চীনে প্রথম 'পরমাণু নিরাপত্তা আইন' চালু
  2018-02-08 12:46:12  cri
পহেলা জানুয়ারি থেকে চীনে প্রথম 'পরমাণু নিরাপত্তা আইন' চালু হয়েছে। পরমাণু শক্তির নিরাপদ ব্যবহার, পরমাণু ব্যবস্থা এবং পারমানবিক উপাদানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই আইন কার্যকর করা হয়েছে। চীনের পরিবেশ রক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরমাণু নিরাপত্তা ব্যুরোর কর্মকর্তা গতকাল (বুধবার) বেইজিংয়ে বলেছেন, এই আইন পরমাণু কর্মসূচির নিরাপত্তা ও অবিরাম উন্নয়ন নিশ্চিত করবে, দেশের নিরাপত্তা ও জনস্বার্থ রক্ষা করবে, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ এবং পরমাণু বিদ্যুতের রপ্তানিকৌশল এগিয়ে নেবে।

প্রিয় শ্রোতা আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা এ বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো।

একটি বড় দেশ হিসেব চীন পরমাণু শক্তি ও প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার করে। পরমাণু বিদ্যুত্ কর্মসূচির বিভিন্ন যন্ত্রাংশের পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। অন্যদিকে পরমাণু প্রযুক্তির ব্যবহার ও উত্পাদনে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে চীন। তাই পরমাণু নিরাপত্তা জরুরি। চীনের এই প্রথম 'পরমাণু নিরাপত্তা আইনে' নিরাপত্তার বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে। চীনের জাতীয় পরমাণু নিরাপত্তা ব্যুরোর পরমাণু নিরাপত্তা তত্ত্বাবধান বিভাগের মহাপরিচালক কুও ছেং চান মনে করেন, এই আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পরমাণু নিরাপত্তা তত্ত্বাবধান জোরদার করা। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

'কঠোর মানদণ্ড, ব্যবস্থা, তত্ত্বাবধান ও নিয়মের মাধ্যমে পরমাণু প্রকল্পের নকশা, উত্পাদন, যোগাযোগ, উপাদান ও তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়াসহ সব কাজের সার্বিক তত্ত্বাবধান দরকার এবং সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে হবে। এতে পরিবেশের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।'

সেই সঙ্গে, বিভিন্ন পরমাণু ব্যবস্থার ওপর আলাদা করে ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে এই আইনে। তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ধ্বংস করতে বিভিন্ন ব্যবস্থাও নিয়েছে কর্তৃপক্ষ, যাতে সঠিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করা যায়।

উল্লেখ্য, এই 'পরমাণু নিরাপত্তা আইনে' পরমাণু প্রকল্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় 'ক্ষতিপূরণ'কে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। আইনে ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা নির্ধারণ করা হয়। আইনে বলা হয়, পরমাণু ব্যবস্থায় সক্রিয় ইউনিটটি যে কোনো ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়বদ্ধ থাকবে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এ সম্পর্কে কুও ছেং চান বলেন,

'পরমাণু নিরাপত্তা আইনে মোট ৯৪টি বিধান রয়েছে। এর মধ্যে আইনগত দায়িত্ব সম্পর্কিত বিধান ১৭টি। জরিমানার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫০ লাখ ইউয়ান। কোনো আইন লঙ্ঘিত হলে অবশ্যই আইনানুগ শাস্তি দেওয়া হবে।'

জনসাধারণের জানার অধিকারও 'পরমাণু নিরাপত্তা আইনে' সুনিশ্চিত করা হয়েছে। আইনে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় পরিষদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, স্থানীয় সরকার ও পরমাণু পরিচালনা ইউনিটের উচিত গুরুত্বপূর্ণ চূড়ান্ত নীতি নির্ধারণের সময় জনগণের মতামত শোনা, তাদের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং জনস্বার্থ রক্ষা করা। চীনের জাতীয় পরমাণু নিরাপত্তা ব্যুরোর পরমাণু নিরাপত্তা তত্ত্বাবধান কেন্দ্রের জরিপ বিভাগের মহাপরিচালক চাং চিয়া লি বলেন,

'বিশ্বের ইতিহাসে তিনটি বড় ধরনের পরমাণু দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে চেরনোবিল ও ফুকুশিমা দুর্ঘটনা। এসব ক্ষয়ক্ষতি মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। মানুষ এ ধরনের দুর্ঘটনাকে ভয় পায়। পরমাণু নিরাপত্তা তত্ত্বাবধানের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হিসেবে আমাদের উচিত জনসাধারণের নিরাপত্তাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া।'

এদিকে, এ বছর 'পরমাণু নিরাপত্তা আইন চালুর বর্ষ' উপলক্ষ্যে কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে। চীনের পরিবেশ রক্ষা মন্ত্রণালয় এবং চীনের জাতীয় পরমাণু নিরাপত্তা ব্যুরো যৌথভাবে এ উদ্যোগ নেবে। এর মাধ্যমে সার্বিকভাবে পরমাণু নিরাপত্তা তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা জোরদার হবে এবং পরমাণু নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বাড়বে।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সদস্য দেশগুলো পরমাণু নিরাপত্তার সার্বিক মূল্যায়ন করেছে। তথ্য অনুযায়ী বিগত ৩০ বছরে চীনে দ্বিতীয় পর্যায়ের পরমাণু দুর্ঘটনা ঘটেনি।

(ওয়াং হাইমান/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040