0207
|
গত শতাব্দীর ৯০ দশকে, উ ছি জেলা পানি ও ভূমির ক্ষয়ের পরিমাণ সারা জেলার আয়তনের ৯০ শতাংশের বেশি। হুং হে নদীর উচ্চ ও মধ্য অববাহিকা অঞ্চলে পানি ও ভূমি ক্ষয়ের সবচেয়ে গুরুতর একটি জেলার অন্যতম। উ ছি'র সরকারি একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তখনকার উ ছি জেলায় মেঘমুক্ত হলে দমকা বাতাসে উড়ছে বালি, বৃষ্টি হলে বন্যা হয়।
২০ বছর পর, এখানে বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। উপাত্ত থেকে সহজে বোঝা যাবে এই পরিবর্তন।
২০ বছর আগে এখানে গড় বৃষ্টিপাত ছিল ৪৭৮ মিলিমিটার এখন তা ৫৮২ মিলিমিটার। পানি ও ভূমি ক্ষয়ের পরিমাণ ছিল ১৫.৩ হাজার টন এবং এখন তা কমে হয়েছে ৫ হাজার টন। বনায়নের হার ১৯.২ থেকে বেড়েছে ৭২.৮ শতাংশে।
১৯৯৮ সালে উ ছি জেলায় চীনে প্রথমে চালু হয় 'আবাদি জমির পরিবর্তে বনাঞ্চল গড়ে তোলা' প্রকল্প। পাহাড়ে পশুপালন নিষিদ্ধ করা হয় এবং কম ফলনসম্পন্ন ভূমিতে বনাঞ্চল গড়ে তোলা হয়।
তবে নতুন নীতি খুব মসৃণভাবে চালু করা গেছে তা নয়। এখানে মানুষ শতাধিক বছর ধরে পশুপালন করতেন এবং তাঁরা নতুন নীতিকে বুঝতে পারেননি। স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন
উ ছি জেলার ভেড়া বেশ ছিল। তখনকার সারা জেলায় ভেড়ার সংখ্যা ৫ লাখের বেশি। পশুপালন নিষেধাজ্ঞা চালু হবার পর ভেড়া পশুপালক এর বিরোধিতা করতেন। আমরা আবিষ্কার করি কিছু পশুপালক আমাদের পরিদর্শন এড়িয়ে রাতে পশুপালন করে। এ প্রেক্ষাপটে উ ছি জেলায় এক দিকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ নীতি চালু করে অন্য দিকে আস্থানায় পশুপালন পদ্ধতি প্রসার করে। সরকারের উদ্যোগে আনা হয় 'ছোট পিঠের ভেড়া'। এ রকমের ভেড়ার পালন সহজ এবং বিক্রির দাম বেশি। পাশাপাশি, প্রতি মু জমির জন্য কৃষকদের ১৬০ ইউয়ান ভর্তুকি দেয় সরকার।
চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত উ ছি জেলায় আবাদি জমির পরিবর্তে বনাঞ্চল গড়ে তোলার আয়তন ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ মু এবং ১৯১ কোটি ইউয়ান অর্থ ভর্তুকি বরাদ্দ করে। চীনে সবচেয়ে আগে এবং দ্রুত আবাদি জমির পরিবর্তে বনাঞ্চল গড়ে তোলা নীতি চালু হয় উ ছি জেলায় এবং গড়ে তোলা বনের আয়তন বৃহত্তম এবং মানুষের সবচেয়ে উপকৃত হওয়া একটি জেলা।
'আবাদি জমির পরিবর্তে বনাঞ্চল গড়ে তোলা' প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ উন্নত হয় এবং ভূমি ও পানি ক্ষয়, বন্যাও কম হয়। গ্রামীণ অর্থনৈতিক কাঠামোও পরিবর্তন হয়েছে। উ ছি জেলায় উন্নয়ন হয় ফল শিল্প। পাহাড়ে চাষ করা হয় পিচ গাছ, এপ্রিকট গাছসহ অন্যান্য ফল। ২০১৫ সাল থেকে আপেল গাছ রোপণ করা জায়গার আয়তন ৪ হাজার মু এবং গ্রীণ হাউস শিল্পও উন্নয়ন করা হয় উ ছি জেলায়। শিল্প উন্নয়ন, প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ ও শ্রম রপ্তানির মাধ্যমে কৃষকদের আয় প্রবৃদ্ধি পায়।
২০১৬ সালে উ ছি জেলার মানুষ মাথাপিছু নিট আয় ১৯৯৭ সালের ৮৮৭ ইউয়ান থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৫৩৮ ইউয়ানে।
ভূমির রূপান্তর ঘটেছে এবং পাল্টে গেছে মানুষের ধারণা। ৫৯ বছর বয়সী কৃষক লিন চি হাই সাংবাদিককে জানিয়েছেন, আগে জমিতে এক বছরের মতো কাজ করলেও এমনকি বীজের ব্যয়ের অর্থও আয় করতে পারত না। তবে সবাই জানায়, এখন জাতীয় ভর্তুকি ছাড়াও অর্থ আয় করার পদ্ধতি অনেক।
আপেল,পিচসহ নানা ফল গাছ রোপণ করার আয় অনেক বেড়েছে। এক মুরে আয় এখন ৫ থেকে ৬ হাজার ইউয়ানের বেশি। ফসল চাষ করলে আয় মাত্র ১০০ থেকে ২০০ ইউয়ান।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে উ ছি জেলায় উন্নয়ন করা হবে বিপ্লব বিষয়ক পর্যটন শিল্প। ইতিহাস,বিপ্লব, কৃষি ও ঐতিহ্যসহ নানা বিষয় আন্তর্ভূক্ত করা এমন একটি পর্যটন শিল্প তৈরি হবে। এটাও উ ছি মানুষের আয় বৃদ্ধির নতুন একটি বিষয় হবে।
(শিশির/মহসীন)