সুরের ধারায়--চীনা গায়ক Tank
  2018-02-08 16:24:19  cri



আজকের অনুষ্ঠান চীনের তাইওয়ানের একজন গায়কের সঙ্গে আপনাদের পরিচয়ে করিয়ে দেবো। তার নাম লিয়ু চিয়ান চুয়াং। এই শিল্পীর একটি ইংরেজি নাম হলো 'ট্যাংক (Tank)'। এই নামে তিনি বেশি পরিচিত।

ট্যাংক ১৯৮২ সালে তাইওয়ান প্রদেশের থাইতোং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। খুব ছোট সময় থেকেই সংগীতের প্রতি তার ভীষণ আগ্রহ ছিলো। প্রাথমিক স্কুলে থাকতেই তিনি গিটার বাজানো শিখেন। মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় তিনি সহপাঠীদের নিয়ে রক সংগীত দল শুরু করেন। দলের প্রধান গায়ক ছিলেন তিনি নিজেই। সে সময় তিনি নিজে ড্রামস বাজানো শেখেন।

পেশাদার গায়ক হিসেবে পরিচিত হওয়ার আগে ট্যাংক ছয় বছর বারে গান গেয়েছেন। বারে তিনি অন্যান্য গায়কের গানের পাশাপাশি নিজের লেখা গানও গেয়েছেন। এ সময় সংগীত জগতের এক ব্যক্তি তার গান শোনেন এবং ট্যাংকের প্রতিভায় বিস্মিত হন। তিনি ট্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পেশাদার শিল্পীর খাতায় নাম লেখেন। পেশাদার গায়ক হিসেবে নিজেকে 'ট্যাংক' বলে পরিচয় দেন তিনি। মূলত, এরপর থেকেই তিনি ট্যাংক।

২০০৫ সালে ট্যাংক তাইওয়ানের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ 'KO One'-এর জন্য গান গান। তিনি ছিলেন নতুন গায়ক। কেউ তাকে চিনতো না। টিভি সিরিজ প্রচারিত হলে তার গানও জনপ্রিয় হয়। তখন থেকে তিনি সবার কাছে পরিচিত পেতে শুরু করেন।  

২০০৬ সালে ট্যাংক চীনের মূলভূভাগের একটি টিভি সিরিজের জন্য গান গেয়েছেন। এই টিভি সিরিজে প্রাচীন চীনের গল্প বলা হয়েছে। তাই ট্যাংক রচিত এই গানে পপ সংগীতশৈলীর পাশাপাশি প্রাচীন চীনা সংগীতের অনেক উপাদান জড়িয়ে রয়েছে। টিভি সিরিজ প্রচারের পর এই গানও অনেক জনপ্রিয়ে হয়। আর তখন থেকেই সারা চীনের লোকেরা ট্যাংকে পছন্দ করতে শুরু করে।

একই বছর ট্যাংক তার প্রথম অ্যালবাম 'Fighting' প্রকাশ করে। অ্যালবামের ১৪টি গান সব তিনি নিজে রচনা করেছেন। গানগুলোর মধ্যে হিপ-হপ, R&B, রকসহ বিভিন্ন শৈলী আছে। বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও স্বপ্ন তার গানের প্রধান বিষয়। তাই তরুণরা তার গান অনেক পছন্দ করে। সে বছর তার অ্যালবামের প্রায় এক লাখ কপি বিক্রি হয়, এটি তাইওয়ানের শীর্ষ বিক্রি হওয়া অ্যালবামে পরিণত হয়। এই অ্যালবামের জন্য ট্যাংক ২০০৬ সালে বিভিন্ন সংগীত অ্যাওয়ার্ডের 'শ্রেষ্ঠ নতুন গায়ক' পুরস্কার অর্জন করেন। 'একা প্রেমের গান গাই' গানটিও 'সবচেয়ে জনপ্রিয় গান' পুরস্কার পায়। বন্ধুরা, এখন শুনবেন সুন্দর প্রেমের গান।

২০০৭ সালে ট্যাংক তার দ্বিতীয় অ্যালবাম প্রকাশ করেন। অ্যালবামের সব গান তিনি নিজে তৈরি করেছেন। তার শ্রোতা ও ফ্যানদের উত্সাহিত করার জন্য অ্যালবাম নাম 'Keep Fighting' দিয়েছেন তিনি। অ্যালবামের অধিকাংশ গানের পেছনে বাস্তব ঘটনার অনুপ্রেরণা রয়েছে। ট্যাংক সংগীতের মাধ্যমে জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন। তাই তার গান শুনে ইতিবাচক শক্তি পাওয়া যায়।

যখন সবাই ভাবছে ট্যাংকের সংগীত জীবন আরো উজ্জ্বল হতে যাচ্ছে, তখন তার এক দুর্ঘটনা ঘটে! ট্যাংক আসলে জন্মাবধি হৃদরোগে ভুগছিলেন! দ্বিতীয় অ্যালবাম প্রচারের সময় তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। তাকে সব কাজ বন্ধ করে চিকিৎসা নিতে হয়।

দুবছর বিশ্রাম নেন তিনি। এরপর আবার আগের ধারায় ফিরে আসেন ট্যাংক। ২০০৯ সালে তিনি তৃতীয় অ্যালবাম প্রকাশ করেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হলে জীবন ও প্রাণের প্রতি তার বিভিন্ন অনুভূতি তৈরি হয়। আর এসব অনুভূতি তিনি গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেন।

'যদি আমি স্মৃতি হয়ে যাই' তার অ্যালবামের একটি গান। যদি হঠাত্ একদিন মারা যাই, তাহলে প্রিয় মানুষকে কি কি বলবো?

গানের কথায় তিনি লিখেছেন, যদি আমি স্মৃতি হয়ে যাই, আশা করি তুমি ভালো থাকবে। পৃথিবীর যে সৌন্দর্য আমি দেখি না, তুমি তা দেখতে পাবে। এই গানের মাধ্যমে তিনি জীবনের মূল্য সবাইকে বোঝাতে চেয়েছেন। এই গানটি সেই বছরের 'শ্রেষ্ঠ গানে'র পুরস্কার পায়। চলুন শুনি গানটি।

ট্যাংকের বড় এক বোন ছিল। সেও হৃদরোগে মারা যায়। বড় বোনের স্মরণে এক কনসার্টে 'শহরের জ্যোৎস্না' গানটি পরিবেশন করেন তিনি। গানের কথায় বলা হয়েছে, শহরের জ্যোৎস্না মানুষের স্বপ্নে আলোকিত হয়। জ্যোৎস্না, আমার বদলে তোমার কাছে থাকে, তোমাকে রক্ষা করে। যখন আমাদের ফের মিলন হবে, তখন তোমার সুখের আলো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যায়।

এতো চড়াই-উতরাই থাকলেও জীবনের প্রতি ইতিবাচক ও শক্তিশালী মনোভাব ধরে রাখেন ট্যাংক। গানের মাধ্যমে এ মনোভাব ছড়িয়ে দেন সবাইকে। আজকের অনুষ্ঠান শেষে, ট্যাংকের 'survivor' গানটি শুনবো। আশা করি সবাই শক্তিশালী মন দিয়ে জীবনের সব বাধা প্রতিরোধ করবেন।

(তুহিনা/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040