"ভারতকে মূল্যায়ন করা যাবে না, শুধু ভারতে অভিজ্ঞ হওয়া যাবে।" ২০০১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নায়পাল এ কথা বলেন।
ভারত একটি জাদুকরী দেশ। চীনা দম্পতি লেলে ও পোপো'র চোখে ভারত হলো তাদের দ্বিতীয় জন্মস্থান। দশ বছর আগে, লেলে ও পোপো আলাদা আলাদাভাবে ভারতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা মিলিত হন। একে অপরকে জানেন এবং ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে লেলে দিল্লীর নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে বৌদ্ধ শিল্প বিষয়ে ডক্টরেট কোর্স করছেন। আর পোপো ভারতে কাজ করছেন।
ভারতের আবহাওয়া গ্রীষ্ম মণ্ডলীয়। সারা বছর খুবই গরম। সেজন্য এয়ার-কন্ডিশনার খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু ভারতের বাজারে এয়ার-কন্ডিশনার বেশ দামী। এখানে বাণিজ্যিক সুযোগ দেখেছে পোপো। তিনি বলেন,
"ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সে দেশের স্থানীয় উত্পাদন শিল্প উন্নয়ন হবে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করে ভারতে কারখানা নির্মিত হবে। চীনা দ্রব্য সস্তা কিন্তু ভাল গুণগতমান আছে যা তাদের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।"
ভারতীয় ক্রেতা ও পোপো
পোপো ভারতে এয়ার-কন্ডিশনার ব্যবসা শুরু করেছে। প্রতিটি ভারতীয় ক্রেতা পোপো'র জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় ক্রেতার সঙ্গে আরো ভালভাবে বিনিময় করে চীনা দ্রব্য ও চীনকে আরো ভালভাবে তুলে ধরেন তিনি। প্রতি সপ্তাহে লেলে ও পোপো প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে হিন্দি ভাষা শিখেন।
পোপো বলেন,
"সংক্ষিপ্ত কথোপোকথন চালিয়ে নিতে পারি, কিন্তু পড়তে বা লিখতে পারি না।"
৩ মাসের লেখাপড়ার পর লেলে ও পোপো ছোট ছোট গল্প বলতে পারেন। তাদের হিন্দি শিক্ষক প্রভাত বলেন,
"দীর্ঘদিন ভারতে থাকতে চায়, সেজন্য হিন্দি ভাষা শেখা তাদের ইচ্ছা। চীন ও ভারতের বাণিজ্য দিন দিন বাড়ছে। তাছাড়া, হিন্দি বুঝলে বন্ধুদের তাঁরা আরও বেশী জানতে পারবে।"
এয়ার-কন্ডিশনার ব্যবসা ছাড়া পোপোও চীনা ক্রেতার কাছে ভারতের রঙিন জেমকন প্রচার করে। বিশ্বের রত্ন বাজারে ভারতের রত্ন গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। কিন্তু ভারতীয় রত্নের গুণগতমান ভিন্ন পর্যায়ের। সেজন্য পোপো ভারতের আন্তর্জাতিক জ্যামিতিক কলেজের গহনা মূল্যায়ন কোর্সে লেখাপড়া শুরু করেছেন। পোপো বলেন,
"লেখাপড়া শেষে আমি একটি রঙের জুয়েলারী মূল্যায়নের সনদ লাভ করেছি। আমি বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে এ সনদ আমার কাজে অনেক সহায়তা করবে।"
অন্যদিকে লেলে তাঁর ডক্টরেট-এর জন্য কঠিন অধ্যয়ন করছেন। পাশাপাশি, প্রতি সপ্তাহে ভারতের একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কলেজে স্বেচ্ছা-সেবা দেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের তিনি চীনা ভাষা শেখান। কলেজের হুইসিয়েন মাস্টার তাঁর কাজে অনেক মুগ্ধ।
বৌদ্ধ ধর্মের উত্পত্তি ভারতে। দু'হাজার বছর আগে চীনে প্রবেশ করে বৌদ্ধ ধর্ম। দু'হাজার বছরের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, হুইসিয়েন মাস্টারের চোখে লেলে চীন-ভারত সংস্কৃতির দূত। তিনি বলেন,
"তাঁরা এখানে স্বেচ্ছা-সেবা দেয়, আমি অনেক মুগ্ধ। আমি লেলেকে ১০ বছর ধরে জানি। আমার মনে হয় চীন-ভারত সেতু হলো লেলেসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক।"
২০১৮ সাল লেলে ও পোপো'র ভারতে থাকার দশ বছর। তাঁরা আশা করেন নিজের জন্মস্থান ও দ্বিতীয় জন্মস্থানের অভিন্ন উন্নয়ন দেখতে পাবেন। আর এ উন্নয়নে তাদের অবদান রাখতে চায় তাঁরা। লেলে বলে,
"আমি এ কথা বলতে পারি, আমার সারা যৌবন আমি ভারতে কাটিয়েছি। আমার এত বেশী অভিজ্ঞতা আছে তা আমি অবশ্যই চীনে ফিরে গিয়ে সবাইকে বলব।"
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, "দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে রাষ্ট্র দুটির জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ অনুভূতি। আর, এ ধরনের অনুভূতির ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক বোঝাপড়া।" দু'দেশের মৈত্রী দু'দেশের জনগণের চেষ্টার অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ।
লেলে বলে,
"সারা জীবনে আমি একটি হিন্দি গান শিখেছি। এ গান আমার যৌবনের গল্প। পরের জীবনে যখন আমি আবার এ গানটি গাইব, ভারতে আমার সুন্দর স্মৃতি রত্নের মত উজ্জ্বল হবে।"
বন্ধুরা, আশা করি লেলে'র হিন্দি গান আপনাদের ভাল লাগবে।
বন্ধুরা, "চীনা দম্পতির ভারতীয় ভালবাসা গল্প" শিরোনামে প্রবন্ধটি এখানে শেষ। এখন শুনুন আমার সহকর্মী মহসীনের উপস্থাপনায় দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক পর্ব।
প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com
চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান।
(জিনিয়া/মহসীন)