মা এ্য শান গ্রামের গল্প
  2018-03-07 10:13:28  cri



 

২০১৮ সালের বসন্তকাল, চীনের হু নান প্রদেশের মা এ্য পাহাড় হালকা কুয়াশায় আচ্ছন্ন। তবে লাল ব্যাক গ্রাউণ্ডে লেখা 'সুন্দর গ্রাম'-এর স্লোগান স্পষ্ট দেখা যায়। প্রায় ৪ বছর আগে, যখন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং সি পা তুং নামে একটি গ্রাম পরিদর্শন করেন তখন তিনি প্রথমবারের মতো নির্দিষ্ট দারিদ্র বিমোচনের এ ধারণা উত্থাপন করেন।

২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর, সিন চিন পিং মা এ্য পাহাড় থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে হু নান প্রদেশে সিয়াং সি রাজ্যের সি পা তুং গ্রাম পরিদর্শনে আসেন। তখন সেখানে মাথাপিছু নিট আয় ছিল ১৬৮৮ ইউয়ান। সি পা তুং গ্রামে যখন দারিদ্র বিমোচন প্রকল্প চালু হয় তখন একটি পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয় তা হল এ গ্রামের দারিদ্রমুক্তকরণ পদ্ধতি অন্য গ্রামেও কাজে লাগাতে পারা। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সি পা তুং গ্রামের মানুষের মাথাপিছু নিট আয় ৮০০০ ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয় সেখানকার দারিদ্রমুক্তকরণ কার্যক্রম।

মা এ্য শান গ্রাম তার প্রতিবেশি গ্রামের অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখতে পারবে? তার উন্নয়ন কী রকম? আজকের অনুষ্ঠানে আমরা মা এ্য শান গ্রামের কথা বলব।

উ ইউন ছিয়াং মা এ্য শান গ্রামের দরিদ্র পরিবারের একজন কৃষক ছিলেন। আগে তিনি চে চিয়াং প্রদেশে কাজ করতেন। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তিনি ফিরেন মা এ্য গ্রামে এবং শুরু করেন জৈব চাষ শিল্প। কয়েক মাস কাজ করার পর এখন তিনি ৩০ মু জমিতে জৈব সবজি ও ৫০ মু জমিতে অন্য ফসল চাষ করেন।

চীনে অসংখ্য দরিদ্র গ্রামের দারিদ্র বিমোচন কাজ কৃষির উপর নির্ভর করে। তার কিছু কিছু সফল এবং কিছু কিছু ব্যর্থ হয়। কৃষি পণ্যের বিক্রি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

মা এ্য শান গ্রামের বাসিন্দাদের এখনও মনে আছে যে ১৯৯৩ সালে এই গ্রামে লেবু চাষের প্রবণতা ছিল। তবে দু বছর পর এ প্রকল্প ব্যর্থ হয় কারণ লেবুগুলো তাঁরা বিক্রি করতে পারতেন না। তখনকার মা এ্য শান গ্রামের রাস্তা ও পানিসরবরাহ ব্যবস্থাসহ অবকাঠামো দুর্বল ছিল।

 

উ সান ই মা এ্য শান গ্রামে বড় হয়েছেন। আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে কৃষকরা চাষাবাদ করতেন। বাদাম ও মিষ্টি আলু চাষ করতেন। অনাবৃষ্টিতে ফসলহানি হলে মানুষ অনাহারে কষ্ট পেতেন।

চাং চিয়া চিয়ে চীনের বিখ্যাত একটি দর্শনীয় স্থান এবং এ অঞ্চলে অবস্থিত মা এ্য শান গ্রামসহ নানা দরিদ্র গ্রাম। উপাত্ত থেকে জানা গেছে, ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালে চাং চিয়া চিয়ে এলাকার ২৩৫টি গ্রাম জাতীয় গ্রামীণ পর্যটন দারিদ্র বিমোচন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এখানে যেমন উন্নয়ন হয় পর্যটন শিল্প তেমনি বাস্তবায়িত হচ্ছে দারিদ্র বিমোচন কার্যক্রম।

২০১৩ সালে একটি মহাসড়ক মা এ্য শান গ্রাম অতিক্রম করে। এ গ্রামের জন্য তা নতুন এক যুগ উম্মোচন করে। দু বছর আগে চাং চিয়ে চিয়ে শহরে কাজ করা উ সান ই গ্রামে ফিরে এসেছেন এবং গ্রামের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক মনোনীত হন। তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা হল সীমিত সম্পদ দিয়ে কীভাবে গ্রামে দারিদ্র বিমোচন বাস্তবায়ন করা যায়। উ সান ই অবশেষে 'গ্রাম ও কোম্পানি যৌথ নির্মাণ' পদ্ধতি বাছাই করেন। তিনি বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন কাজের জন্য মানব সম্পদ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। বেসরকারি কোম্পানির সাহায্যে গ্রাম-চালিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন এবং সুন্দর গ্রাম নির্মাণে গ্রামবাসীদের উত্সাহ দেন।

দু বছর পর গ্রামে দেখা যায় লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন। গ্রামের বাসিন্দা চেং খাই লিয়ান রাস্তা নির্মাণের দায়িত্ব বহন করেন। এখন তিনি গর্বিতভাবে বলেছেন,২ মিটার প্রশস্ত রাস্তা এখন ৬ মিটার সিমেন্ট রাস্তায় পরিণত হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির সময়ে অনেক পর্যটক এখানে এসে ভ্রমণ করেন। তাঁরা দেখতে পারেন ভিলা, স্বচ্ছ গণ গ্রন্থাগার, ছোট ছোট জলপ্রবাহ ও বৈশিষ্ট্যময় দৃশ্য। এখানে মানুষ উপভোগ করতে পারেন মুক্ত সুইমিং পুল, হট স্প্রিংস, বিশেষ গ্রামীণ খাবার। শিশুরা জৈব সবজি বাগানে চাষ ও ফসল ক্ষেতে কাজ করতে পারে এবং নিজে বাছাই করা কৃষি পণ্য নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারে।

উ সান ই বলেন, গেল এক বছরে ১ লাখের বেশি পর্যটক গ্রামে ভ্রমণ করেন। পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে গ্রামে উত্পাদন কাঠামোতেও পরিবর্তন এসেছে। কৃষকরা এখন কেউ ক্যাফেতে কাজ করে, কেউ রেস্টুরেন্ট এবং আবাসিক ব্যবস্থাপনা করেন। কেউ কেউ সবজি ও অর্থকরী ফসল চাষ করেন।

কৃষি পণ্য বিক্রির সমস্যা সমাধানের জন্য গ্রাম সরকারের সাহায্যে কৃষক ও কোম্পানির মধ্যে সহযোগিতা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। শুরুতে আমরা বলেছি উ ইউন ছিয়াং গ্রামে ফিরে জৈব সবজি চাষ করেন। তাঁর কৃষি পণ্য শহরে বিক্রি করার জন্য তিনি একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

পাশাপাশি ইন্টারনেটও গ্রামের উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করে। উ ইউন ছিয়াংয়ের মেয়ে উ লি একটি ই-কমার্স সার্ভিস স্টেশন খুলেছেন।

এখানে গ্রামের বাসিন্দারা কিনতে পারেন জল,তেল ও লবনসহ নিত্যপণ্য এবং গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি ও সুন্দর কাপড়সহ নানা কিছু। উ লির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে তাঁর স্টেশন একটি প্লাটফরমে পরিণত হবে সেখাসে গ্রামবাসী ও বাইরের বিশ্বের সঙ্গে তথ্য ও পণ্য বিনিময় করবে। কৃষি পণ্যও এ প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রি হবে।

২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে, সি চিন পিং যখন সি পা তুং গ্রাম পরিদর্শন করেন তখন তিনি দারিদ্র বিমোচন নিয়ে কয়েকটি নির্দেশনা দেন তা হল স্থানীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী বাস্তব তথ্যাবলী থেকে সত্যের সন্ধান করা, পরিচালনা করা, নির্দিষ্ট দারিদ্রবিমোচন করা। সি পা তুং গ্রামে প্রত্যেক পরিবার নিজের পরিস্থিতি অনুযায়ী বিভিন্ন শিল্প উন্নয়ন করে। কেউ কেউ মৌমাছি পালন করে, কেউ কেউ মিয়াও জাতির বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সূচিকর্ম করে। মা এ্য শান গ্রামে মানুষরাও নিজের জন্য উপযোগি এমন একটি উন্নয়ন পথ খুঁজে পাচ্ছে। এটাও সি পা তুং গ্রাম থেকে পাওয়া সবচেয়ে ভাল একটি অভিজ্ঞতা। গ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক উ সান ই বলেন, অদূর ভবিষ্যতে গ্রামবাসীরা একসাথে তিন তলার বাড়িতে বাস করবে। মাঠে চাষ করা হবে নানা রকমের ফসল। গ্রামের বাজারে গ্রাম বাসীরা নিজের পণ্য বিক্রয় করবে। মে ও জুন মাসে, পেওনি ফুল ফোটার সময়। তখন আরও বেশি পর্যটক এখানে আসবে। তখন মা এ্য শান পরিণত হবে আসল সুন্দর গ্রামে।

২০১৭ সালে মা এ্য শান গ্রাম চাং চিয়া চিয়ে এলাকার ১০টি শ্রেষ্ঠ পর্যটন গ্রামের অন্যতম নির্বাচিত হয়। ৩০ ডিসেম্বর, গ্রামে থু চিয়া জাতির ঐতিহ্যিক ভোজ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ২০০টি টেবিলে বসে গ্রামের সবাই একসাথে খাবার খায়।

জানা গেছে, চাং চিয়া চিয়ে শহরে ২০১৭ সালে ৯০টি গ্রামের মোট ৪৯ হাজার মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়। স্থানীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিল্প উন্নয়ন করা চাও চিয়া চিয়ের দারিদ্রবিমোচন পদ্ধতি। এই মডেল আরও বেশি গ্রামে কাজে লাগবে। মা এ্য শান গ্রামের সাফল্য এখানেই।

(শিশির/মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040