ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর: আর্থ-সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা
  2018-03-11 18:04:07  cri
গত সপ্তাহে বাংলাদেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর করে গেলেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের আমন্ত্রণে তিনি এ সফর করেন। দীর্ঘ ১৪ বছরে ভিয়েতনামের কোনো প্রেসিডেন্টের এটাই ছিল বাংলাদেশে প্রথম সফর। তিনি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন, যোগ দেন দুদেশের ব্যবসায়ী ফোরামে। তার সফরকালে দু'দেশের মধ্য তিনটি বিষয়ে সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে দেশটির প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরকে ফলপ্রসু হিসেবে দেখা হচ্ছে। আজকের সংবাদ পর্যলোচনায় আমরা নজর দেব এ বিষয়টির দিকে।

৪ মার্চ বিকালে সফরসঙ্গীদের নিয়ে ঢাকায় হয়রত শাহজালাল বিমান বন্দরে পৌঁছান ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট। বিমান বন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। পরে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে নেয়া হয়। সফরকালে তিনি সেখানেই থাকেন।

৫ মার্চ সফরের দ্বিতীয় দিনে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট। সেখান থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। একই দিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে আসেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট। সেখানে তাকে স্বাগত জানান শেখ হাসিনা। প্রথমে দুনেতা একান্ত বৈঠক করেন এবং পরে নিজ নিজ প্রতিনিধিদলকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন তারা। বৈঠক শেষে দুই নেতার উপস্থিতিতে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ, শিল্প এবং দুদেশের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান সংক্রান্ত তিনটি সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষর করেন স্ব স্ব দেশের মন্ত্রীরা।

পরে যৌথ বিবৃতিতে দেন প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। রোহিঙ্গারা যাতে সসম্মানে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে সে জন্য সরকার কাজ করছে বলে জানান শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে যে আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে তাতে ভিয়েতনামও সহযোগিতা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং বলেন, ভিয়েতনামও চায় রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হোক এবং তারা দ্রুত নিজ দেশে ফিরে যাক। এ ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের তরফে সম্ভাব্য সব সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

একই দিন সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট। এ সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গাদের রাখাইনে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ভিয়েতনামের কার্যকর ভূমিকা কামনা করেন। আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে আগ্রহের কথাও জানান রাষ্ট্রপতি হামিদ। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের বাণিজ্য-বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে যৌথ উদ্যোগ নিতে ভিয়েতনামের বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গা ইস্যু এবং আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়লাগ পার্টনার বিষয়ে বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দেন ত্রান দাই কুয়াং।

এর আগে ৫ মার্চ বিকালে বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদল ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জানান, ভিয়েতনাম কৃষি, সামুদ্রিক খাবার, হাইটেক, তথ্যপ্রযুক্তি, গাড়ি, ইস্পাত, টেলিযোগাযোগ, জ্বালানি, অবকাঠামোর মত খাতগুলোতে উন্নত। এ সব ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করা গেলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের সফরের ফলে দুদেশের যৌথ বাণিজ্যের বিষয়ে কার্যকর অগ্রগতি হবে বলে আশা করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। এ জন্য দুই দেশের সমন্বয়ে একটি বিজনেস কাউন্সিল গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।

৬ মার্চ বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম ব্যবসায়ী ফোরামের বৈঠকে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং। বৈঠকে যোগ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতির চিত্র তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরির তাগিদ দেন।

ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট জানান, তার দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। তারা যেন সহজে বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করতে পারেন সেজন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন চলতি বছর বাংলাদশ-ভিয়েতনাম বাণিজ্য ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। ২০২০ সালের মধ্যে তা ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। আগামীতে দুই দেশের আর্থ-সামাজিক সবক্ষেত্রে সম্পর্কের উন্নয়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040