জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্যারিসে ওয়ান প্লানেট সামিটে যোগ দিতে তিন দিনের সরকারি সফরে ১১ ডিসেম্বর ফ্রান্স যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইং কিমের আমন্ত্রণে সম্মেলনে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
১২ ডিসেম্বর প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক জানান, বৈঠকে দু'নেতার মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও বৈশ্বিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়। রোহিঙ্গা ইস্যু ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রগতির বিষয়ও উঠে আসে তাদের আলোচনায়।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি চান সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত থাকুক। তা না হলে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা বাস্তবায়ন করা যাবে না। আর মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিষয়টি তুলে ধরার কথা জানিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ভূমিকা রাখবেন বলে জানান।
একই দিন বিকালে এলিসি প্যালেসে ওয়ান প্লানেটে সামিটে নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে বিশ্বনেতৃবৃন্দের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব দেন। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নেরও তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথাও জানান শেখ হাসিনা।
সফরের তৃতীয় দিন ১৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরাসি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। এ সময় বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পাশাপাশি শহুরে অবকাঠামো ও সমুদ্র অর্থনীতিতে বিনিয়োগের জন্য ফরাসি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোর প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জোরালো আহ্বানকে সময়োপোগী মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে, ক্লাইমেট চেঞ্চ নেগোশিয়েটর টিমের সমন্বয়ক ড. কাজী খলিকুজ্জামান মনে করেন, জলবায়ুর ক্ষতি মোকাবেলায় দায়ী উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তিনি বলেন, এজন্য ১০ হাজার কোটি ডলারের ফান্ড গঠনের কথা বলা হলেও তহবিলে এখন পর্যন্ত জমা পড়েছে মাত্র ৬০০ কোটি ডলার। তাই নিজস্ব তহবিল থেকে জলবায়ুর ক্ষতি মোকাবেলায় উদ্যোগ নিতে সরকারকে পরামর্শ দেন ড. খলীকুজ্জামান।
এদিকে, ওআইসির জরুরি সম্মেলনে যোগ দিতে ১১ ডিসেম্বর ইস্তাম্বুল যান রাষ্ট্রপতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় ওআইসির সভাপতি তুরুস্ক জরুরি এ সম্মেলন ডাকে। সম্মেলনে ওআইসির রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা যোগ দেন।
১৩ ডিসেম্বর 'আল কুদসের প্রতি সংহতি' শীর্ষক এ সম্মেলনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। তিনি বলেন, জেরুসালেম প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত পুরো মুসলিম বিশ্বের অনুভূতিতে একটি বড় আঘাত এবং তা ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। মুসলিম বিশ্বে এ ক্ষোভের আগুন নতুন করে উগ্রবাদকে উস্কে দিতে পারে বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন রাষ্ট্রপতি। যুক্তরাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত বদলে বাধ্য করতে ওআইসিকে আশু পদক্ষেপ নিতে বলেন আব্দুল হামিদ।
একই সঙ্গে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও পূর্ব জেরুসালেমকে তার রাজধানী করার বিষয়ে বাংলাদেশের সমর্থন পুনর্ব্যাক্ত করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের ন্যয্য অধিকারের প্রশ্নে বাংলাদেশ পূর্ণ সমর্থন নিয়ে সবসময় পাশে থাকবে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এর্দোয়ানের সঙ্গেও বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। বৈঠকে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদার করতে সম্মত হন দুই নেতা।
ইস্তাম্বুলে ওআইসির জরুরি এ সম্মেলনে বাংলাদেশের জোরালো অবস্থান ওআইসিতে প্রশংসিত হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট মহল।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।