গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করে গেলেন সুইজারল্যান্ডে প্রেসিডেন্ট আঁলা বেরসে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, উন্নয়ন সহযোগিতা ছাড়াও গুরুত্বপায় রোহিঙ্গা ইস্যু। একান্ত বৈঠক শেষে দুদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন এবং যৌথ বিবৃতি দেন দুনেতা।
যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে সুইজারল্যাণ্ডের সঙ্গে সুসম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরেন। রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের ভূমিকার কথা তুলে ধরে সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে সুইস প্রেসিডেন্টের সহযোগিতা কামনা করেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্র চর্চাসহ সরকারের সাফল্যের প্রশংসা করেন সুইস প্রেসিডেন্ট। রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকার ভূঁয়সী প্রশংসা করেন বেরসে। এ সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এ জন্য আরো ১২ মিলিয়ন সুইস ফ্রা দেয়ার ঘোষণাও দেন সুইস প্রেসিডেন্ট। যৌথ বিবৃতিতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অর্জনে সহযোগিতারও প্রস্তাব দেন সুইস প্রেসিডেন্ট। এছড়া বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগেরও আগ্রহ দেখান তিনি।
৬ ফেব্রুয়ারি সুইস প্রেসিডেন্ট কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা পরিচালিত হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। রোহিঙ্গাদের মুখে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের কথা শোনেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে সুইস প্রেসিডেন্ট বলেন, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে মহানুভবতা দেখিয়েছে তা নজিরবিহীন। এ জন্য আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। এ সংকট সমাধানে সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে আবারো প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা-ওআইসির পর্যটন মন্ত্রীদের দশম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায় গত সপ্তাহে। রাজধানীর একটি হোটেলে ৬ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পর্যটনকে দ্রুত বিকাশমান একটি খাত হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে পর্যটন।
ইসলামের মহৎ মূল্যবোধগুলোকে সমুন্নত রেখে সকলের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর সংহতিকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ওআইসির সদস্য দেশগুলোর সম্পর্ক হবে পারস্পরিক বিশ্বাস ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে। রোহিঙ্গা সমস্যায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানেোর জন্য ওআইসির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পরবর্তী দুই বছরের জন্য ইসলামিক কনফারেন্স অব ট্যুরিজম মিনিস্টার্সের চেয়ারপারসন নির্বাচিত করা হয় বাংলাদেশকে। ঢাকায় ওআইসি পর্যটনমন্ত্রীদের এ গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন ওআইসির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করবে এবং এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে বলে মানে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ সব জাতীয়-আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবার খবরটি সকল মহলে একটি শুভসংবাদ হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি পদে আব্দুল হামিদের পক্ষে তিনটি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। প্রথমটি জমা দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অপর দুটি জমা দেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। আর কোনো প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা না পড়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ৭ ফেব্রুয়ারি আব্দুল হামিদকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করেন। ২৩ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবেন।
জাতীয় সংসদের ৭ বারের নির্বাচিত সদস্য, দুইবারের স্পিকার রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। রাজনীতিবিদ হিসেবে তার সততা, দূরদৃষ্টি সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে অতীতে। দ্বিতীয় মেয়াদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচতি করা একজন রাজনীতিকের প্রতি বিরল সম্মানের প্রকাশ বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট মহল।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।