0120jingji
|
হংকং বা হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল চীনের দুইটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের একটি। অপর অঞ্চলটি হচ্ছে ম্যাকাও। ২৬০টিরও বেশি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে গঠিত হংকং, পার্ল নদীর বদ্বীপের পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর উত্তরে চীনের কুয়াংতুং প্রদেশ এবং পূর্ব, পশ্চিম, ও দক্ষিণে দক্ষিণ চীন সাগর। হংকংয়ের আয়তন ১১০৪ বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা প্রায় ৭৩ লাখ। লোকসংখ্যার ৯২ শতাংশই চীনা।
হংকং ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল ১৮৪১ সালের ২৫ জানুয়ারি। এটি জাপানি আগ্রাসনের শিকার হয় ১৯৪১ সালের ২৫ ডিসেম্বর। এ আগ্রাসন স্থায়ী হয় ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত। ১৯৯৭ সালের পয়লা জুলাই চীন হংকংয়ের ওপর তার সার্বভৌমত্ব ফিরে পায়। সেই থেকে হংকং মূল ভূখণ্ড দ্বারা শাসিত হতে থাকে 'এক দেশ, দুই সামাজিক ব্যবস্থা' নীতির আওতায়।
হংকংয়ের অর্থনীতি শক্তিশালী। চীনের মূল ভূখণ্ডের অধীনে ফিরে আসার পর হংকংয়ের ভিত্তি আরও শক্তিশালী হয়েছে; অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। পাশাপাশি হংকংকে মোকাবিলা করতে হয়েছে ও হচ্ছে, নানান অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার। গেল ২০১৭ সালেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
২০১৭ ছিল হংকংয়ের জন্য উত্তেজনাপূর্ণ বছর। এ-বছর বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের অপতৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এ গ্রুপের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেয় হংকংয়ের স্থানীয় সরকার ও জনগণ।
হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধে লড়াই গতি পেয়েছিল সাবেক প্রধান নির্বাহী লিউং ছুন-ঈংয়ের মেয়াদকালে। ওই লড়াইয়ের পেছনে গণসমর্থন ছিল। পরের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম ছেং-এর সময়েও সেই সমর্থন অব্যাহত থাকে। অবশ্য, লামের সময়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে হংকংয়ের স্থানীয় সরকার, কেন্দ্রের কাছ থেকে ব্যাপক সাহায্য-সহযোগিতা পায়। ফলে চীনের এই বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলটির উন্নয়ন-ধারা অব্যাহত থাকে।
২০১৭ সালেও হংকংয়ে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এতে অবশ্য সার্বিক জাতীয় অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়নের ভূমিকা বেশি। শুধু হংকং নয়, চীনের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের সরকারের অনুমান অনুযায়ী, ২০১৭ সালে অঞ্চলটিতে আগের বছরের চেয়ে খানিকটা বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।যদি তাই হয়, তবে এক্ষেত্রে অনেক বিশেষজ্ঞের নেতিবাচক ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণিত হবে।
'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ সাফল্যের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই ঐতিহাসিক উদ্যোগের সঙ্গে সংযুক্ত হতে হংকং স্থানীয় সরকার চীনা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ইতোমধ্যেই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর ফলে, ২০১৮ সালে হংকংয়ের বাণিজ্যিক সুযোগ বাড়বে এবং অনেক বিদেশি বিনিয়োগ আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, 'কুয়াংতুং-হংকং-ম্যাকাও বৃহত্তর উপসাগরীয় এলাকা' উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন থেকেও হংকং উপকৃত হবে। এ কর্মসূচি 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ থেকে সুবিধা পাবে এবং বিনিময়ে এ উদ্যোগকে আরও কার্যকর হতে সাহায্য করবে। 'কুয়াংতুং-হংকং-ম্যাকাও বৃহত্তর উপসাগরীয় এলাকা'-র অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, ২০১৮ সালে 'হংকং-চুহাই-ম্যাকাও সেতু' সকলের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিন পক্ষই বিশ্বরেকর্ডধারী এই অবকাঠামো থেকে অনেক উপকৃত হবে।
এ ছাড়া, হংকংয়ের এক্সপ্রেস রেল লিঙ্ক (এক্সআরএল) চীনের মূল ভূখণ্ডের দ্রুতগতির রেল নেটওযার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে। এর জন্য চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুমোদন পাওয়া গেছে। এখন হংকংয়ের স্থানীয় পার্লামেন্টে এ-সংক্রান্ত অনুমোদন পাওয়া গেলেই সকল বাঁধা দূর হবে। এতে কোনো সন্দেহ নাই যে, এক্সআরএল হংকংয়ের উন্নয়নকে মূল ভূখণ্ডের সার্বিক উন্নয়ন-কৌশলের সঙ্গে সমন্বিত করতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
(চায়না ডেইলি অবলম্বনে আলিমুল হক)