চীনের সমাজে নিরাপত্তাবোধের উত্স কোথায়?
  2018-02-09 10:48:20  cri
সম্প্রতি চীনে অপরাধী-চক্র নির্মূল অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য সমাজের তৃণমূল পর্যায় থেকে জনগণের জন্য হুমকি নির্মূল করা। এই অভিযানকে বিশেষ সংগ্রাম বলে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিসি'র কেন্দ্রীয় সরকার ও রাষ্ট্রীয় পরিষদের যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই বিশেষ সংগ্রাম চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে সিপিসি'র কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। এটি কেবল সামাজিক স্থিতিশীলতা ও দেশের স্থায়ী নিরাপত্তার সাথেই জড়িত নয়, বরং তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা জোরদার, মহাপ্রকল্প বাস্তবায়ন, মহান ব্রতকে সামনে এগিয়ে নেওয়া এবং মহাস্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা।

আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা এ বিষয়েই আলোচনা করবো।

রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন দল হিসেবে সিপিসি সবসময় চীনা জনগণের সুখী জীবন, সুশৃঙ্খল সমাজ ও দেশের স্থায়ী নিরাপত্তা বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। দেশি-বিদেশি অবস্থা থেকে বোঝা যায়, এমন পরিবেশ গড়ে তোলার ব্যাপারটি সহজ কাজ নয়। কারণ, একদিকে আয়তনের দিক থেকে চীন একটি বড় দেশ, জনসংখ্যার দিক থেকেও বিশ্বে প্রথম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামোর বিন্যাস ও ব্যাপক পুনর্গঠন ছিল অভূতপূর্ব। অন্যদিকে, বৈশ্বিক পরিস্থিতি অশান্ত, আঞ্চলিক পরিস্থিতিও জটিল। এটি চীনের সামাজিক ব্যবস্থার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।

সংশ্লিষ্ট জরিপ থেকে বোঝা যায়, ২০১৭ সালে চীনে গুরুতর সহিংস অপরাধের মামলার সংখ্যা ২০১২ সালের চেয়ে ৫১.৮ শতাংশ কমেছে। সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় জনসাধারণের সন্তুষ্টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫.৫৫ শতাংশ। বেশিরভাগ মানুষ মনে করে যে, বিশ্বের নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম চীন। বিশ্বের বুকে চীনের দুটো পরিচয় হলো, সামাজিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এবং দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

উল্লেখ্য, এই সাফল্যের পেছনে আর্থিক খরচ ও নিরাপত্তা কর্মীর ব্যবহার বেশ কম। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থার সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের দেশগুলোতে গড়পড়তা ১ লাখ মানুষের জন্য পুলিশ রয়েছে ৩০০জন। সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যানে বলা হয়, চীনে ১ লাখ মানুষের জন্য পুলিশের পরিমাণ ১৪০জন। অর্থাত ১০০ জন মানুষের জন্য পুলিশ সদস্য ০.১৪ জন! যা বিশ্বের গড়পড়তা মানের চেয়ে অনেক কম।

পুলিশ ও জনগণের এতো কম অনুপাত নিয়ে চীন কীভাবে কার্যকর সামাজিক নিরাপত্তা বাস্তবায়ন করছে? এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন।

আসলে চীনের সামাজিক ব্যবস্থা বা নিরাপত্তাবোধ শুধু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয় না। এটি নির্ভর করে চীনের বাস্তব অবস্থার ওপর। এটি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিসি'র স্ববৈশিষ্ট্য ও সুবিধা কাজে লাগানোর সুফল। বিশেষ করে সিপিসি'র অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর, অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক নির্মূল অভিযান চালিয়েছে চীনের ক্ষমতাসীন দল সিপিসি। এর মধ্যে রয়েছে মাফিয়া দমন, মাদকপাচার রোধ ও অশ্লীলতা নির্মূল প্রভৃতি। এর মাধ্যমে অপরাধের উত্স কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। এতে জনগণের সন্তোষ বৃদ্ধি পায় এবং সমাজের স্থায়ী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয়।

চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। লোকসংখ্যার প্রবাহ দিন দিন বেড়েছে এবং সামাজিক দ্বন্দ্বও বহুমুখী ও জটিল হয়ে উঠেছে। এই নতুন পরিস্থিতিতে ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পশ্চিমা দেশগুলোর আধুনিক সামাজিক ব্যবস্থাপনার তত্ত্বকে কেন্দ্র করে 'সামাজিক নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সার্বিক ব্যবস্থাপনা'র ধারণা উত্থাপন করেছে সিপিসি। এই ধারণা সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি অস্থিতিশীল উপাদান দূর করতে এবং সমাজের স্থায়ী স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহায়ক হয়েছে।

চীনের সামাজিক ব্যবস্থাপনার এই রূপ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্যও চমত্কার দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি তা বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

(ওয়াং হাইমান/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040