নতুন মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তরও বন্টন করা হয়েছে। মঙ্গলবার শপথের পর বুধবারই তাদের মধ্যে দপ্তর বন্টন করেন রাষ্ট্রপতি। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন শাহজাহান কামাল। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হওয়া মোস্তাফা জব্বার। আর শূণ্য থাকা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হলেন একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান কাজী কেরামত আলী। সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রদবদলের বিস্তারিত জানান মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব বন্টনের পাশাপাশি চার মন্ত্রীর দপ্তর রদবদল করা হয়েছে। সরকারের বর্তমান মেয়াদের শুরু থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে দেয়া হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে শূণ্য থাকা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দেয়া হয়েছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। আর পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে দেয়া হয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা তারান হালিমকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।
এই রদবদলের ফলে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় এখন সদস্য হলেন ৫৪ জন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ৩৩ জন পূর্ণমন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী ও ২ জন উপমন্ত্রী। এ ছাড়া মন্ত্রী পর্যায়ে উপদেষ্টা রয়েছেন ৬ জন, মন্ত্রী মর্যাদায় বিশেষ দূত রয়েছেন ১ জন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে ১২ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।
এদিকে, দপ্তর বন্টনের পরপরই ৪ জানুয়ারি নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব বুঝে নেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে নয়া মন্ত্রী একেএম শাহজাহানকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন রাশেদ খান মেনন। এ সময় তিনি বলেন, বিমানের অব্যবস্থাপনার কারণে সরকারের সব অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তিনি নতুন মন্ত্রীকে অবহিত করেন। নয়া মন্ত্রী শাহজাহান কামাল সাংবাদিকদের জানান, বিমানকে লাভজনক অবস্থায় নিতে তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবেন।
অন্যদিকে বিমান ছেড়ে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব বুঝে নেন রাশেদ খান মেনন। নির্বাচনের আগে এ রদবদলকে স্বাভাবিক উল্লেখ করে তিনি আশা করেন নতুন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তিনি আরো বেশি করে জনসেবা করতে পারবেন।
একই দিন সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে অফিস করেন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার। তাকে দেয়া দুটি মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নের পরিকল্পনা এ সময় সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন তিনি। এর আগে সকালে আগারগাঁওয়ে তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের আইসিটি টাওয়ার পরিদর্শন করেন নয়া মন্ত্রী। এ সময় সাংবাদিকদের জানান বিটিআরসিকে নিয়ন্ত্রণ নয় সহযোগিতা করবেন তিনি।
চলতি বছরের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মন্ত্রিসভায় রদবদলকে অনেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চমক হিসেবে দেখছেন। সরকারের তরফে বলা হয়েছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতি আনতে এ রদবদল। এ রদবদলকে রুটিনওয়ার্ক হিসেবেই দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহাবুবুল আলম হানিফ বলেন, যেহেতু নির্বাচনের বছর তাই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতি আনতেই প্রধানমন্ত্রী এ রদবদল করেছেন। এটা একান্তই তার এখতিয়ার। এছাড়া এবারই আওয়ামী লীগ সরকারে প্রথমবারের মতো মন্ত্রী পেল লক্ষ্মীপুর ও রাজবাড়ি জেলা। তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের মন্ত্রী বানিয়ে সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাদের কাজের মূল্যায়ন করছেন বলেও মনে করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।