রাশিয়ার সুপরিচিত গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পুতিনের সঙ্গে সংলাপ
  2018-01-14 18:18:42  cri
জানুয়ারি ১৪: গতকাল (শনিবার) ১৩ জানুয়ারি ছিল রাশিয়ার সংবাদপত্র দিবস। এ উপলক্ষে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোয় 'কোমসোমোলস্কাইয়া প্রাভদা পত্রিকার সদর দফতর পরিদর্শন করেন। এই সময় তিনি রাশিয়ার গণমাধ্যমের বিভিন্ন সুপরিচিত দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের প্রশ্নের জবাব দেন। আজকের সংবাদ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে আমি এ বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলবো।

রুশ গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এদিন পুতিন অভ্যন্তরীণ ব্যাপার ও কূটনীতির অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সম্প্রতি রুশ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন বিরোধীদলীয় নেতা আলেক্সেই নাভালনিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে নিবন্ধণ করতে অস্বীকার করেছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পাশ্চাত্য দেশগুলোয় সোরগোল সৃষ্টি করে। এ সম্পর্কে পুতিন বিদ্রুপ করে বলেন যে, নিজ দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ কেউ পছন্দ করে না, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেন ।

তিনি বলেন, আসলে শুধু নির্বাচনে অংশ নেয়ার নিষেধাজ্ঞার কারণে নয়, যে কোন কারণে যুক্তরাষ্ট্র একই ব্যক্তি নাভালনি নিয়ে আলোচনা করে। এতে প্রতিফলিত হচ্ছে যে, কে অন্য দেশের সরকারের নেতৃত্ব দিবে বা কে রুশ সরকারের নেতৃত্ব দিবে সে ব্যাপারে মার্কিন সরকারের নিজের পক্ষপাত আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ২০১৮ সালে উন্নতি হবে কি না? এ সম্পর্কে পুতিন বলেন, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক প্রশমন করার প্রস্তুতি নিয়েছে। সেজন্য দু' দেশের সম্পর্কের উন্নতি এখন প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সাহসি ও সঠিক চিন্তাভাবনা গ্রহণ করা। দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য অনুকূল। দুর্ভাগ্যবশত মার্কিন জাতীয় কংগ্রেস অব্যাহতভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এর মাধ্যমে দু'দেশের সম্পর্ক আরো অবনতি হবে।

আমরা জানি, 'রুশ সমস্যা' ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের 'হাতের কার্ডে' পরিণত হয়েছে। 'যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ করা' নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দল বর্তমান প্রেসিডেন্টকে হুমিক দেয়। আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পক্ষ অভ্যন্তরীণ মতভেদ দূর করতে পারবে এবং দু'দেশের সম্পর্কের স্বাভাবিকায়নের জন্য অনুকূল শর্ত সৃষ্টি করবে।

সম্প্রতি সিরিয়ায় রাশিয়ার দুই সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার কথা স্বীকার হয়। জনশ্রুতি আছে, এসব ড্রোন তুরস্ক নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ইদলিব শহর থেকে উড্ডয়ন করে। এ ব্যাপারে পুতিন বলেন, রাশিয়া বিশ্বাস করে, তুরস্ক এর সঙ্গে জড়িত নয়। তিনি আরো বলেন, এসব ড্রোনে কিছু উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্র পাওয়া গেছে। এর জিপিএস ফাংশন আছে। নির্ধারিত ম্যাপ অনুযায়ী কর্তব্য সম্পন্ন করার পর উত্ক্ষেপন স্থানে ফিরে যেতে পারে। রাশিয়া মনে করে, এমন হামলা সচেতনভাবে করা হয়েছে। পুতিন বলেন:

এটা উসকানির শামিল। এর মাধ্যমে এক দিকে এর আগে স্বাক্ষরিত চুক্তি নষ্ট করতে চায়। অন্য দিকে তুরস্ক এবং ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার অংশীদারিত্বের সম্পর্কের ক্ষতি করতে চায়।

সংলাপ চলাকালে পুতিন রাশিয়া ও ইউক্রেন সম্পর্কের উন্নয়ন এবং ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে মতামত প্রকাশ করেন। তিনি স্বীকার করেন, বর্তমানে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সম্পর্ক 'পুরোপুরি অস্বাভাবিক অবস্থায়' আছে্ তবে তিনি বিশ্বাস করেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দোনবাস সমস্যা সমাধানের পর দু'দেশের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার হবে। তিনি একই সঙ্গে উল্লেখ করেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের সম্পর্কে অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও গত বছর দু'দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। তা খুব ভালো এক ইঙ্গিত। এ থেকে বুঝা যায়, দু'দেশের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের ভিত্তি আছে। পুতিন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, রাশিয়া অব্যাহতভাবে ইউক্রেনের কাছে ক্রিমিয়ায় ইউক্রেনের অবশিষ্ট অস্ত্র হস্তান্তর করতে ইচ্ছুক।

(মুক্তা/শুয়েই/মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040