সুরের ধারায়---বসন্ত উত্সব
  2018-02-15 14:14:46  cri

 



বন্ধুরা, আপনারা শুনচ্ছেন চীন বসন্ত উত্সব চীনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী একটি উত্সব। মাসের অর্ধেক লেগে যায় এ উত্সবে। এ সময় সারা দেশে উত্সবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। আজ চীনা চান্দ্রবর্ষের শেষ মাসের শেষ দিন, চীনারা এই দিনের সন্ধ্যাকে 'ছুসি' বলে। চীনা ভাষায়, 'ছু' মানে বিদায় দেওয়া, আর 'সি' মানে রাত। তাই ছুসি'র অর্থ বছরের শেষ রাতকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো।

বাংলাদেশে এটি সাধারণ একটি রাত। তবে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের চীনে আনন্দের রাত এটি! এখানে সবাই আনন্দের সঙ্গে বসন্ত উত্সবের প্রথম দিনের জন্য অপেক্ষা করছে! আজকের বিশেষ এই সময় আমাদের অনুষ্ঠানে চীনের বসন্ত উত্সবসংক্রান্ত কিছু গান শোনাবো। আশা করি গানের মাধ্যমে এই আনন্দ আপনাদের কাছে পৌঁছে যাবে।

বসন্ত উত্সবের কথা বললে তিন দিনেও তা শেষ হবে না! বসন্ত উত্সবের অসংখ্য রীতিনীতি ও অনুষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিবারের সঙ্গে মিলন। চীনের একটি প্রবাদে বলা হয়, টাকা থাকুক বা না থাকুক বসন্ত উত্সবের সময়ে বাড়ি ফিরতেই হবে।

এ কথার বাস্তবতা চীনাদের জীবনে প্রতিফলিত হয়েছে। বসন্ত উত্সবের সময় সাধারণত চীনে শীতকাল এবং সবচেয়ে ঠাণ্ডা সময়! আর বহু লোকের পক্ষে ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করা খুব কঠিন কাজ। কিন্তু যাই হোক না কেন, চীনাদের বাড়ি ফিরে যাওয়া কেউ ঠেকাতে পারে না। কারণ পরিবার হলো সঠিক শান্তির উত্স। বাড়ি ফিরলেই সব ক্লান্তি ও দুঃখ দূর হয়ে যায়।

রাড়ি ফেরার পর কি হয়? নিশ্চয়ই সবাই একসঙ্গে খাবার খায়। বছরের শেষ খাওয়া বা 'নিয়ান ইয়ে ফান' সম্পন্ন করা ছুসি'র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নিয়ান ইয়ে ফান পুনর্মিলনের প্রতীক, সবার সঙ্গে সুন্দর সময় উপভোগের একটি সুযোগ, নতুন বছরের জন্য শুভকামনা, মনের আনন্দ ও সুখী জীবনের বহিঃপ্রকাশ, পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার প্রতিফলন এবং নববর্ষ উদযাপন। এ সময় চীনারা খাবারের মাধ্যমে এসব অর্থ ও মনের কথা প্রকাশ করে। চীনাদের কাছে নিয়ান ইয়ে ফান শুধু মজার খাবার উপভোগই নয়, বরং সুখের স্বাদ আস্বাদনের সময়। আর এই খাবার ও সুখ-স্মৃতি মনে থাকে চিরদিন!

উৎসবের সময়ে লোকেরা পরস্পরকে উপহার দেয়। চীনের বসন্ত উৎসবেও উপহার দেওয়া হয়। তবে সাধারণ উপহার ছাড়া, বসন্ত উৎসবে চীনারা লাল খামে ভরে শিশু, তরুণ ও বন্ধুদের টাকা দেয়। চীনারা লাল খামকে বলে 'হোং পাও।' চীনা সংস্কৃতিতে লাল রং সৌভাগ্যের প্রতীক। লোকেরা হোং পাও দেওয়ার মাধ্যমে শিশুদের ওপর থেকে অকল্যাণ দূর করা এবং নতুন বছর সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কামনা করে। বর্তমানে চীনারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডিজিটাল হোং পাও দেয়। ডিজিটাল হোক বা প্রকৃত লাখ খাম হোক, হোং পাওতে দেওয়া টাকাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়; গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষের শুভকামনা!

 

চীনের বসন্ত উৎসবের প্রস্তুতি আসলে প্রায় আধা মাস আগে থেকে শুরু হয়। রীতি অনুসারে প্রতিদিন বিশেষ কাজ করতে হয়, যেমন বাড়িঘর পরিষ্কার করা, রন্ধন দেবতার পূজা করা, দরজায় বড় বড় অক্ষরে কবিতার ছত্র এঁটে দেওয়া, উৎসবের বিশেষ খাবার তৈরি করা ইত্যাদি। এসব কাজ করতে করতে বসন্ত উৎসব চলে আসে। আর এই টুকিটাকি কাজের মাধ্যমে পরিবারের সবাই যেন আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। 'বসন্তের প্রশংসা' গানে সেই আনন্দের গল্পই বলা হয়েছে। চলুন গানটি শুনি।

বন্ধুরা, ছুসি চীনাদের কাছে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান একটি সময়। প্রতি নতুন বছর পরিবারের আনন্দময় মিলনের সময় ঘনিয়ে আসে। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে। তাই বসন্ত উত্সব যেন চীনাদের জীবনের একটি রেকর্ড! এটি চার ঋতুর পরিবর্তন ও সময়ের পরিবর্তন মনে করিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে আমারাও সময়কে আরো গুরুত্ব দেওয়া শিখি।

 

বসন্ত উত্সবের সময়, চীনারা একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে। এ ছাড়া আরও অনেক রীতিনীতি আছে। যেমন আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে উত্সবের শুভেচ্ছা জানানো, আতশবাজি পোড়ানো, মন্দিরমেলায় যাওয়া, ঐতিহ্যবাহী লোকজ পরিবেশনা দেখা ইত্যাদি। এক কথায়, বসন্ত উত্সবের প্রতিপাদ্য হলো মিলন ও আনন্দ।

সবাই উত্সবের আনন্দঘন সময়কে দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখতে চায়। আজকের অনুষ্ঠান শেষে আরও একটি আনন্দের গান 'পরস্পরকে ভালোবাসা' শোনাবো। আশা করি এ আনন্দময় সুরের ছোঁয়া আপনাদের মনে দীর্ঘ সময় থাকবে। 

(তুহিনা/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040