঞ্চলিক সীমান্ত নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন,
'তিব্বত থেকে দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাবের আওতায় দক্ষিণ এশিয়ায় যোগাযোগের ভালো ভিত্তি তৈরি হবে। তিব্বতের প্রতিবেশী ইউননান প্রদেশে রয়েছে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর। এ ব্যবস্থা সে করিডোরের সঙ্গে যুক্ত হলে তা তিব্বতের উন্নয়নকে জোরদার করবে।
পিয়ানপালামু বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় তিব্বত সরকার বাস্তব কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং ইতোমধ্যেই কিছু কিছু প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ৯০ হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়ক তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সড়কের দৈর্ঘ্য ৬৬০ কিলোমিটার। দেশি-বিদেশি ফ্লাইটের পরিমাণ ৭৯টি ছাড়িয়েছে। পুরো অঞ্চল মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে এবং ৮৫ শতাংশ অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
তিব্বতে নির্মাণকাজ জোরদারের পাশাপাশি চীন দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে লেনদেন ও সহযোগিতা জোরদার করেছে। ২০১৬ সালে মার্চে নেপালি প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় চীন ও নেপাল ১০টিরও বেশি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে রয়েছে দু'দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। নেপালের অনুরোধে চীন আগামী ২০২০ সালে তিব্বতের রিকাজে থেকে নেপালের সীমান্ত শহর কিলোং পর্যন্ত রেলওয়ে সম্প্রসারণ করবে। যার অর্থ ২০১৪ সালে চালু হওয়া ছিংহাই-তিব্বত রেলওয়ের শাখা লাসা-রিকাজে রেলওয়ে নেপালের সীমান্ত জেলা কিলোং পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। বর্তমানে তিব্বত থেকে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু পর্যন্ত রেলওয়ে নিয়ে গবেষণা চলছে।
এ প্রসঙ্গে চীনের জাতীয় পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য ও চীনের রেল প্রতিষ্ঠানের সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক লু ছুন ফাং বলেন, তিব্বত-কাঠমান্ডু রেল চালু হলে তা তিব্বতের কর্মসংস্থান বাড়াবে। পাশাপাশি তা চীন ও নেপালের বাণিজ্যিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন,
নেপালে আছে সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ। এ সম্পদ চীনাদের আকর্ষণ করে। চীন-নেপাল রেল যোগাযোগ চালু হলে নেপালে চীনা পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপক বাড়বে।
(রুবি/তৌহিদ)