উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষ, বেশ কয়েকটি বিষয়ে মতৈক্য
  2018-01-10 14:32:56  cri


গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুই কোরিয়ার সীমান্ত এলাকার 'যুদ্ধবিরতি গ্রাম' পানমুনজমে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে আলোচনা শুরু হয় ।

আগামী মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাংয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শীতকালীন অলিম্পিকে উত্তর কোরিয়ার অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নিয়েই প্রধানত এবারকার আলোচনা। বৈঠকে দুই কোরিয়ার সম্পর্ক নিয়েও প্রতিনিধিদল দুটির মধ্যে আলোচনা হয়। আজকের টপিক অনুষ্ঠানে আমরা অনেক দিন পর দুই কোরিয়ার উচ্চ পর্যায়ের এই বৈঠকের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করব।

মঙ্গলবারের আলোচনায় দুই পক্ষেরই পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছে। দক্ষিণের দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির পুনরেকত্রীকরণ মন্ত্রী ছো মিয়ং-গিয়ন। উত্তরের নেতৃত্বে আছেন দেশটির দক্ষিণ কোরিয়া বিষয়ক রাষ্ট্রীয় সংস্থার প্রধান রি সন-গোন।

আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে দুই দল সাংবাদিকদেরও মুখোমুখি হনো।

"পিয়ংচ্যাং অলিম্পিক হতে যাচ্ছে শান্তির অলিম্পিক যেখানে উত্তরের অতিথিরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অন্যদের সঙ্গে মিলিত হতে পারবেন। অনেকদিন বিচ্ছিন্ন থাকার পর আমাদের মধ্যে কথা হচ্ছে; যদিও আমার বিশ্বাস প্রথম পদক্ষেপই অর্ধেক পথ এগিয়ে নেবে। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া শান্তি ও পুনর্মিলনের পথে এগিয়ে যাক, জনগণেরও এটাই চাওয়া।"

উচ্চ পর্যায়ের এ আলোচনা নিয়ে আশবাদের কথা শুনিয়েছে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিরাও।

পিয়ংইয়ংয়ের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার পর থেকেই দক্ষিণ কোরিয়া এবারের অলিম্পিককে 'শান্তির অলিম্পিক' হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা হচ্ছে। কিম জং উন এর ভাষণের পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন বলেছিলেন, দুই কোরিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নে এ অলিম্পিক 'চমৎকার সুযোগ' হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে থাকা পিয়ংইয়ংয়ের জন্যও এ আলোচনা গুরুত্পূর্ণ; দুই কোরিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ওঠার পথও খুলে দিতে পারে এবারের আলোচনা, আশা পর্যবেক্ষকদের।

উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া দেশ দুটির মধ্যকার সামরিক হটলাইন পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়েছে।

বেসামরিক আন্তঃসীমান্ত টেলিফোন লাইন পুনরায় চালু হওয়ার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে দেশ দুটি সামরিক হটলাইন পুনঃস্থাপনে সম্মত হল।

দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনাকালে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় শীতকালীন অলিম্পিকে দুই কোরিয়ার মধ্যে পারিবারিক পুনর্মিলনের প্রস্তাব দিয়েছে।

১৯৫০-৫৩ সালে দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধের সময় অনেক পরিবারের সদস্য পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর এটা দু'দেশের মধ্যে সংঘাতের অন্যতম প্রধান আবেগজড়িত ইস্যু।

দক্ষিণ কোরিয়ার উপ একত্রীকরণমন্ত্রী চাং হায়ে সাং সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া নতুন চাঁন্দ্রবর্ষে পারিবারিক পুনর্মিলন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে। সময়টি পিয়েওঙ্গচাং গেমসের মাঝামাঝিতে পড়ে।

এদিকে, পানমুনজুম গ্রামে হাউজ অব পিসে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক কোরীয় উপদ্বীপের উত্তেজনাসংকুল পরিস্থিতি প্রশমনের জন্য ভালো এক সূচনা সৃষ্টি করবে বলে বেইজিং আশা করে।

মঙ্গলবার বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এক নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু খাং এ কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, দুই কোরিয়ার মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজনে আমরা খুব খুশি হয়েছি। আমরা বহুবার বলেছি, কোরীয় উপদ্বীপের ঘনিষ্ঠ সুপ্রতিবেশি হিসেবে দুই কোরিয়ার সম্পর্ক প্রশমন করতে দু'দেশের ইতিবাচক আচরণকে স্বাগত জানাই আমরা। এতে আন্তর্জাতিক সমাজ বেশি করে উত্সাহ পাবে এবং পুরোপুরি সমর্থন দেবে বলে চীন আশা করে।

ইতিহাস

পানমুনজোম কোরিয় উপদ্বীপের মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি গ্রাম। ১৯৫৩ সালের ২৭ জুলাই উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধবিরতি চুক্তি এখানে স্বাক্ষরিত হয়। এই কারণে পানমুনজোম সবার কাছে পরিচিত। কোরিয়ার যুদ্ধবিরতির পর কোরিয়ার উত্তর ও দক্ষিণ পক্ষ গ্রামটিকে একটি যৌথ নিরাপত্তা অঞ্চল হিসেবে নির্ধারণ করেছে।

কোরীয় যুদ্ধ কোরিয়া প্রজাতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া মধ্যকার ১৯৫০-এর দশকের প্রথম দিকে শুরু হওয়া তিন বছরের অধিক সময় ব্যাপী সংঘটিত হওয়া একটি আঞ্চলিক সামরিক যুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে সংঘটিত হওয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধ নিয়ে বিজয়ী মিত্রশক্তির মধ্যকার একটি চুক্তিকে কেন্দ্র করে কোরীয়দের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন এই যুদ্ধের প্রাথমিক কারণ বলে ধরা হয়।

এই যুদ্ধ শুরু হয় স্থানীয় সময় ২৫ জুন ১৯৫০ ভোর সাড়ে চারটায় এবং যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শেষ হয় ২৭ জুলাই ১৯৫৩-এ। অনুমান করা হয় ২৫ লাখের উপরে বেসামরিক মানুষ এই যুদ্ধের ফলে হতাহত হয়েছে। বর্তমানে এখনও মার্কিনিরা দক্ষিণ কোরীয়দের বিভিন্নভাবে সামরিক সহয়তা করে আসছে। অনেকের বিশ্লেষণে এই যুদ্ধ স্নায়ুযুদ্ধের অংশ হিসেবে গণ্য।(শুয়েই/মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040