২০১৭ সালে বেইজিংয়ের বায়ু দূষণ প্রতিরোধের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়িত হয়েছে
  2018-01-09 15:13:07  cri

 



মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট ক্ষতিকর পদার্থ ও তা নির্গমনের ফলে স্বাভাবিক পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাবই পরিবেশ দূষণ। জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ দূষণ। এটা নানা দিক দিয়ে মানবজাতির স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ওপর একটি গভীর ও বিস্তৃত হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীতে প্রতি ছয়টি মৃত্যুর মধ্যে একটির জন্য দায়ী পরিবেশ দূষণ।

সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকগণের সমন্বিত একটি গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিখ্যাত চিকিত্সা সাময়িকী ল্যানসেট এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে বিশ্বে এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ায় যত লোক মারা গেছে তার তিন গুণেরও বেশি লোক মারা গেছে পরিবেশ দূষণের কারণে। পরিবেশ দূষণের জন্য ওই বছর ৯০ লাখ লোকের মৃত্যু ঘটে, যার ৯২ শতাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর অধিবাসী। প্রতিবেদনে দূষণ বলতে মাটি, পানি, বায়ু ও কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ দূষণকে বুঝানো হয়েছে। শুধু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশই নয়, উন্নত দেশগুলোতেও পরিবেশ দূষণের কারণে দুরারোগ্য ব্যাধি ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে- এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দূষণের মধ্যে বায়ু দূষণ সবচেয়ে প্রাণঘাতী। বায়ু দূষণ বলতে বোঝায় যখন বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থের কণা এবং ক্ষুদ্র অনু ক্ষতিকর অনুপাতে বায়ুতে মিশে যায় । এটা তখন বিভিন্ন রোগ , অ্যালার্জি এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে । এছাড়াও এটা অন্যান্য জীব যেমন ; পশুপাখি , ফসল ইত্যাদির ক্ষতি করে । দুষিত বায়ু সুস্থ পরিবেশের জন্য বাধা । এ কারণে ২০১৫ সালে ৪২ লাখ মানুষ অকালে প্রাণ হারান। ১৯৯০ সালের তুলনায় এ সংখ্যা ২০ ভাগ বেশি। বায়ু দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতে। বায়ু দূষণ বলতে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস, বাতাসের কণাসহ গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত কয়লা, পোড়া কাঠ এবং চারকোল থেকে নির্গত দূষণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবেশ দূষণে ব্রুনাইয়ে সবচেয়ে কম মানুষ মারা যায়। দেশটিতে মোট মৃত্যুর মাত্র ২.৫ শতাংশের কারণ হলো পরিবেশ দূষণ। ল্যানসেটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারত, পাকিস্তান, চীন, বাংলাদেশ, মাদাগাস্কার ও কেনিয়ার মতো দ্রুত শিল্পায়নের দেশগুলোতে দূষণমাত্রা সবচেয়ে বেশি। তবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো দূষণ নিয়ন্ত্রণে দিন দিন সোচ্চার হচ্ছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। চীনে পানি দূষণ রোধ এবং পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।

দূষণ এবং এর কারণে সৃষ্ট রোগের প্রাদুর্ভাব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্বের দরিদ্র আর ক্ষমতাহীন দেশগুলোতে দেখা দেয়। আর এতে আক্রান্ত ভুক্তভোগীরা অধিকাংশই অনিরাপদ এবং এ নিয়ে তাদের কোথা বলার তেমন উপায় নেই। মৌলিক মানবাধিকার, যেমন বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাস্থ্য, সুস্থতা, নিরাপদ কাজসহ শিশুর সুরক্ষার জন্য দূষণ বড় হুমকি। দূষণের কারণে প্রতি বছর বৈশ্বিক সম্পদের ৪ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর ক্ষতি জাতীয় আয়ের ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। আর উচ্চ আয়ের দেশগুলোকে খোয়াতে হচ্ছে জাতীয় আয়ের সাড়ে ৪ শতাংশ। মোট ১৮৮টি দেশের ওপর দীর্ঘ দুই বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ল্যানসেট।

পরিবেশ দূষণের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। বায়ুদূষণ বিশ্বব্যাপী একটি সঙ্কটে পরিণত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ধূমপান, সড়ক দুর্ঘটনা এবং ডায়াবেটিস- এই তিনটি রোগে প্রতি বছর যত মানুষ মারা যায়, বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় তারচেয়ে বেশি মানুষ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিংয়ের বায়ুর গুণগতমানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ২০১৭ সালে বেইজিংয়ের বাতাসে অন্যতম দূষক পিএম ২.৫'র গড় ঘনত্ব ছিল প্রতি ঘন মিটারে ৫৮ মাইক্রো গ্রাম, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ কম।

বেইজিং পরিবেশ সুরক্ষা তত্ত্বাবধান কেন্দ্রের উপ মহাপরিচালক লিউ পাও সিয়ান জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে বেইজিং শহরের পিএম ২.৫সহ চারটি প্রধান দূষণ উপাদান আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। এর মধ্যে পিএম ২.৫'র গড় ঘনত্ব প্রতি ঘন মিটারে ৫৮ মাইক্রোগ্রাম। দেশের 'বায়ু দূষণ প্রতিরোধ কার্যক্রমের' নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়িত হয়েছে।

তিনি বলেন,

২০১৭ সালে বেইজিংয়ের পিএম ২.৫'র গড় ঘনত্ব ছিল প্রতি ঘন মিটারে ৫৮ মাইক্রোগ্রাম, যা আগের বছরের তুলনায় ২০.৫ শতাংশ কম। অন্য তিনটি প্রধান দূষণ উপাদান হল : কার্বন ডাই-অক্সাইড, পিএম ১০, নাইট্রোজেন অক্সাইড; বেইজিংয়ের বাতাসে যাদের পরিমাণ ছিল গত বছরের তুলনায় যথাক্রমে ২০ শতাংশ, ৮.৭ শতাংশ ও ৪.২ শতাংশ কম।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বেইজিংয়ে বায়ু প্রমিত মানদন্ডে পৌঁছানো দিনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বেড়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ সালে বায়ুর প্রমিত মানদন্ডে পৌঁছানো দিনের সংখ্যা ১৭৬টি, যা বছরের মোট দিনের ৪৮.২ শতাংশ। ২০১৭ সালে পুরো বছরে ২২৬ দিন বায়ু প্রমিত মানদন্ডে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে, যা বছরের মোট দিনের ৬২.১ শতাংশ।

বেইজিং পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরোর বায়ু পরিবেশ পরিচালনা বিভাগের প্রধান লি সিয়াং বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিংয়ের জ্বালানী কাঠামো, শিল্পের কাঠামো, যোগাযোগ কাঠামো সুসংহত করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বায়ু দূষণ প্রতিরোধ কাজ করা হয়েছে। গত বছর পরিচ্ছন্ন জ্বালানীর সংস্কার, গ্রামে কয়লা ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া, বেইজিং কর্তৃপক্ষ কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ, পরিবেশ বান্ধব প্রতিষ্ঠান বা কর্মকাণ্ডকে অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্রদান এবং পরিবেশ সুরক্ষার মানদন্ড প্রণয়ন করাসহ বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে বায়ু দূষণ প্রতিরোধ পরিচালনার মান সার্বিকভাবে উন্নতি করেছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে বেইজিং শহর কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে পিএম ২.৫ দূষণমুক্তকরণে প্রচেষ্টা চালাবে। আইন, অর্থনীতি, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে দূষণকারী পদার্থের নির্গমন কমানোর কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে।যার মাধ্যমে ২০২০ সালে বেইজিং শহরের পিএম ২.৫ এর গড় ঘনত্ব প্রতি ঘন মিটারে ৫৬ মাইক্রোগ্রামে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040