বাংলাদেশের শিল্প প্রেমীদের জন্য সুখবর। রাজধানী ঢাকার উত্তরার গ্যালারি কায়ায় শুরু হয়েছে মকবুল ফিদা হোসেনের আঁকা ছবির সপ্তাহ ব্যাপী প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর শিরোনাম 'এম এফ হুসেন: জার্নি ইন গ্রাফিকস'। গত বুধ বার শুরু হওয়া প্রদর্শনী শেষ হবে আগামীকাল ৩১ জানুয়ারি।
এর আগে বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
প্রদর্শনীতে রাখা হয় ফিদা হুসেনের ৫৯টি ছাপচিত্র। লিথোগ্রাফ, সেরিগ্রাফ ও সিল্কস্ক্রিন মাধ্যমে ছবিগুলো করা। হুসেনের জীবনের বিভিন্ন পর্বের ছবি আছে এই প্রদর্শনীতে।
'বানারসি' সিরিজের ছবিগুলোতে হুসেন এঁকেছেন ভারতের কাশির পরিচিত কিছু দৃশ্য। পরিচিত ঘাট, মন্দির, গঙ্গায় সূর্যস্নান, শবদাহের দৃশ্য।
একসময় হুসেন এঁকেছেন কেরালার অনেক ছবি। রাজা রবি বর্মা থেকে শুরু করে সেখানকার বর্ষার দৃশ্য, সাধারণ মানুষের ছবি এঁকেছেন হুসেন। তিনি ১০০ ভাগ সাক্ষরতার রাজ্য কেরালার ছবি এঁকেছেন, আবার এঁকেছেন কেরালা বিদ্রোহের ছবি।
নিউইয়র্ক সিরিজের কিছু ছবিও আছে এই প্রদর্শনীতে। আছে মহাভারত সিরিজের ছবি। মৎস্যরাজ-কন্যা রাজমাতা সত্যবতীকে দেখা যায়। দেখা যায় কুরুক্ষেত্রের সূর্যাস্তের শরশয্যায় পিতামহ ভীষ্মের পরাজিত মুখ। রামায়ণের হনুমান লঙ্কা জ্বালিয়ে ফিরছেন।
আছে বিখ্যাত ঘোড়া সিরিজের ছবিগুলোও। ছেলেবেলা থেকে দুলদুল ঘোড়া ও কারবালা কাহিনি শুনেছেন। পরে পাবলো পিকাসোর ছবি দেখে হয়েছেন অনুপ্রাণিত। হুসেনের আঁকা তেজদীপ্ত ঘোড়াগুলোয় আছে পিকাসোর ছাপ বা ভারতীয় কিউবিজমের নতুন রূপ।
আরও আছে বিখ্যাত মাদার সিরিজের ছবি। ছেলেবেলায় মা-হারানো ছেলে হুসেন তাঁর মাতৃমূর্তির কোনো চেহারা গড়েননি। স্নেহশীলা মাকে তিনি পরিয়েছেন নীল পাড়ের সাদা শাড়ি। শাড়ির ভাঁজে বারবার শিশু এঁকেছেন তিনি, স্মৃতিতে চলে আসেন মাদার তেরেসা, শান্তি ও সেবার প্রতীকরূপে।
মুম্বাইয়ের চলচ্চিত্রশিল্পের সঙ্গে যোগাযোগ তাঁর ছবিতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর চিত্রভাষায় একই সঙ্গে পাওয়া যায় ভারতীয় লোকচিত্রকলার স্বরূপ ও পশ্চিমের আধুনিকতার ছাপ।
রাজপুত করনি সেনার বিক্ষোভ, হিংসা, হুমকি সত্ত্বেও ভারতে ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছে সঞ্জয় লীলা বনসালির বড় বাজেটের ছবি 'পদ্মাবত'। তবে মুক্তির পরই ভারতের বেশ কয়েকটি হিট সিনেমাকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছে ।
বিশ্বজুড়ে প্রথমদিনের আয়ের নিরিখে 'বাহুবলী টু' বা 'দঙ্গল' থেকেও এগিয়ে রয়েছে 'পদ্মাবত'।
বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক যারাই এখনও পর্যন্ত 'পদ্মাবত' দেখেছেন তাঁরা সকলেই বলেছেন এ ছবি প্রকৃতই রাজপুতদের বীরত্বগাথা। করনি সেনার আপত্তির কোনো কারণই নেই ।
'পদ্মাবত' দেখে বলিউডের বিশিষ্ট গীতিকার, কবি, লেখক জাভেদ আখতার বলেছেন, 'এই প্রতিবাদ ও ক্ষোভের কোনো মানে নেই । বরং এই ছবিতে যেভাবে ভারতের ঐতিহ্য ও সংস্কারের কথা তুলে ধরা হয়েছে, তাতে ছবিটিকে স্বচ্ছন্দে অস্কারে পাঠিয়ে দেওয়া যায়। এতে ভারতের গর্ব বাড়বে।'
কিছুদিন আগেই এক টুইটে ছবির অভিনেতা রণবীর সিং বলেছিলেন 'ছবিটির জন্য দেশ গর্ব করবে'।
অধিকাংশ দর্শকই ভীষণ উচ্ছ্বসিত 'পদ্মাবত'-এ আলাউদ্দিন খিলজি চরিত্রে তার অভিনয় নিয়ে।
ভারতীয় এক পত্রিকার সাথে সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানিয়েছেন কীভাবে চরিত্রটির জন্য নিজেকে তৈরি করেছিলেন ।
রণবীর বলেছেন,তিনি গোরেগাঁও-এর বাড়িতে টানা ২১দিন গৃহবন্দি ছিলেন। এসময় সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে পুরো সময় ধরে ওয়ার্কশপ করেছেন। ধীরে ধীরে নিজেকে খিলজির মতো করে তৈরি করেছেন।
তিনি জানান, প্রথমে কিছুতেই খিলজির মতো এত লোভী, উচ্চাকাঙ্খী একটি চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারছিলেন না।
এটিকে এক ভয়ানক অভিজ্ঞাতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি। খিলজি যেভাবে পৃথিবীটাকে দেখেছিল সেভাবে তিনি ভাবতেই পারেন না।
ধীরে ধীরে এই চরিত্রের মধ্যে তিনি প্রবেশ করেছেন। তারপর শরীরচর্চা, কন্ঠস্বর হাঁটাচলা সবকিছু তৈরি করছেন।
যখন শেষঅব্দি শ্যুটিং শুরু হল, তখন সেটে সবকিছু বনসালির উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। যেভাবে তিনি চরিত্রটাকে তৈরি করতে চেয়েছেন রনবীর সেভাবেই কাজ করেছেন।
তাঁর নিজস্ব কিছু অত্যন্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, সেসব নিজের বিবেকের কাছেই গোপন রাখতে চান। কিন্তু এই আলাউদ্দিনের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে সেসব অভিজ্ঞতা স্মৃতি খুঁড়ে বের করে এনেছেন তিনি।
সঞ্জয় লীলা বনসালির স্বপ্নের এই ছবিটি তিনদিনে ৮৩ কোটি রুপির ওপর আয় করেছে । চারদিনেই হয়তো ঢুকে পড়বে ১০০ কোটির ক্লাবে।
বাংলাদেশে একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক শওকত আলী গত বৃহস্পতিবার পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। ফুসফুসের সংক্রমণ, কিডনি জটিলতা ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে গত ৪ জানুয়ারি একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শওকত আলী। প্রথমে আইসিইউতে রাখা হলেও পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়েছিল। ১৬ই জানুয়ারি তাকে স্থানান্তর করা হয় বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। শোকবার্তায় তিনি বলেছেন, শওকত আলীর মৃত্যু বাংলা সাহিত্যের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। এদিকে কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে। কবি-সাহিত্যিক, বন্ধু ও স্বজনরা ছুটে যান হাসপাতালে। শহীদ মিনারে সর্বজনের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জুরাইন কবরস্থানে শওকত আলীর দাফন সম্পন্ন হয়।
১৯৩৬ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলার থানা শহর রায়গঞ্জে জন্ম নেন শওকত আলী। প্রথম জীবনে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বুনেছিলেন তিনি। কিন্তু কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ না থাকায় পরে তিনি মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। কলেজ জীবনেই কমিউনিস্ট আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সক্রিয় ছিলেন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাকে জেলে আটকে রাখে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। স্বাধীনতার পর সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও স্থায়ী হন শিক্ষকতা পেশায়। ১৯৫৯-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও কলেজ, পরে সরকারি সংগীত মহাবিদ্যালয় ও সর্বশেষ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শেষে তিনি অবসরে যান। তিনি তিন ছেলেসহ আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
লেখালেখি জীবনে তিনি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশত। শওকত আলী তার 'ওয়ারিশ' উপন্যাসে বৃটিশ শাসনামল, দেশভাগ আর হিন্দু-মুুসলিম দাঙ্গার মর্মন্তুদ ছবি এঁকেছেন। 'প্রদোষে প্রাকৃতজন' উপন্যাসে তিনি তুলে এনেছেন নিম্নবর্ণের মানুষের বঞ্চনার কথা। পাশাপাশি ফুটিয়ে তুলেছেন শোষকের করাল গ্রাসের বিপরীতে অচ্ছ্যুৎ সমপ্রদায়ের বিপ্লব-বিদ্রোহের চিত্র।
তাঁর উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- 'দক্ষিণায়নের দিন', 'কুলায় কালস্রোত', 'পূর্বরাত্রি পূর্বদিন', 'পিঙ্গল আকাশ', যাত্রা, 'অপেক্ষা', 'সম্বল', 'ভালোবাসা কারে কয়', 'যেতে চাই', 'ওয়ারিশ', 'বাসর ও মধু চন্দ্রিমা', 'দ্রিপদী', 'হিসাব নিকাশ', 'দলিল', 'গন্তব্যে অতঃপর', 'উত্তরের খেপ', 'অবশেষে প্রপাত', 'জননী ও জাতিকা', 'জোড় বিজোড়'। 'উন্মুল বাসনা', 'লেলিহান সাধ', 'শুন হে লখিন্দর', 'বাবা আপনে যান'সহ বেশ কয়েকটি গল্পগ্রন্থ রয়েছে তার। তাঁর শিশুসাহিত্যের বই- 'টুনকো নামে হাতি', 'নীল পাহাড়ের গান', 'ভিতর গড়ের তিন মূর্তি', 'তিনবন্ধু' ও 'প্রাচীন রাজবাড়ী'।
'দক্ষিণায়নের দিন', 'কুলায় কালস্রোত' এবং 'পূর্বরাত্রি পূর্বদিন' উপন্যাসত্রয়ীর জন্য 'ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার' পান তিনি। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য একুশে পদকে ভূষিত হন ১৯৯০ সালে। এছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার, অজিত গুহ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।