সুরের ধারায়--জন্মস্থান
  2018-02-02 10:21:04  cri

বর্তমানে অনেক মানুষ পড়াশোনা বা কাজের জন্য নিজ জন্মস্থান ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছে। অনেকে বিদেশেও যায়। এসব মানুষ দীর্ঘ সময় জন্মভূমি থেকে দূরে থাকে। হয়তো অনেকে উত্সবের সময়ও বাড়ি ফিরতে পারে না। কেউ কেউ বছরের পর বছর বিদেশে থাকে; কেউ আবার স্থায়ীভাবে বিদেশে বসবাস করতে শুরু করে। বাস্তবতা হলো, জন্মভূমি থেকে দূরে থাকলেও সবার মনে জন্মভূমির জন্য বিশেষ একটি স্থান রয়েছে। তারা প্রায়শই জন্মভূমির কথা মনে করে।

বন্ধুরা, বুঝতেই পারছেন আজকের অনুষ্ঠানে আমি জন্মভূমি-সংক্রান্ত কিছু গান পরিবেশন করবো।

যে ভূমিতে মানুষ জন্মগ্রহণ করেছে, বেড়ে উঠেছে সেটাই তার জন্মভূমি। জীবনে বড় হয়ে ওঠার সুন্দর সময়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে হাজারো স্মৃতি। এ কারণেই জন্মভূমির প্রতি মানুষ হৃদয়ের টান অনুভব করে। বড় হওয়ার পর মানুষ বুঝতে পারে, তার পরিচিত জন্মভূমির বাইরে রয়েছে বিশাল এক জগত! সেই হাতছানিতে মানুষ ছুটে যায় দূর থেকে দূরে। অনেকে জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে বা নতুনকে জানার জন্য দেশান্তরী হয়। পড়াশোনা, কর্মসংস্থান ইত্যাদি প্রয়োজন তো রয়েছেই।

এরকম বিভিন্ন কারণে মানুষ যখন ঘরছাড়া হয়, তখন বুঝতে পারে জন্মস্থানের গুরুত্ব। তখন তার হৃদয়ে জেগে ওঠে জন্মভূমির প্রতি মায়া, ভালোবাসা!

আচ্ছা বন্ধুরা, আপনার জন্মস্থানে কি নদী ও সেতু আছে? সেই সেতুতে বা নদীর তীরে কি কখনও খেলাধুলা করেছেন? নদীর পাশে গাছ-গাছালি, পুরানো বাড়িঘর, সেসব কি আপনাকে পিছু ডাকে? হয়তো ফিরে যাওয়া অনেক কঠিন, চাইলেই ছেলেবেলার সেই গ্রামে যাওয়া যায় না! তাইনা?

'মুতানচিয়াং' গানটিতে সে কথাই বলা হয়েছে। গানে গায়ক নিজ জন্মস্থানের মুতানচিয়াং নদীর কথা বলেছেন। এখানে বলা হয়েছে,

"যাওয়া যায়-না আর,

যেন বহু দূরে তুমি!

যেখানে যায়-না ফেরা,

সে আমার জন্মভূমি! 

 

 জন্মস্থানের কোন বিষয়গুলো আপনার সবচেয়ে প্রিয়? কেউ বলবেন বিশেষ কোনো খাবার, অথবা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, হয়তো কোনো বিশেষ আচার অনুষ্ঠান, তাইনা? দূরে থাকার সময় সেই প্রিয় জিনিসগুলো সামনে এলেই জন্মভূমির কথা মনে পড়ে!

'জন্মভূমির মেঘ' গানটি গত শতাব্দীর ৮০ দশকে চীনে বেশ জনপ্রিয় হয়। গানে সুন্দর মেঘকে জন্মস্থানের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মেঘ দেখলেই জন্মভূমির কথা মনে পড়ে। মেঘ দেখে মনের দুঃখ যেন দূরে হারিয়ে যায়! গানের কথায় বহু মানুষ মুগ্ধ হয়।

বন্ধুরা, আপনার জন্মভূমির অতীত আর বর্তমান রূপ কি একই রকম? নিশ্চয়ই অনেক পরিবর্তন হয়েছে! অতীত ও বর্তমান রূপের মধ্যে কোনটি আপনার প্রিয়? এবারের গান 'ধানের সুগন্ধ!' এই গানে ছোটবেলার জন্মভূমির কথা বলা হয়েছে। শুনুন, গানটির প্রফুল্ল সুরে নিশ্চয়ই আপনার ছোটবেলার স্মৃতি জেগে উঠবে।

দূরে থাকা মানুষ কোন্‌ সময় জন্মভূমিকে বেশি অনুভব করেন? নিশ্চয়ই উত্সবের সময়। চীনের বসন্ত উত্সব, মধ্য-শরত্ উত্সব, ছোং ইয়াং উত্সবসহ অনেক উত্সবের গুরুত্বপূর্ণ রীতি হলো, জন্মভূমিতে ফিরে পরিবারের সঙ্গে মিলন। আর জন্মস্থানে ফিরতে না পারলে সবাই সবাইকে মিস করে! এমন অনুভূতি প্রায় সবারই আছে।

প্রাচীনকাল থেকে চীনারা এ নিয়ে অসংখ্য গান-কবিতা লিখেছে। এমনই এক প্রাচীন কবিতায় সুরারোপ করে তৈরি করা হয়েছে 'জন্মভূমিকে অনুভব' গানটি। 

 

প্রাচীনকালে দূরের মানুষ বাড়ির মানুষের কাছে চিঠি লিখতো। প্রযুক্তির কল্যাণে এ নিয়ম বদলে গেছে। এখন মানুষ ফোন করে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিও আলাপ করে। কেউ আর চিঠি লেখে না বা চিঠির জন্য অপেক্ষা করে না। চীনা ভাষায় পরিবারের জন্য লেখা চিঠিকে 'চিয়া শু' বলা হয়। এ শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন অনুভূতি!

 

অতীতের সেই জন্মভূমিতে কোনো রাস্তার কথা আপনার মনে পড়ে কি? সে সড়ক বা পথে আপনি খেলাধুলা করতেন, যেখানে আপনি অনেক সময় কাটিয়েছেন? সেই পথ বা গলির দেয়ালে নিশ্চয়ই আপনার অনেক স্মৃতি রয়েছে! সেখানে যদি আবার ফিরে যান, তাহলে অতীতের দিনগুলো মনে ভেসে উঠবে কি?

 

চীনা সংস্কৃতিতে জন্মভূমির গুরুত্ব অনেক। চীনের একটি প্রবাদে বলা হয়েছে, 'লো ইয়ে কুয়েই কেন্'! অর্থ, পাতা ঝড়ে গাছের শিকড়ে ফিরে যায়! আপনি বহু দূর চলে যেতে পারেন, তবে বয়স হলে, আবার ফিরে আসবেন জন্মভূমিতে! এভাবেই সম্পূর্ণ হয় একটি জীবন।

 

(তুহিনা/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040