৫ই মার্চ সকাল ৯টায় বেইজিংয়ে চীনের ত্রয়োদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংসহ সিপিসি ও দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় নেতারা এতে যোগ দিয়েছেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং অধিবেশনে সরকারি কার্যবিবরণী পরিবেশন করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ওয়াং ছেন স্থায়ী কমিটির কাছে সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত প্রস্তাবের খসড়া উপস্থাপন করেন।
আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় সরকারি কার্যবিবরণীর উল্লেখযোগ্য বিষয়ে দৃষ্টিপাত করব।
চীনের সর্বোচ্চ আইন সংস্থা ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস বা এনপিসি। ত্রয়োদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের চলতি বছরের প্রথম অধিবেশনে সরকারি কার্যবিবরণী, জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির কার্যবিবরণী, সর্বোচ্চ আদালতের কর্মপ্রতিবেদন এবং সর্বোচ্চ অভিশংসক সংস্থার কর্মপ্রতিবেদন পর্যালোচনার পাশাপাশি সংবিধান সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব ও রাষ্ট্রীয় পরিষদের সংস্কার প্রস্তাবসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে চীনের পর্যালোচনা করে থাকে। তবে সরকারি এ প্রতিবেদনে বর্তমান সরকারের সাফল্য ও কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন চীনের প্রধানমন্ত্রী।
সরকারি কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। গত ৫ বছরে চীনের মোট দেশজ উত্পাদন (জিডিপি) ৫৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান থেকে বার্ষিক গড়ে ৭.১ শতাংশ করে বেড়ে ৮২.৭ ট্রিলিয়নে দাঁড়ায়। আর বর্তমানে চীনের জিডিপি বৈশ্বিক জিডিপি'র ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা পাঁচ বছর আগে ছিল ১১.৪ শতাংশ। এ-সময় আর্থিক ঘাটতিও ৩ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখতে সক্ষম হয় চীনা সরকার।
এই পাঁচ বছরে ৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে দরিদ্রতা থেকে মুক্ত করা হয়েছে। সচ্ছলতা মানুষকে জীবন উপভোগের সুযোগ এনে দিয়েছে। তাই এ সময় পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ মিলিয়ন থেকে ১৩০ মিলিয়নে। উল্লেখ্য, আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক পর্যটনে চীনারাই এখন বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে।
এ সময় জ্বালানি সম্পদ ও পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জিডিপি'র ইউনিট প্রতি ২০ শতাংশ ব্যবহার কমেছে। পাশাপাশি বিগত পাঁচ বছরে প্রধান দূষণকারী উপাদান ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে এবং মূল শহরগুলিতে ভারী বায়ু দূষণের পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমে এসেছে।
এ সময় ব্যক্তিগত আয় বার্ষিক ৭.৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিক থেকে চীন এখন বিশ্বের বৃহত্তম মধ্যম আয়ের জনসংখ্যার দেশে পরিণত হয়েছে।
১৩০ কোটি মানুষের দেশে শহরাঞ্চলে ৬ কোটি ৬০ লাখ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।
কার্যবিবরণীর দ্বিতীয় অংশে প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং চলতি বছরের মৌলিক পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন।
২০১৮ সালের জিডিপি'র প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৬.৫ শতাংশ। ভোক্তা মূল্য সূচক বা কনজুমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। চীন সার্বিক ও গভীরভাবে সংস্কারকাজ করবে এবং বৈশ্বিক উন্মুক্তকরণ জোরদার করবে।
দেশের বিভিন্ন শহর ও জেলায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে এবং বেকারত্বের হার ৫.৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে। তার মধ্যে শহরাঞ্চলের বেকারত্ব ৪.৫ শতাংশের বেশি হবে না। চলতি বছর দেশের গ্রামাঞ্চলের এক কোটিরও বেশি লোক দারিদ্র্যমুক্ত হবে। দারিদ্র্যবিমোচনের কৌশল হিসেবে চলতি বছর ২৮ লাখ দরিদ্র লোককে স্থানান্তর করা হবে।
এ বছর ব্যক্তিগত আয় বাড়বে এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতার সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে। উল্লেখ্য, ক্রয় ক্ষমতার সক্ষমতা বা পিপিপি'র দিক থেকে চীন ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বের এক নম্বর শক্তিশালী দেশে পরিণত হয়েছে।
আমদানি এবং রপ্তানি স্থিতিশীলভাবে বাড়বে এবং মৌলিক আর্থিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা হবে।
জিডিপি'র ইউনিট প্রতি অন্তত ৩ শতাংশ জ্বালানি সম্পদ ব্যবহার কমবে। পরিবেশ দূষণের মৌলিক কারণগুলো ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে।
চলতি বছর চীনের বায়ুমণ্ডলে দূষণ সৃষ্টিকারী সালফার-ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইড গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ ৩ শতাংশ কমানো হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে 'অতিক্ষুদ্র কণা' বা পিএম২.৫-এর ঘনত্ব অবহ্যতভাবে কমিয়ে আনা হবে।
সরবরাহ খাতে কাঠামোগত সংস্কারে সুষম অগ্রগতি অর্জন করা হবে। চীন দৃঢ়ভাবে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে অবিচল থাকবে এবং নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গঠনে কাজ করবে।
মোহাম্মদ তৌহিদ, সি আর আই বাংলা।