চীনের মনুষ্যবাহী মহাকাশযানের এ সফলতাকে অনেক গর্বের সাথে ফুল ও করতালির মাধ্যমে বরণ করে নেওয়া হয়। তবে এসব সম্মানের মুখোমুখি হয়ে নভোচারীরা নিজেদের দায়িত্ব ভুলে যান নি। নতুন কর্তব্য ও চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরা আবার নতুন যাত্রা শুরু করেন। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় এ প্রসঙ্গে শুনুন একটি প্রতিবেদন।
২০১৩ সালের ১৫ অক্টোবর সকাল ৯ টায় চীনের মহাকাশচারী ইয়াং লি উয়েই শেনচৌ ৫ নম্বর মহাকাশযানে করে চিউছুয়ান উত্ক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে মহাকাশে প্রবেশ করেন। এর মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের পর চীন তৃতীয় দেশ হিসেবে স্বাধীন ও সফলভাবে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর দেশে পরিণত হয়।
১৪ বছর আগে মহাকাশে প্রবেশের সেই মুহূর্তের কথা স্মৃতিচারণ করে ইয়াং লি উয়েই বলেন,
'এখন থেকে ১৪ বছরেরও বেশি সময় আগে আমি মহাকাশে প্রথম উড্ডয়ন করি। সেই সময় যখন আমি মহাকাশে প্রবেশ করি এবং রকেট থেকে মহাকাশযান বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর যখন ওজনহীনতা অনুভব করি, তখন আমি সত্যিই দেশ ও জাতির জন্য গৌরব বোধ করি।'
২০১৬ সালে মহাকাশচারী চিং হাই পোং এবং শেন তোং আরেকবার চিউছুয়ান উত্ক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে মহাকাশে যাত্রা শুরু করেন। তাঁরা বলেন, চীনের মহাকাশচারী হিসেবে তাঁরা সত্যিই গর্ব বোধ করেন।
আসলে মহাকাশচারীদের গৌরব মহাকাশের সঙ্গে সম্পৃক্ত গবেষকদের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিশ্রমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
২০০৩ সালে শেনচৌ ৫ নম্বর মহাকাশযান প্রথমবার উড্ডয়নের সময় রকেটে অপ্রত্যাশিতভাবে কম্পন শুরু হয়। সেই দায়িত্ব শেষে মহাকাশ গবেষকরা অতি দ্রুত রকেট ব্যবস্থার বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। বার বার তদন্তের পর তাঁরা সমস্যা আবিষ্কার করেন। বর্তমানে চীনের রকেট প্রযুক্তির ক্ষমতা স্থিতিশীলতা বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে দিন দিন বেড়ে চলেছে। চীনা রকেটের নির্ভরশীলতা ০.৯৮ ছাড়িয়ে গেছে এবং এই মানদণ্ডের মধ্য দিয়ে এখন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মনুষ্যবাহী রকেটের মধ্যে চীনা রকেট অন্যতম।
বিগত ১৩ বছরে চীনের মোট ১১ জন মহাকাশচারী মহাকাশে প্রবেশ করেন। তাঁরা মহাকাশে মোট ৬৮ দিন অবস্থান করেন এবং শতাধিক মহাকাশবিষয়ক পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।
মনুষ্যবাহী মহাকাশযানে কাজ করা হলো বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক পেশার মধ্যে অন্যতম, এটি সবচেয়ে কঠিন পেশাও বটে। এখন পর্যন্ত চীনের ৫৪০ জনেরও বেশি পুরুষ ও নারী মহাকাশচারীর মধ্যে ২৭ জন বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের সময় ও প্রশিক্ষণের সময় প্রাণ হারিয়েছেন। দীর্ঘস্থায়ী কঠোর প্রশিক্ষণে চীনা মহাকাশচারীরা অব্যাহতভাবে মানবজাতির শারীরবৃত্তীয় সীমাকে চ্যালেঞ্জ করে আসছেন। তাঁরা অতিরিক্ত ওজনের স্থিতি অবস্থা প্রশিক্ষণ, ভারসাম্যতা প্রশিক্ষণ এবং ওজনহীন ফ্লাইট প্রশিক্ষণসহ আরো অনেক ধারাবাহিক কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বার বার সফলতা অর্জন করে আসছেন।
তিন বার মহাকাশে প্রবেশ করা মহাকাশচারী চিং হাই পোং বলেন, প্রতিবার সফলতা অর্জনের পর আরো নতুন ও বড় চ্যালেঞ্জ সামনে এসে দাঁড়ায়।
২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি চীনা গণমুক্তি ফৌজের মহাকাশযান ব্রিগেডের ২০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয়। ভবিষ্যতে চীনা মহাকাশযান, মহাকাশচারী ও মহাকাশের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রযুক্তিবিদরা অব্যাহতভাবে মহাকাশে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফলতা অর্জন করবে বলে বিশ্বাস সকলের। (লিলি/টুটুল)