সংবাদ পর্যালোচনা: চীনের নিরাপত্তাবোধ, মূল রহস্য কী?
  2018-02-11 12:37:15  cri

ফেব্রুয়ারি ১১: চীনের দেশি-বিদেশি মানুষের মধ্যে 'নিরাপত্তাবোধ' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্বে এগিয়ে রয়েছে চীন। এর পেছনে 'গোপন রহস্য' কী? চীনকে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বিশ্ব নিরাপত্তা র‍্যাংকিংয়ে চীনের অবস্থান প্রথম সারিতে। অথচ, চীনের মাথাপিছু পুলিশ সদস্য এবং স্থিতিশীলতা রক্ষায় মাথাপিছু ব্যয় বিশ্বের উন্নত দেশের তুলনায় কম! তাহলে কীভাবে চীনে সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষা করা হয়? কীভাবে 'নিম্ন ব্যয়ে উচ্চ স্থিতিশীলতা' বাস্তবায়ন করা হয়? ২০১৭ সালে চীনে সবচেয়ে কম হত্যা মামলা হয়েছে। গুরুতর সহিংস অপরাধের হার ২০১২ সালের তুলনায় ৫১.৮ শতাংশ কমেছে। সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে ৯৫.৫৫ শতাংশ জনগণ সন্তুষ্ট। চীনা জনগণের পাবলিক সিকিউরিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়াং তা ওয়ে মনে করেন, মূল্যায়ন সূচক দেখলে বোঝা যায়, চীনা সমাজের নিরাপত্তা সূচক এগিয়ে রয়েছে। তিনি বলেন,

বিশ্বব্যাপী 'বিষয়ভিত্তিক' ও 'বস্তুনিষ্ঠ' সূচক দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তাবোধ মূল্যায়ন করা হয়। 'বিষয়ভিত্তিক সূচক' মানে জনগণের নিরাপত্তাবোধ, সন্তুষ্টির হার, পুলিশের কাজের স্বীকৃতি ইত্যাদি। 'বস্তুনিষ্ঠ সূচক' অর্থ মামলা ও তার সমাধানের হার।

এই দুই সূচক অনুযায়ী বিশ্বের প্রথম সারিতে আছে চীন।

অনেক বিদেশি নেতা ও বিশেষজ্ঞদেরও একই মত। অধ্যাপক ওয়াং তা ওয়ে বলেন, অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বিশ্বের সামনে চীনের দুটি বিস্ময়! বিস্ময়ের পেছনে একটি সত্যি হলো, চীনে পুলিশের সংখ্যা বিশ্বমানের চেয়ে কম এবং জিডিপিতে গণ-নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ব্যয়ের অনুপাত অন্যান্য দেশের চেয়েও কম।

৭১ বছর বয়সী নারী ওয়াং বেইজিংয়ের ছাওইয়াং এলাকার এক স্বেচ্ছাসেবক নিরাপত্তারক্ষী। কিছুদিন আগে, কমিউনিটি পরিভ্রমণের সময় তিনি খেয়াল করেন যে, নতুন আসা এক যুবক কখনও কাজ করতে বাইরে যায় না! মাঝে মাঝে তার বাসায় ভিন্ন ভিন্ন মানুষ আসে! তা ছাড়া, সে একা থাকলেও প্রতিদিন বেশ কয়েকবার খাবারের অর্ডার দেয়। মিসেস ওয়াং কমিউনিটি পুলিশকে এ তথ্য দেন। তার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ছাওইয়াং এলাকার পুলিশ ওই যুবকসহ ছয় মেয়েকে গ্রেফতার করে। তারা পতিতাবৃত্তির কাজে জড়িত ছিল।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ, ছাওইয়াং এলাকার নিবন্ধভুক্ত স্বেচ্ছাসেবক নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা এক লাখ ৪০ হাজারের বেশি। অর্থাত্‌ প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবক আছে।

অধ্যাপক ওয়াং তা ওয়ে মনে করেন, প্রান্তিক পর্যায়ে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা সামাজিক ব্যবস্থাপনার চাবিকাঠি। তিনি বলেন, ব্যাপক ব্যবস্থাপনায় জনসাধারণের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দেওয়া চীনা নিরাপত্তা কর্মের একটি বৈশিষ্ট্য। চতুর্থ পুলিশ বিপ্লবের কেন্দ্রীয় ধারণা হলো, অপরাধের উত্স সমাজে। তাই অপরাধ প্রতিরোধের মূল শক্তি হলো জনসাধারণ।

কমিউনিটির নিরাপত্তা স্বেচ্ছাসেবক ছাড়া, উচ্চমানের প্রযুক্তিও নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হচ্ছে। 'স্কাইনেট' ড্রোন এবং বিগ ডেটা প্ল্যাটফর্ম একদিকে অপরাধীদের ভয় দেখায়, অন্যদিকে জনগণের নিরাপত্তাবোধ বাড়ায়।

ওয়াং তা ওয়ে বলেন, ব্যক্তি ও যন্ত্রপাতিসহ হার্ডওয়্যার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা পুলিশের ধারণাও পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি বলেন, পাশ্চাত্য পুলিশের ধারণা নিয়েও আমরা গবেষণা করি। প্রযুক্তি উন্নয়ন, ধারণা নবায়ন এবং প্রান্তিক পর্যায়ের নিরাপত্তা আমাদের সামাজিক ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ তিনটি শর্ত।

(শিশির/তৌহিদ/সুবর্ণা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040