নেপালি পর্যটনের জন্য চীনা ভাষা বিশেষ দক্ষ মানব সম্পদ লালন করে চীন
  2018-01-30 11:33:18  cri

'হিমালয় কন্যা' নেপালের সমৃদ্ধ পর্যটন সম্পদ আছে। সেখানে চীনা পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নেপালি পর্যটনের জন্য চীনা ভাষা জানা দক্ষ লোক অনেক প্রয়োজনীয়।

২৩ জানুয়ারি 'দ্বিতীয় নেপালি পর্যটনে চীনা প্রতিভা প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাবর্তন অনুষ্ঠান' রাজধানী কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৪ জন ছাত্রছাত্রী স্নাতক হয়েছে।

জানা গেছে, দ্বিতীয় নেপাল পর্যটন চীনা প্রতিভা প্রশিক্ষণ কোর্স ২০১৭ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়। গত ছয় মাসের শিখন প্রক্রিয়ায় ছাত্রছাত্রীরা চীনা ভাষা ক্লাস, চীনা খাবারের স্বাদ উপভোগ, চীনা-অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলিতে পরিদর্শনসহ বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি শিখেছে। নেপাল-চীন সংস্কৃতি ও শিক্ষা সমিতির চেয়ারম্যান ডঃ হরিশচন্দ্র শাহ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে বলেন,

"প্রাচীনকাল থেকে নেপাল ও চীন উভয়ের সুপ্রতিবেশী দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেপালের অবকাঠামো ব্যবস্থা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য বিপুল পরিমাণের সহায়তা ও কার্যকর সাহায্য দিয়েছে চীন।" দ্বিতীয় নেপাল পর্যটন চীনা প্রতিভা প্রশিক্ষণ কোর্সে নেপালে চীনা দূতাবাস আর্থিক সমর্থন দিয়েছে। তাছাড়া, নেপালের সংস্কৃতি, পর্যটন ও বেসরকারি বিমান চলাচল বিভাগ এবং নেপালি জাতীয় পর্যটন ব্যুরোও সমন্বয় কাজে যোগ দেয়।

জানা গেছে, এবারের প্রশিক্ষণ কোর্সের ৪০ জন ছাত্রছাত্রী নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের কর্মকর্তা। ছয় মাসের ক্লাসের পর তাঁরা চীনা ভাষায় যোগাযোগ করার দক্ষতা অর্জন করেন, কোন কোন চীনা গানও গাইতে পারেন।

নেপালের রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব ভূপেন্দ্র পাদেল কোর্স সম্পন্নকারী ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে জ্যেষ্ঠতম, তাঁর দৈনন্দিন কাজ অনেক বেশী। কিন্তু প্রশিক্ষণ কোর্সের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এত বেশী মন দিয়ে ক্লাসে অংশ নেন যে তিনি কোন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকেননি।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,

"আমি রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ে কাজ করি, আমার নাম ভূপেন্দ্র পাদেল। চীন সরকার ও নেপালে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়ু হংকে অনেক ধন্যবাদ। আর আমাদের চীনা শিক্ষিকা সু ইয়া রু। আমার প্রত্যাশা আপনাদের সামনে আছে উজ্জ্বল এক ভবিষ্যত।"

২০১৫ সালে নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর সে দেশের পর্যটনের গুরুতর ক্ষতি হয়। নেপালকে সহায়তা দিয়ে পর্যটন শিল্প পুনরুদ্ধার, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চীন সরকার বিপুল পরিমাণে কার্যকর সাহায্য দিয়েছে। এর মধ্যে একটি ব্যবস্থা হলো নেপালের জন্য পর্যটন শিল্পের চীনা ভাষা মেধাবী মানব সম্পদ লালন করা। নেপাল-চীন সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা সমিতির চেয়ারম্যান ডঃ হরিশচন্দ্র শাহ পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন,

"দু'বছর আগে সাবেক নেপালি প্রধানমন্ত্রী খাদ্গা প্রসাদ ওলি চীন সফর করেন। সে সফরে নেপাল ও চীনের মধ্যে ধারাবাহিক বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে, নেপালি পর্যটন পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ৫ বছরের মধ্যে পর্যটন শিল্পের জন্য ২০০ জন চীনা ভাষা মেধাবী ব্যক্তি লালন করার সিদ্ধান্ত নেয় চীন সরকার। আজ ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী স্নাতক হয়েছে। চীন সরকার ও নেপালে চীনের দূতাবাসকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই।"

নেপালের সংস্কৃতি, পর্যটন ও বিমান চলাচল বিভাগের মহেশ্বর নূপেন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বলেন, পর্যটন শিল্পে চীনা ভাষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। চীনা ভাষা বুঝতে পারলে পর্যটন সেবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরো ভালভাবে চীনা পর্যটকদের সঙ্গে বিনিময় করতে পারবেন। যাতে আরো বেশী চীনা পর্যটক নেপালে এসে আনন্দময় ভ্রমণ করতে পারেন। তা নেপালের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পুনরুদ্ধারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, চীনা ভাষা শিখলে উভয়ের সমঝোতা উন্নয়নের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

নেপালে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়ু হং তাঁর ভাষণে বলেন, চীন অব্যাহতভাবে নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন গভীর করবে। নেপালের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন বাস্তবায়নে চীনের আন্তরিক প্রত্যাশা রয়েছে। তিনি আরো বলেন,

"বিশ্বে চীনা ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। চীনা ভাষা বিদেশী বন্ধুদের জন্য কঠিন কিনা? আমি জানি না। কিন্তু বর্তমানে চীনা ভাষা শেখা একটি প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। ভাষা শুধু আন্তঃব্যক্তি যোগাযোগের একটি মাধ্যমই নয়, তা সভ্যতার বাহকও। ভাষা শেখার প্রক্রিয়ায় চীনা সংস্কৃতিও জানতে পারি। যাতে দু'দেশের জনগণের মৈত্রী আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। নেপালে আরো ভাল সেবা উপভোগ করতে পারেন চীনা পর্যটকরা, তা একই সঙ্গে নেপালের পর্যটন শিল্পও এগিয়ে নিয়ে যাবে।"

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে নেপালি ছাত্রছাত্রীরা দু'দেশের পতাকা হাতে ধরে একই সাথে চীনা ভাষায় বলেন,

"চমত্কার, আমার দেশ!"

বন্ধুরা, বিশ্বের সাংস্কৃতিক পর্ব এখানেই শেষ। এখন শুনুন আমার সহকর্মী মহসীনের উপস্থাপনায় দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক পর্ব।

বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। চাইচিয়ান।

(জিনিয়া/মহসীন/সুবর্ণা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040