দুই বছরের মধ্যে দেশে ফিরবে রোহিঙ্গারা; চুক্তি স্বাক্ষর ও জাতিসংঘের উদ্বেগ
  2018-01-22 09:00:32  cri

জানুয়ারি ১৯: সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ।

এই 'ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট'অনুযায়ী, প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সম্মত হওয়ার সময় থেকে দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এক হিসেবে প্রতি সপ্তাহে দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার।

মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিদোতে গত সোমবার থেকে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দীর্ঘ বৈঠকের পর চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়। এরপর মঙ্গলবার দুই পক্ষ তাতে সই করে।

জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দীর্ঘ বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। আর মিয়ানমারের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, 'আন্তরিক পরিবেশে'দুই পক্ষের ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য 'ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট'এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। ওই খসড়া তৈরি করা হয় দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সম্মতিপত্র এবং যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের দলিলের (টার্মস অব রেফারেন্স) ভিত্তিতে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাইয়ের জন্য একটি ফরমও চূড়ান্ত করা হয়েছে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে। ঠিক হয়েছে, পরিচয় যাচাই ও প্রত্যাবাসনের কাজটি হবে প্রতিটি পরিবারকে একটি ইউনিট ধরে। অনাথ ও 'অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়' জন্ম নেওয়া শিশুদের প্রত্যাবাসনের বিষয়েও বলা হয়েছে চুক্তিতে।

ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য সীমান্তে পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্প খুলবে বাংলাদেশ। সেখান থেকে তাদের নিয়ে প্রাথমিকভাবে রাখা হবে মিয়ানমারের দুটি ক্যাম্পে। পরে সাময়িকভাবে তাদের থাকার ব্যবস্থা হবে হ্লা পো কুংয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে। পাশাপাশি ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ভিটামাটিতে দ্রুততার সঙ্গে বাড়িঘর পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা নেবে মিয়ানমার।

এদিকে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাকে পাশ কাটিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসিচব৷

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদরদপ্তরে আন্তোনিও গুতেরেস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ''আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে ইউএনএইচসিআরকে এই চুক্তির সময় সাথে রাখাটা জরুরি ছিল৷'' গুতেরেস মহাসচিব হওয়ার আগে ১০ বছর জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার হাই কমিশনার ছিলেন৷

গুতেরেস বলেন, ''এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে রোহিঙ্গারা যেন নিজেদের বাড়িতে নিরাপদে ফিরে যেতে পারে, তাদের যেন জোর করে পাঠানো না হয় এবং মিয়ানমারে ফিরে যেন শরণার্থী শিবিরে থাকতে না হয়৷'' সংবাদ সম্মেলনটি মূলত ছিল ২০১৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে, সে ব্যাপারে৷ সেখানে সাংবাদিকদের গুতেরেস বলেন, ''বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে নিয়ে গিয়ে মিয়ানমারের শরণার্থী শিবিরে যদি রোহিঙ্গাদের রাখা হয়, সেটা হবে খুব খারাপ ব্যাপার৷''

গত বছরের ডিসেম্বরে রাখাইনে সহিংসতার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাস হয় জাতিসংঘে, পাশাপাশি মিয়ানমারে বিশেষ দূত নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়৷ খুব শিগগিরই সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে জানান জাতিসংঘ মহাসচিব৷

উল্লেখ্য, গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।

সেনাবাহিনীর ওই অভিযান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে শরণার্থীদের ফেরত নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরার পথ তৈরি করতে গত ২৩ নভেম্বর নেইপিদোতে দুই দেশের মধ্যে একটি সম্মতিপত্র স্বাক্ষরিত হয়।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে,তাদের দিয়েই প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিয়ানমার সরকার মঙ্গলবারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের বাসিন্দাদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ করার ব্যবস্থা তারা নেবে।

রোহিঙ্গাদের যাচাই এবং প্রত্যাবাসন কাজের সুবিধার জন্য দুটি টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয়েও দুই পক্ষ একমত হয়েছে।

(তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040