ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন প্রতিরক্ষা কৌশল ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
  2018-01-27 17:50:12  cri
জানুয়ারি ২৭: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস গত সপ্তাহে দেশটির প্রতিরক্ষা কৌশল ঘোষণা করেন। যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রতিরক্ষানীতি। কয়েক দশক ধরে চলমান নীতি ও কৌশল থেকে এটি একেবারেই ভিন্ন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তায় যে ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছিলেন এবং যেসব চ্যালেঞ্জ প্রধান বলে বিবেচনা করেছিলেন, সেই তুলনায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন প্রতিরক্ষানীতি সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন।

এ নিয়েই শুনবেন আজকের সংবাদ পর্যালোচনা।

গত বছরের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিরক্ষানীতির যে কাঠামো ঘোষণা করেছিলেন, নতুন প্রতিরক্ষানীতি তারই বাস্তবায়ন। প্রতিরক্ষানীতির দুটি ভাষ্য তৈরি করা হয়-এর একটি হচ্ছে সারাংশ, যা সাধারণের জন্য প্রকাশ করা হয়, অন্যটি সংগত কারণেই গোপনীয় বলে বিবেচিত হয়। শুক্রবার ম্যাটিস ১১ পৃষ্ঠার সারাংশটি প্রকাশ করেছেন।

নতুন প্রতিরক্ষানীতিতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে এখন তার প্রধান চ্যালেঞ্জ মনে করে না। দেশটি বিশ্বের দুই পরাশক্তি চীন ও রাশিয়াকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে।

জেমস ম্যাটিস বলেন, ''দিন দিন এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, চীন ও রাশিয়া এমন একটি কর্তৃত্বপূর্ণ মডেলে পুরো বিশ্বের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে, যেখানে জাতিগুলোর অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সিদ্ধান্তে তারা হস্তক্ষেপ করতে পারে৷''

নতুন কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতিতে একটি মৌলিক পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে৷ ২০০১ সালের নাইন ইলেভেনের পর মধ্যাপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েন ও যুদ্ধ করাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এতদিনের প্রতিরক্ষা কৌশলে৷ কিন্তু সে জায়গা থেকে কিছুটা সরে আসার কথা বলা হচ্ছে এখন৷

কৌশলপত্রটি প্রকাশের সময় দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস বলেন, ''চীন একদিকে তার লুটেরা অর্থনীতি দিয়ে প্রতিবেশীদের গ্রাস করে ফেলতে চাইছে, অন্যদিকে দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক প্রভাব বাড়াচ্ছে৷''

রাশিয়া সম্পর্কে বলেন, ''রাশিয়া তার নিকটতম রাষ্ট্রগুলোর সীমানা লঙ্ঘন করেছে৷''

ম্যাটিস ঘোষণা দেন, ''আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে যে যুদ্ধ চালাচ্ছি, তা চালিয়ে যাবো, কিন্তু এখন থেকে আমাদের মূল লক্ষ্য সন্ত্রাসবাদ নয়, বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেয়া৷'' গেল ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও অনেকটা একই সুরে কথা বলেছিলেন৷

৬৮ পৃষ্ঠার ওই নিরাপত্তা নীতিতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অনুচ্ছেদে রয়েছে পাক-ভারত সঙ্কটসহ বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার কথা। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যে, দেশটি যে পারমাণবিক সম্পদের দায়িত্বশীল রক্ষক সে বিষয়টির প্রমাণ দিতে। এতে আরো বলা হয়েছে, পাকিস্তানের মাটিতে সক্রিয় মিলিশিয়া গ্রুপ ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত হুমকি মোকাবেলা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে, চীন এই নীতিকে 'স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। আর রাশিয়া বলেছে, এই দলিল নিছকই একটি 'সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র'। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান।

অবশ্য, এই কৌশলকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত ও আফগানিস্তান।

ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপির এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের প্রথম জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলকে 'স্নায়ুযুদ্ধ যুগের মানসিকতা' ও 'সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে চীন ও রাশিয়া। ট্রাম্পের নিরাপত্তা কৌশল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার পরই গত মঙ্গলবার বেইজিং ও মস্কো তাদের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া ছুন ইং বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানাই চীনের কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলো বিকৃত না করতে ও স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার পুরনো মানসিকতা ত্যাগ করতে।

অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছেন, এই নথিটির সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র স্পষ্ট, এতে সম্মিলিত বিশ্বের ধারণা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

যাই হোক, নতুন মার্কিন প্রতিরক্ষানীতি এ বিশ্বকে মুহূর্তের মধ্যে বদলে দেবে না। তবে তা আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর যোগ্যতা ও ক্ষমতায় তাল মেলাতে পারবে কিনা, তা কেবলমাত্র সময়ই বলে দেবে।

মোহাম্মদ তৌহিদ, চীন আন্তর্জাতিক বেতার, বেইজিং।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040