সংবিধান একটি দেশের মৌলিক আইন, দেশ প্রশাসনের মূল নীতি ও গঠনতন্ত্র, ক্ষমতাসীন পার্টি আর জনগণের সদিচ্ছার সমন্বয়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম জাতীয় কংগ্রেসের দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এটা হচ্ছে কমরেড সি চিন পিংকে কেন্দ্রীভূত করে সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির আইনানুসারে দেশ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা এবং সংবিধান অনুসারে দেশ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ফলাফল।
চীনের বর্তমান সংবিধান ১৯৮২ সালের ৪ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় গণ কংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশনে গৃহীত হয়েছে। এটি সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ আর সমাজতান্ত্রিক আধুনিকীকরণ নির্মাণকাজের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ একটি ভালো সংবিধান। এ সংবিধানটি চালু হওয়ার পর ৩৬ বছরে যথাযথভাবে মৌলিক আইনের ভূমিকা পালন করেছে, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ আর সমাজতান্ত্রিক আধুনিকীকরণের নির্মাণকাজের জন্য আইনগত নিশ্চয়তা দিয়েছে।
বর্তমান সংবিধান কার্যকর করার পর সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ আর সমাজতান্ত্রিক আধুনিকীকরণের নির্মাণ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট নতুন অবস্থা ও নতুন সমস্যা মোকাবিলায় পর পর চার বার সংশোধিত হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯৮৮ সালে বেসরকারী অর্থনীতি আইনের সংরক্ষণ পাওয়ার কথাটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৯৯৩ সালে সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি সংবিধানে লিখিত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে আইনানুসারে দেশ প্রশাসন, সমাজতান্ত্রিক আইনানুগ দেশ প্রতিষ্ঠা দেশ প্রশাসনের নীতি হিসেবে সংবিধানে লিপিবদ্ধ হয়েছে। ২০০৪ সালে রাষ্ট্রীয়ভাবে মানবাধিকার সম্মান ও নিশ্চিত করার কথাটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
২০০৪ সালে সংবিধান সংশোধনের পর পার্টি ও দেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ও পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে, সিপিসির অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর কমরেড সি চিন পিংকে কেন্দ্রীভূত করে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি গোটা পার্টি ও গোটা দেশের সকল জাতির জনগণকে নিয়ে দৃঢ়তার সাথে চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্র বিকাশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, সি চিন পিংয়ের নতুন যুগে চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্রের চিন্তাধারা সৃষ্টি করেছে, পার্টি ও দেশের ঐতিহাসিক কৃতিত্ব ও সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
সিপিসির উনবিংশ জাতীয় কংগ্রেস নতুন যুগে চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিন্যাস ও নতুন সংগ্রামের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করেছে। নতুন যুগে আরো ভালোভাবে সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার উদ্দেশ্যে এবার চীন সরকার সংবিধানের আবার যথোপযুক্ত সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে বাস্তব অনুশীলনে পার্টি ও জনগণের অর্জিত গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব ও ব্যবস্থার সুফল সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে সময়োচিত ও ফলপ্রসূভাবে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ আর চীনা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সমাজতান্ত্রিক আধুনিকীকরণের নির্মাণকাজের সর্বশেষ ফলাফল প্রতিফলিত হয়, এবং সংবিধান আর সমাজের বাস্তবতার মধ্যকার উপযুক্ততা বজায় রাখা যায়। সুতরাং এবারের সংবিধান সংশোধন হচ্ছে যুগের চাহিদা অনুসারে।
নতুন যুগে বর্তমান সংবিধানকে পঞ্চম বারের মতো সংশোধন করা হচ্ছে জনগণের চাহিদা অনুসারেও বটে। সংবিধান সংশোধন কার্য গোটা দেশের পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত, এর ব্যাপক ও সূদূরপ্রসারী প্রভাবও রয়েছে। ফলে কাজটির দ্বারা পার্টি ও জনগণের উন্নয়নের চাহিদা মেটানো দরকার। সংবিধানটিতে আইন উন্নয়নের নিয়মও অনুসরণ করতে হবে। বর্তমান সংবিধানের প্রত্যেক বার সংশোধন ব্যাপকভাবে সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মতামত শুনে তারপর করা হয়েছে। সময়োচিতভাবে সংবিধানের সংশোধনী বিলের প্রতি সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রস্তাব ও পরামর্শ সংগ্রহ করা হয়েছিল, কার্যকরভাবে জনমত সংগ্রহ করা হয়েছিল, যাতে সংবিধান সংশোধন অভিযান জনগণের স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয় এবং সর্বাধিক মাত্রায় জনগণের ইচ্ছা প্রকাশিত হয়, জনগণের অধিকার নিশ্চিত হয়। এবারও তাই করা হয়েছে।
২০১৭ সালের ১৩ নভেম্বর পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি সংবিধান সংশোধন বিষয়ে মতামত সংগ্রহ করার বিজ্ঞপ্তি জারি করে। যাতে বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন বিভাগ নানা ক্ষেত্রের কথা বিবেচনা করে ব্যাপকভাবে জনমত গ্রহণ করার পর সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব দিতে পারে।
চীনের কেন্দ্রীয় যুক্তফ্রন্ট বিষয়ক দফতর দল-বহির্ভূত ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। সভায় বিভিন্ন গণতান্ত্রিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি, জাতীয় শিল্প ও বণিক ফেডারেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আর নির্দলীয় ব্যক্তিদের প্রতিনিধিগণের মতামত ও প্রস্তাব শুনেছে। সংবিধানের সংশোধনী গ্রুপ যথাযথ গণতন্ত্র প্রচার আর ব্যাপকভাবে মতামত সংগ্রহের ভিত্তিতে একাধিকবার সংশোধন করার পর সংবিধান সংশোধনের খসড়া বিল গঠিত হয়েছে।
১২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যালয় গোটা পার্টির সদস্যদের আওতায় সংবিধান সংশোধনীর খসড়া বিল নিয়ে মতামত সংগ্রহ করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এর পাশাপাশি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি বিশেষ করে পার্টির কিছু সিনিয়র সদস্যের পরামর্শ চেয়েছে।
১৫ ডিসেম্বর সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং দল-বহির্ভূত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা সভার পরিচালনা করেন। তিনি সরাসরি বিভিন্ন গণতান্ত্রিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি, জাতীয় শিল্প ও বণিক ফেডারেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আর নির্দলীয় ব্যক্তিদের প্রতিনিধিগণের মতামত ও প্রস্তাব শুনেছেন।
২০১৮ সালের ২ ও ৩ জানুয়ারি জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান চাং দে চিয়াং চারটি আলোচনা সভা পরিচালনা করেন। তিনি যথাক্রমে কেন্দ্রীয় কমিটি আর প্রাসঙ্গিক সরকারি সংস্থাগুলোর পার্টি কমিটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, থিঙ্কট্যাঙ্ক ও বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিত, বিভিন্ন প্রদেশ ও মহানগরের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সংবিধান সংশোধনী খসড়া বিলের প্রতি মতামত ও প্রস্তাব শুনেছেন।
১৮ থেক ১৯ জানুয়ারি, সিপিসির ১৯তম কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় অধিবেশনে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
সংবিধান সংশোধনের তাৎপর্য প্রসঙ্গে সি চিন পিং বলেন, সংবিধান সংশোধন পার্টি ও দেশের রাজনৈতিক জীবনের বড় ঘটনা, সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটি নতুন যুগে চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্রের সামষ্টিক পরিস্থিতি ও কৌশলগত উচ্চতা থেকে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এটা সার্বিকভাবে আইনানুসারে দেশ প্রশাসন ও দেশ পরিচালনার সামর্থ্য আধুনিকীকরণ অগ্রসর করার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে কঠোর অবস্থা অতিক্রম করে উজ্জ্বলতর দিকে যাচ্ছে। এই বাস্তবতা থেকে বোঝা যায়, পার্টি আর জনগণের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ইতিহাস প্রমাণ করেছে এবং প্রমাণ করবে যে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব হচ্ছে ইতিহাস সৃষ্টিকারী, জনগণের ইচ্ছার ধারক এবং চীনা জনগণের নিরন্তরভাবে সুখী জীবন সৃষ্টির মূল উৎস।